হ্যাঁ। খুব টায়ার্ড লাগছে সারাটা দিন ধরে। কেন এ রকম হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আর ঘুম! বিছানা থেকেই উঠতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে সাতদিন ঘুমাইনি।
অসুখটা কি?
সেটাই তো বুঝতে পারছি না। শরীরটা যেন একেবারে ভেঙেচুরে গেছে। আর দুর্বল কাকে বলে। আঙুল নড়াতেও ইচ্ছে করে না।
শঙ্কিত হয়ে উঠল মুসা। খারাপ ভাবনাগুলো মনে আসতে দিল না। অনিশ্চিত ভঙ্গিতে বলল, জুরটর আসবে হয়তো। রিহারস্যালে যাবে?
চেষ্টা করব। কণিকাকে কথা দিয়েছি ওর সঙ্গে কার্নিভল দেখতে যাব।
বন্ধুত্বটা তাহলে ভালমতই হয়ে গেছে, হাসল মুসা।
কি জানি! মেয়েটা যেন কেমন। এখনই ভাল, এখনই কেমন হয়ে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক। খুব অবাক লেগেছে আমার।
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে মুসা বলল, ঠিক আছে, রাখি। থিয়েটারে দেখা হবে।
রিসিভার রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। রবিনের ক্লান্তির কথা শুনে ভাল লাগছে না। ভ্যাম্পায়ারের খপ্পরে পড়ার পর রিকির ক্লান্ত লাগত, জিনারও লাগত। ক্লান্তি, ঘুম, বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে না করা, ফ্যাকাসে চেহারা, ঘোর লাগা ভাবভঙ্গি এ সব ভ্যাম্পায়ারে রক্ত খেয়ে যাওয়ার লক্ষণ। রিকি তো মরেই গেল। জিনা বেঁচেছে কপালগুণে। তবে ওই সময়কার কথা। কিছু মনে করতে পারে না। জিনা কিছু বলতে পারেনি বলেই কিশোর আর রবিনকে ভ্যাম্পায়ারের কথা বিশ্বাস করাতে পারেনি সে। ভূতের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছে কিশোর। অবিশ্বাসীর দৃষ্টিতে তাকিয়েছে রবিন। তবে এইবার ওদের ভুল ভাঙানোর সময় এসেছে। যা মনে হচ্ছে, রবিন নিজেই পড়েছে। ভ্যাম্পায়ারের কবলে।
রবিনকে সাবধান করে লাভ হবে না। ও কথা শুনবে না। সাবধান। থাকতে হবে মুসার নিজেকে। রবিনের ওপর চোখ রাখতে হবে। যাতে রক্ত খেয়ে খেয়ে ওকেও মেরে ফেলতে না পারে ভ্যাম্পায়ার।
ইস, রিকির ব্যাপারটাও যদি আগেভাগে বুঝতে পারত! তাহলে এভাবে অপঘাতে মরতে হত না বেচারাকে। অ্যানি যে এভাবে ভ্যাম্পায়ারের কবলে পড়বে, সেটাও আন্দাজ করতে পারেনি মুসা। ওকেই ভ্যাম্পায়ার ভেবে বসে ছিল।
সামনের টেবিলটায় এক কিল মারল সে। দাতে দাঁত চেপে চিৎকার করে বলল, রবিনকে আমি কোনমতেই মরতে দেব না! রিকিকে নিয়েছ, অ্যানিকে নিয়েছ, আর কাউকে পাবে না। আমার কোন বন্ধুকেই আর নিতে দেব না তোমাদের।
অস্থির ভঙ্গিতে ঘরের মধ্যে পায়চারি শুরু করল সে। রবিনের গলায় দাঁতের দাগ আছে কিনা দেখে শিওর হয়ে নিতে হবে।
কাজটা কার? কণিকার?
মেয়েটার চেহারা কল্পনা করল মুসা। আকর্ষণীয় চেহারা। লম্বা কালো চুল। মায়াময় দুটো চোখ।
কণিকার ওপর নজর রাখতে হবে, ভাবল মুসা। যত সুন্দর চেহারাই হোক, ভ্যাম্পায়ার হলে কোনমতেই বাঁচতে পারবে না আমার হাত থেকে।
টেবিলে পেপারওয়েট চাপা দেয়া কাগজটা একটানে তুলে নিল সে। নাটকের সংলাপ লিখে নিয়েছে ওতে। গটমট করে এগোল দরজার দিকে। ওপাশে গিয়ে দড়াম করে পাল্লা লাগাল। টনিদের বাড়ি হয়ে যাবে ঠিক করল। ওকে পেলে একসঙ্গে যাবে থিয়েটারে।
অন্ধকার রাত। চাঁদ তো বটেই, তারাও সব মেঘে ঢেকে দিয়েছে। কটেজগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ছায়াগুলোকে মনে হচ্ছে যেন ঘাপটি মেরে থাকা ভূত।
শিউরে উঠল মুসা। গা ছমছম করতে লাগল। এটা ভ্যাম্পায়ারের রাত! এমন চমৎকার রাতে রক্ত খেতে বেরোবেই ওরা।
নিরাপদে টনিদের বাড়িতে পৌঁছে হাঁপ ছেড়ে বাচল সে। বাড়িটা নতুন। ইটের দোতলা বাড়ি। যেন ভুল করে গজিয়ে উঠেছে স্যান্ডি হোলোতে। এখানকার সব বাড়ি হয় কাঠের, নয়তো পাথরের। বেশির ভাগই পুরানো। সৈকতের ধারে ওগুলোর পাশে বাড়িটা তাই একেবারে বেমানান।
বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা পার্কও আছে। গাছপালা আছে। দুটো দোলনা আর কয়েকজনে একসঙ্গে বসার ব্যবস্থা আছে।
এত অন্ধকার, কোনদিকে যাচ্ছে সে, ঠাহর করা কঠিন।
খুট করে শব্দ হলো।
দাঁড়িয়ে গেল মুসা। কান পেতে রইল। আর কোন শব্দ নেই। কিন্তু। শুনেছে যে তাতে কোন সন্দেহ নেই। লুকিয়ে আছে নাকি কেউ? মানুষ না
সব কিছুতে সবখানেই এখন ভ্যাম্পায়ার দেখছে সে। কারণ মন জুড়ে আছে রক্তচোষা ভূতের চিন্তা।
নিঃশব্দে বাড়িটার দিকে কয়েক পা এগোল। তারপর দাঁড়িয়ে গেল। অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি। মনে হচ্ছে আড়াল থেকে কেউ নজর রাখছে তার ওপর।
লীলা আর জনের দোসররা কি জেনে গেছে ওর কথা? বুঝেছে ওকে ঠেকাতে না পারলে সবাইকে ধ্বংস করে দেবে সে? তাই আগেভাগেই ওকে খতম করে দিয়ে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে চায়?
শব্দটা আবার কানে আসতে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল মুসা। গাছপালার মধ্যে কোন কিছু থেকে থাকলেও চোখে পড়ল না। শুধুই অন্ধকার।
নাহ, কিছু না। কিছু শুনিনি। সব কল্পনা। মনকে বোঝানোর চেষ্টা করল সে।
বাড়ির আশেপাশে গভীর ছায়া। যেখানে সবচেয়ে বেশি অন্ধকার, সেই জায়গাটুকু পার হয়ে টনিদের সদর দরজার কাছে যেতে হবে।
এগোতেই আবার কানে এল ঘষার শব্দ। টেনে টেনে এগোনো পায়ের শব্দের মত। মাত্র কয়েক ফুট দূরে।
ও কিছু না! ফিসফিস করে বলে নিজেকে অভয় দিতে চাইল সে। আবার পা বাড়াল দরজার দিকে।
আবার শব্দ।
ঘষার!
নখ ঘষছে নাকি! বাদুড়ের ডানাতেও ধারাল, বাঁকা নখ থাকে। ভ্যাম্পায়ার বাদুড়ের রূপ নিতে পারে।
চলমান ছায়াটা চোখে পড়ল হঠাৎই। কিছু করার আগেই ওর গায়ের ওপর এসে পড়ল ওটা।