মুসা ভেবেছিল গাড়িটা দেখলে খুশি হবেন তিনি, কিন্তু তাকালেনই না।
মিস্টার রিডার, ডেকে বলল মুসা, আপনার গাড়ি…
হ্যাঁ, খুব ভাল, একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলেন রিডার। অলিংগারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। চাইলে আসতে পারো।
পিছে পিছে চলল মুসা। আরও কয়েকজন চলল সাথে। রিডারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। দোতলা একটা কাঠের বাড়ির দিকে চলেছে। বাড়িটা কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল অন্যেরা, মুসা আর রিডার এগিয়ে চলল।
ব্রাউন অলিংগারের অফিসে এসে ঢুকল ওরা। অনেক বড় একটা ঘর। দেয়ালে দেয়ালে সিনেমার পোস্টার, স্টিল, আর বিখ্যাত তারকাদের ছবি সাঁটা। মিটিং শুরু হয়ে গেছে।
ওয়ালনাট কাঠে তৈরি বিশাল টেবিলের ওপাশে বসেছেন অলিংগার। আর পাঁচজন লোক রয়েছে ঘরে। ছবির কাহিনীকার, ডিরেকটর অভ ফটোগ্রাফি, স্টাফ কোঅরডিনেটর, কসটিউম ডিজাইনার, মেকআপ আর্টিস্ট।
এসো, এসো, মুসাকে দেখে বললেন অলিংগার, বসো। কেমন আছ? জ্যাক বসো। ক্লান্ত শোনাল তার কণ্ঠ।
রিডারের পাশে একটা চামড়ায় মোড়া চেয়ারে বসল মুসা।
অলিংগার বললেন, ডিলন তো মনে হয় ভালমতই ডুব দিয়েছে। কেন যে একাজ করল! কিন্তু আমরা তো আর বসে থাকতে পারি না। তার যখন ইচ্ছে হয় আসবে। আমরা ইতিমধ্যে দুর্গের কাজগুলো সেরে ফেলতে পারি।
ওখানকার সেট সাজাতেই তিন দিন লেগে যাবে, বলল খাড়া খাড়া কালো চুল এক মহিলা।
হতাশ হয়েই চেয়ারে হেলান দিল মুসা। গাড়ির দৃশ্য গেল! এখন কয়েক হপ্তা আর জাগুয়ারটার দিকে ফিরেও তাকাবেন না রিডার।
তাতে আর কি? জাল কণ্ঠে বললেন রিডার। এমনিতেই দেরি হয়েছে আমাদের। নাহয় লাগল আরও তিন দিন।
সঙ্কেত দিতে আরম্ভ করল অলিংগারের ঘড়ি। মিনিটখানেক পরেই ট্রেতে করে একগাদা চিঠিপত্র নিয়ে ঢুকল তার সেক্রেটারি। একটা খামের ওপরে পার্সোন্যাল লেখা রয়েছে। সেটা তুলে নিয়ে ধীরে সুস্থে খুলতে লাগলেন অলিংগার। পোড়া মাংসের কথায় আসতেই গুঙিয়ে উঠলেন তিনি, সর্বনাশ!
কি হলো? রিডার জিজ্ঞেস করলেন, ভয় লাগছে? অত রক্তপাত সহ্য হবে না?
ওসব না! ডিলন! ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে!
০৪.
ঘরে পিনপতন নীরবতা। হাতের কাগজটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন অলিংগার হাত দিয়ে ডলে সমান করতে লাগলেন অস্বস্তিভরে। ঘরের কারও মুখে কথা নেই।
কি লিখেছে? অবশেষে জিজ্ঞেস করল একজন।
টাকা চায়, জবাব দিলেন অলিংগার। অনেক টাকা। নইলে খুন করল বেচারা ডিলনকে।
কত টাকা? জানতে চাইলেন রিডার।
বলেনি। নিজেরাই দেখ। কাছে বসেছেন লেখক। উঠে নোটটা তার দিকে ঠেলে দিলেন প্রযোজক। হাতে হাতে ঘুরতে লাগল ওটা। সব শেষে এল রিডারের হাতে। তিনি সেটা পড়ে মুসাকে না দেখিয়েই আবার ফিরিয়ে দিলেন অলিংগারকে। ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে দিলেন প্রযোজক।
ডিলন কিডন্যাপ হয়েছে! কথাটা ভীষণ চমকে দিয়েছে মুসাকে। যদিও এরকমই একটা কিছু ঘটেছে ভেবে খুঁতখুঁত করছিল তার মন। কি লিখেছে। নোটটাতে…
খাম থেকে একটা ফটোগ্রাফ টেনে বের করলেন অলিংগার। সর্বনাশ!
সবাই উঠে হুড়াহুড়ি করে ছুটে গেল দেখার জন্যে। মুসা এক পলকের বেশি। দেখতে পারল না, ছবিটা ড্রয়ারে রেখে দিলেন প্রযোজক।
ফোনের দিকে হাত বাড়াল কালো চুল মহিলা, পুলিশকে ফোন করা দরকার।
ওর হাত চেপে ধরলেন অলিংগার। না না! পুলিশকে জানালে খুন করে। ফেলবে ওকে! ওগুলো মানুষ নয়, জানোয়ার। নিশ্চয় রসিকতা করেনি!
রসিকতা যে করেনি তাতে মুসারও সন্দেহ নেই।
মিস্টার অলিংগার, বলল সে, আমরা কি কিছু করতে পারি? এসব কাজ…
না! মানা করে দিলেন প্রযোজক, পুলিশও দরকার নেই, গোয়েন্দাও না!
বুঝতে পারছেন কি বলছেন? রিডার বললেন।
পারছি। এক গাদা টাকা যাবে আরকি আমার!
তা তো যাবেই। আমি বলছি ছবিটার কথা। সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে এখন আমাদের। শ্রমিকদের জানাতে হবে। আমি পারব না! মাথায় বাড়ি মারতে আসবে ওরা! কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকছে এটা জানান প্রযোজকের দায়িত্ব।
ক্লান্ত দৃষ্টি রিডারের ওপর স্থির হয়ে রইল কয়েক সেকেণ্ড, তারপর মাথা। ঝাঁকালেন অলিংগার। ঠিক আছে, দায়িত্ব যখন, জানাব। চলো, সেটে যাই।
ডেস্কটার দিকে তাকাল মুসা, যেটাতে নোট আর ছবি রাখা হয়েছে।
প্রথমে এগোলেন অলিংগার, পেছনে রিডার, এবং তার পেছনে অন্যেরা। মুসা ইচ্ছে করে রয়ে গেল পেছনে। সবাই বেরোলেও সে বেরোল না। দরজা লাগিয়ে কয়েক লাফে চলে এল ডেস্কের কাছে। ড্রয়ার খুলে নোটটা বের করল।
খবরের কাগজের অক্ষর কেটে আঠা দিয়ে লাগিয়ে লিখেছেঃ আমরা বেন ডিলনকে নিয়ে গেছি। ফেরত চাইলে অনেক টাকা খরচ করতে হবে। পুলিশকে জানালে তাকে আর জ্যান্ত দেখার আশা নেই। পরবর্তী নির্দেশ আসছে।
ছবিটা দেখল মুসা। ধাতব একটা ফোল্ডিং চেয়ারে বসিয়ে তোলা হয়েছে। হাত মুচড়ে পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে বাধা হয়েছে। মুখে চওড়া সাদা টেপ লাগান। পা বাঁধা হয়েছে গোড়ালির কাছে। ডিলনের বিখ্যাত নীল চোখজোড়ায় আতংক, যেন সামনে মূর্তিমান মৃত্যু দাঁড়ানো।
দেরি করল না মুসা। নোট আর ছবিটা পকেটে নিয়ে রওনা হলো হলের দিকে, সেখানে ফটোকপি মেশিন আছে, আসার সময় লক্ষ্য করেছিল। কপি করে রাখবে দুটোরই।
নোট এবং ছবিটার কয়েকটা করে কপি করে অলিংগারের অফিসে ফিরে এল আবার। সেক্রেটারির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কৈফিয়ত দিল, একটা জিনিস ফেলে এসেছি। মেয়েটা বিশ্বাস করল, মাথা ঝাঁকিয়ে তাকে যেতে দিল, নিজে সঙ্গে এল না। আগের জায়গায় জিনিসগুলো রেখে দিল মুসা।