এবার কি? শুধুই রহস্য নয় আর এখন, অপহরণ কেস, একজনের জীবন মরণ সমস্যা। কাজটা একা করার যতই আগ্রহ থাকুক, ঝুঁকি নেয়াটা আর ঠিক হবে না কোনমতেই। একটাই করণীয় আছে এখন, এবং সেটাই করল সে। রিসিভার তুলে ডায়াল করল।
কিশোর? মুসা। কোথাও যেও না। থাক। জরুরী কথা আছে। আমি আসছি। রিসিভারটা নামিয়ে রাখতে না রাখতেই দরজা খুলে গেল।
মুসার দিকে তাকিয়ে রয়েছে অলিংগারের সেক্রেটারি। চোখে সন্দেহ। কি করছ?
জরুরী একটা ফোন। সরি। পকেট থেকে জাগুয়ারের চাবির গোছাটা বের করে ডেস্কে রাখা একটা বাক্সে ছুঁড়ে দিয়ে দ্রুত দরজার দিকে এগোল মুসা। সেক্রেটারির দিকে তাকাল না আর।
গাড়ি নেই। সিনেমার একজন কর্মীর গাড়িতে লিফট নিয়ে রকি বীচে এল সে। বাড়িতে পৌঁছে নিজের গাড়িটা বের করে নিয়ে চলে এল ইয়ার্ডে। গাড়ি থেকে নেমে ওঅর্কশপের দিকে ছুটল। দরজায় হাত দেয়ার আগেই কিশোরের কণ্ঠ শোনা গেল, মুসা, সবুজ টি-শার্ট, নীল জিনস, আর বাস্কেটবল শু পরেছ।
কি করে জানলে?
ট্রেলারের দরজা খুলে দিয়ে রবিন বলল, ওপরে দেখো।
ছাতে বসান হয়েছে একটা ভিডিও ক্যামেরা। পুরানো টেলিস্কোপ সর্বদর্শনটা যেখানে ছিল সেখানে। এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরছে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশপাশের সব কিছু দেখে চলেছে। ক্যামেরার চোখ। এটা কিশোরের নতুন সিকিউরিটি সিসটেম। এটার নামও সর্বদর্শনই রাখা হয়েছে। পুরানো পদ্ধতি সরে গিয়ে নতুনকে ঠাই করে দিয়েছে জিনিসটা, কিশোরের সামনে ডেস্কে রাখা আছে মনিটর।
খুব ভাল করেছ, হেডকোয়ার্টারে ঢুকে বলল মুসা। শোন, যে জন্যে থাকতে বলেছিলাম। খবর আছে। বেন ডিলন কিডন্যাপ হয়েছে তার মালিবু বীচের বাড়ি থেকে। একটু আগে সাফোকেশন টু ছবির পরিচালক অলিংগারের সঙ্গে মিটিঙে বসেছিলাম। তখনই এল র্যানসম নোট।
সময় নষ্ট না করে ভাল করেছু, কিশোর বলল। খুলে বলো।
রভিন মনিটরটা একপাশে ঠেলে সরিয়ে ডেস্কের ওপরই উঠে বসল মুসা। জিনসে হাত ডলছে, অস্বস্তিতে। ইয়ে…সব কথা তোমাদের ভাল লাগবে না। রেগে যাবে আমার ওপর। আসলে, সময় অনেকই নষ্ট করেছি। কারণ…
আরে দূর! অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল রবিন, অত ভণিতা করছ কেন? বলে ফেলো না।
ডিলন সম্ভবত তিন দিন আগে কিডন্যাপ হয়েছে।
তিন দিন আগে হয়েছে, কিশোর বলল, আর তুমি জেনেছ খানিক আগে?
ঠিক তা নয়। আমি তিন দিন আগেই সন্দেহ করেছি, মুসা বলল। দেখল, কিশোরের ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে আস্তে আস্তে গোল হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম তোমাদেরকে জানাবই না। একা একাই কেসটার সমাধান করে তাক, লাগিয়ে দেব। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে আমার।
ঠোঁট দিয়ে ফুট ফুট শব্দ করল কিশোর। শ্রাগ করে বলল, তাতে আমি মাইণ্ড করিনি। বরং আগেই কিছু তদন্ত সেরে ফেলে ভাল করেছ।
মুখ তুলে তাকাতে পারল না মুসা। লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, মাইণ্ড করবে, এখুনি। আমি ব্রাউন অলিংগারকে বলেছি তিন গোয়েন্দার হেড হলাম আমি। আর তোমরা দুজন আমার সহকারী। তোমাদেরকে ডাকব কিনা জিজ্ঞেস করেছিলাম।
হো হো করে হেসে উঠল রবিন। নতুন কার্ডে গোয়েন্দা প্রধান কে লেখা নেই। বলেই সুযোগটা নিতে পেরেছ।
শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল কিশোর, র্যানসম নোটটা দেখেছ?
কপি করেই নিয়ে এসেছি। পকেট থেকে নোট আর ছবির কপি বের করে দিল মুসা।
ছবিটা দেখে আফসোস করে বলল রবিন, আহারে, বেচারার বড়ই কষ্ট।
ডিলনের কষ্টের কথা বলছ? কিশোর বলল, অযথা দুঃখ পাচ্ছ। ভাল করে দেখ, বুঝতে পারবে। যতটা সম্ভব খারাপ অবস্থা দেখানর ইচ্ছেতেই এরকম ভঙ্গিতে রেখে ভোলা হয়েছে এই ছবি। হাতটা কতটা পেছনে নিয়ে গেছে দেখ। এই অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বেহুশ হয়ে যেতে বাধ্য। ওকাজ কিছুতেই করতে যাবে না কিডন্যাপাররা। যদি সত্যিই ডিলন ওদের কাছে দামি হয়ে থাকে।
আরেকটা ইনটারেসটিং ব্যাপার, নোটটা দেখতে দেখতে রবিন বলল, খবরের কাগজ থেকেই কাটা হয়েছে অক্ষরগুলো, তবে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস কিংবা হেরাল্ড এক্সামিনার থেকে নয়। অন্য কোন কাগজ। অক্ষর দেখলেই আন্দাজ করা যায়।
তোমার ধারণা, মুসা জিজ্ঞেস করল, লস অ্যাঞ্জেলেসের বাইরে কোথাও থেকে পাঠানো হয়েছে নোটটা?
সূত্র তো তাই বলে, জবাব দিল কিশোর।
এক এক করে রবিন আর কিশোরের দিকে তাকাতে লাগল মুসা। স্বীকার করল, আসলেই আমি গোয়েন্দাপ্রধান হওয়ার অনুপযুক্ত। বার বার দেখেছি। এগুলো, অথচ কিছুই বুঝতে পারিনি।
পারতে, কিশোর বলল, তুমিও পারতে, মাথা ঠাণ্ডা করে দেখলে। যাকগে। আর কিছু?
অদ্ভুত আরও কতগুলো ঘটনা ঘটেছে। শুটিং স্পটে যাওয়ার পর থেকে যা যা ঘটেছে সব খুলে বলল মুসা। প্রথম সাফোকেশন ছবির শুটিঙের সময় যেসব গোলমাল হয়েছে শুনেছে, সেসবও বাদ দিল না। সব শেষে বলল পটার বোনহেডের দেয়া স্ফটিকটার কথা। বলল, আমাকে সাবধান করে দিয়েছে সে। তৃতীয় নয়নের মাধ্যমে নাকি দেখতে পেয়েছে আমার বিপদ। বলেছে, স্ফটিকের নির্দেশ আমার শোনা উচিত।
শোনা শুরু করলেই বরং বিপদে পড়বে, কিশোর বলল, মানসিক ভারসাম্য হারাবে।
কথা বলতে বলতে কখন যে রাত হয়ে গেল টেরই পেল না ওরা। আচমকা বলে উঠল মুসা, আমার খুব খিদে পেয়েছে।
ট্রেলার থেকে বেরিয়ে এসে ওর ভেগাতে উঠল তিনজনে। অন্ধকার রাত। এতক্ষণ ভূত-প্রেত, ডাইনী নিয়ে আলোচনা করে এখন সর্বত্রই ওসব দেখতে লাগল। ডাইনী, ভূত, কঙ্কাল….