আতঙ্কে গলা চিরে চিৎকার বেরিয়ে এল ওর।
হি-হি হাসি শোনা গেল অন্ধকারে। হাততালি দিয়ে সুর করে বলতে লাগল সিসি, পেয়েছে। পেয়েছে! ভয় পেয়েছে।
চেপে রাখা দমটা ধীরে ধীরে ছাড়ল মূসা। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি জীবনে কমবে কিনা ভেবে অবাক হলো। বিড়বিড় করে বলল, কে বলল ভয়। পেয়েছি? আমি জানতাম, তুমিই!
মোটেও জানতে না। তুমি ভেবেছিলে ভ্যাম্পায়ার।
অন্ধকারে অস্পষ্ট ছায়ার মত লাগছে সিসির চেহারা। হাসিতে ওর দাঁত যে সব বেরিয়ে পড়েছে, না দেখেও অনুমান করতে পারছে মুসা।
মানুষকে এভাবে ভয় দেখানো ঠিক না, গলার কাঁপুনি এখনও বন্ধ হয়নি। মুসার।
কেন?
কারণ ব্যাপারটা মজার নয় মোটেও, বলে আবার দরজার দিকে রওনা দিল মুসা।
আমার কিন্তু বেশ মজা লাগে। এমন চমকে যায় সবাই, উ, যা মজা। লাগে না তখন!
জবাব না দিয়ে বেল বাজাল মুসা।
কয়েক সেকেন্ড পর দরজা খুলে দিল টনি।
ইস্, তোমার বোনটা না একটা পাজির পা ঝাড়া! অভিযোগ করল মুসা।
.
০৮.
নীরবে থিয়েটার হাউসের দিকে এগিয়ে চলেছে দুজনে। মুসা আর টনি।
অ্যানির কথা ভাবছে মুসা। দুঃখ হচ্ছে ওর জন্যে। কাল সবার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সে, আজ আর থাকবে না। কত সহজেই না একজন জলজ্যান্ত মানুষ হারিয়ে যায় চিরকালের জন্যে!
রবিনের জন্যেও দুশ্চিন্তা হতে লাগল।
স্যান্ডি হোলোর দক্ষিণ ধারে সামান্য উঁচু একটা ঘাসে ঢাকা জমিতে দাঁড়িয়ে আছে থিয়েটার হাউসটা। আয়তাকার কাঠের বাড়ি। দেয়ালে সাদা রঙ। জানালাগুলো সবুজ।
মুসা আর টনি একসঙ্গে হলে ঢুকল। অনেকেই এসেছে। সবার মধ্যে চাপা উত্তেজনা। মঞ্চের কাছে জড় হয়েছে। অ্যানির কথাই আলোচনা করছে সবাই।
সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল মুসা। ওদের মধ্যে কোনজন ভ্যাম্পায়ার? কণিকাকে খুঁজল তার চোখ। কোথাও দেখতে পেল না ওকে।
ওই যে কিমি, উনি বলল। আমি যাই। পরে কথা বলব তোমার সঙ্গে।
মঞ্চ থেকে নামার সিঁড়ির কাছে কয়েকটা মেয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। কিমি। টনিকে ওর দিকে আসতে দেখে হাসল।
অন্য দিকে ভিড়ের মধ্যে রবিনকে খুঁজল মুসা। দেখতে না পেয়ে থিয়েটার। হাউসের আরেক দিকে রওনা হলো।
স্যান্ডি হোলোরই কেউ খুন করেছে অ্যানিকে, পাশ কাটানোর সময় বাদামী-চুল একটা মেয়ের মন্তব্য কানে এল মুসার। এমন কেউ, যাকে আমরা চিনি।
অ্যাই, মুসা, মুখ তিলে ভরা একটা ছেলে ডেকে বলল, নাটকটা আর হবে কিনা, কিছু শুনেছ?
মাথা নাড়ল মুসা। ছেলেটার মুখের দিকে তাকাল। এমন ফ্যাকাসে চামড়া কেবল ভ্যাম্পায়ারেরই হতে পারে। দিনের বেলা বেরোতে পারে না, রোদে যেতে পারে না, অন্ধকার ঘরে কফিনের মধ্যে শুয়ে থাকতে হয়–তাই এ অবস্থা। একে মনে রাখতে হবে, ভাবল সে।
থিয়েটারের দরজা খুলে গেল। ফিরে তাকাল মুসা। ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঢুকছে রবিন।
চমকে গেল মুসা। রীতিমত করুণ রবিনের অবস্থা। বিধ্বস্ত চেহারা।
ঘুমের ঘোরে হাটছে যেন রবিন। মেঝের দিকে চোখ রেখে পা টেনে টেনে এগোচ্ছে মঞ্চের দিকে।
ভিড় ঠেলে ওর দিকে এগোল মুসা। কিন্তু সে রবিনের কাছে পৌঁছার আগেই ছায়া থেকে বেরিয়ে এল কণিকা। পৌঁছে গেল রবিনের কাছে। হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল ওকে সীটের দিকে। কথা বলতে বলতে হাসছে।
কণিকার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুসা। রবিনের অসুস্থতার জন্যে সে-ই দায়ী কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। রবিনের গলায় দাঁতের দাগ আছে নাকি আগে দেখতে হবে। তারপর অন্য কথা।
পাশ থেকে কে যেন হাত চেপে ধরল, হাই, মুসা।
ডলি। পরনে ডেনিম কাটঅফ আর একটা নীল হলটার টপ। লম্বা চুলগুলোকে পেছনে কষে বেঁধেছে, ঘোড়ার লেজের মত ঝুলছে ঘাড়ের ওপর। হাঁ করে তাকিয়ে রইল মুসা। সুন্দর লাগছে ডলিকে। তবে কোনখানে যেন একটা খুত আছে। চোখে নাকি? মনে হলো। শীতল চাহনি। কেমন লোভাতুর।
খবর শুনেছ? জিজ্ঞেস করল ডলি।
নীরবে মাথা ঝাঁকাল মুসা।
সাংঘাতিক কাণ্ড। কালকের এতবড় ঘটনার পরেও সবাই রিহারস্যালে এল, অবাকই লাগছে আমার। আমি তো ভাবলাম ভয়ে আজ রাতে বাড়ি থেকেই বেরোবে না কেউ।
তুমিও তো বেরিয়েছ।
খিলখিল করে হাসল ডলি, কোন কিছুতে ভয় পাই না আমি।
ওরাও হয়তো পায় না।
মঞ্চে উঠলেন মিসেস রথরক। মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত তুললেন চুপ করার জন্যে। অ্যাটেনশন, প্লীজ! এই, আমার কথা শোনো তোমরা।
কথা বন্ধ করে দিল সকলে।
মিসেস রথরক ঘোষণা করলেন, নাটক চলবে। সেটাকে উৎসর্গ করা হবে অ্যানির নামে। তারপর জানালেন, অ্যানির জায়গায় এখন ডলি অভিনয় করবে।
শুনেই উজ্জল হলো ডলির মুখ। মুসার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, এবার তোমার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পাব আমি।
জবাব দিল না মুসা। হিংসুক মেয়েটার ওপর বিরূপ হয়ে গেল মন। মিসেস রথরকের দিকে নজর ছিল বলে এতক্ষণ খেয়াল ছিল না। এখন ফিরে তাকিয়ে দেখল রবিন আর কণিকা নেই সীটে। অদ্ভুত ব্যাপার! রিহারস্যাল শুরুর আগেই কেটে পড়ল! কণিকা কি ওকে রক্ত খাওয়ার জন্যে ধরে নিয়ে গেল নাকি?
তাহলে শুরু করা যাক, মিসেস রথরক বলছেন। প্রথম পর্ব।
মুসার হাত ধরে টানল ডলি, আমাদের দিয়েই শুরু।
মনে রবিনের জন্যে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ডলির পেছন পেছন মঞ্চের দিকে এগোল মুসা। মঞ্চে উঠল। কোথায় কোন ভঙ্গিতে দাঁড়াতে হবে দেখিয়ে দিলেন মিসেস রথরক। তারপর বললেন, রেডি। স্টার্ট।