মুসাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, কিন্তু এই জিনিস তোমার কাছে কেন?
ইয়ে…একজন…একটা লোক আমাকে দিয়েছে, আমতা আমতা করে বলল মুসা। ছবির লোকেশনে।
নিশ্চয় ফারিহার জন্যে উপহার, রবিন বলল। তার গায়ে একটা বাটন-ডাউন অক্সফোর্ড শার্ট, পরনে চিনোজ আর পায়ে মোকাসিন, মোজা বাদে। এককালের মুখচোরা, রোগাটে রবিন এখন সারা স্কুলে দারুণ জনপ্রিয়। অনেক লম্বা হয়েছে, সুদর্শন, কিশোর প্রায় শেষ, যুবকই বলা চলে।
আরে নাহ, হাত নাড়ল মুসা। ফারিহার জন্যে হতে যাবে কেন?
কিছু বলতে যাচ্ছিল রবিন, হা হা করে উঠল নিকি, আরে সর সর, ওভাবে ঘেঁষে দাঁড়িও না! ক্রোমের চকচকানি নষ্ট করে দেবে তো।
আমার ফোক্সওয়াগেনটাকে ফকিরা লাগছে এটার কাছে, জাগুয়ারটাকে দেখিয়ে রবিন বলল। মুসাকে জিজ্ঞেস করল, কার এটা?
জ্যাক রিডারের। হরর ছবির পরিচালক।
আহ্, এরকম একটা জিনিস যদি পেতাম! পরক্ষণেই ঠোঁট ওল্টাল, থাকগে, সবার তো আর সব হয় না। শোন, আইস ক্রিমারিতে যাচ্ছি আমরা। যাবে?
নাহ, সময় নেই, দুই বন্ধুকে অবাক করে দিয়ে মাথা নাড়ল মুসা। কিশোর, অভিনেতাদের ব্যাপারে তো অনেক কিছু জান তুমি। টাইমলি আসা নিয়ে গোলমাল করে?
করে মানে? হেসে উঠল কিশোর। যত বড় অভিনেতা, তত বেশি ভোগাবে, অপেক্ষা করিয়ে রাখবে, এটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে।
আরেকটা কথা। ধরো, কোন বাড়িতে প্রচুর কাচ ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। অথচ গ্লাস, জানালার কাচ কিংবা ফুলদানী সব ঠিকঠাক রইল। কোত্থেকে আসতে পারে?
একটা ভুরু উঁচু হয়ে গেল কিশোরের। ব্যাপারটা কি বলো তো?
কিছু না। চট করে একবার নিকির চোখে চোখে তাকাল মুসা। মানে, জরুরী কিছু না। পরে বলব।
কিশোর আর রবিন চলে গেলে গাড়িটা নিয়ে পড়ল আবার দুই মেকানিক কয়েক মিনিট পরেই ঝামেলা এসে হাজির। মুসার গার্লফ্রেণ্ড ফারিহা। পরনে নীল জিনস, গায়ে পুরুষের ঢোলা শার্ট। এসেই মুসার হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিতে দিতে অপরিচিত মানুষের ভঙ্গিতে বলল, শুনুন, আমি ফারিহা গিলবার্ট। আপনি নিশ্চয় মুসা আমান?
কি হলো? মুসা অবাক, এরকম করে কথা বলছ কেন?
ভুলেই তো যাওয়ার কথা, তাই না? পুরো দুটো দিন দুটো রাত তোমার কোন খোঁজ নেই। চিনতে পেরেছ তাহলে?
পারব না কেন? কাজ ছিল।
হু। সে তো বুঝতেই পারছি। কিশোর আর রবিনকে যেতে দেখলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলল আইসক্রীম খেতে যাচ্ছে। চলো না, আমরাও যাই?
দেখছ না ব্যস্ত?
তা তো দেখছি। কিন্তু আমার যে একলা যেতে ভাল লাগে না। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে ফারিহা। লম্বা চুল ছড়িয়ে পড়েছে কাঁধে। ওকে এভাবে খুব সুন্দরী লাগে।
কি করব বলো? কাজটা সত্যি জরুরী। নইলে আমিও কি আর আইসক্রীম ছাড়ি?
তা বটে। গাড়িটার ওপর দৃষ্টি ঘুরছে ফারিহার। কার এটা? এত সুন্দর?
সিনেমার লোকের। ছবিতে কাজ করছি তো।
তাই নাকি? গাড়িটার ওপর থেকে দৃষ্টি সরছে না ফারিহার। মুসা, গাড়িটা দাও না, একটা ঘোরান দিয়ে আনি? ইস, জাগুয়ার চালাতে যা মজা!
সরি, অন্যের জিনিস…
তাহলে তুমি চলো?
আমার সময় নেই বললামই তো।
কাল সকালে?
ফারিহা, তুমি বুঝতে পারছ না, আমি ব্যস্ত। তাছাড়া একটা কেসের কিনারা করতে… বলেই থেমে গেল মুসা। লাথি মারতে ইচ্ছে করল নিজেকে, পেটে কথা রাখতে পারে না বলে।
মুখ বাঁকাল ফারিহা। কেস? ছাগল পেয়েছ আমাকে? কেসের কিনারা করছ, অথচ আলাদা হয়ে আছ দুই দোস্তের কাছ থেকে, একথা আমাকে বিশ্বাস করতে বলো? একা পারবে?
কেন পারব না? রেগে গেল মুসা। মাঝে মাঝে সত্যিই রাগিয়ে দাও তুমি…
ফারিহাও রেগে গেল। ওরকম আচরণ করছ কেন আমার সঙ্গে?
কি করলাম? তুমিই তো এসেতক টিটকারি দিয়ে চলেছ!
আরও রেগে গেল ফারিহা। গটমট করে গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠল। দড়াম করে দরজা লাগিয়ে জানালা দিয়ে মুখ বের করে বলল, চললাম! গুড বাই!
জবাব দিল না মুসা।
গাড়ির নাক ঘুরিয়ে নিয়ে ইয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেল ফারিহা।
নিকি বলল, মেয়েটাকে অযথা রাগালে।
আমি কি করলাম? হাত ওল্টাল মুসা, নিজেই আজেবাজে কথা বলল, বাগল। আসল কথা, নিয়ে বেরোলাম না কেন। আমার জায়গায় আপনি হলে কি করতেন?
মাথা চুলকাল নিকি। জবাব দিতে না পেরে হাত নেড়ে বলল, বাদ দাও। এসো, কাজটা সেরে ফেলি।
প্যান্টে হাত ডলে মুছতে গিয়ে পকেটের স্ফটিকটা হাতে লাগল মুসার। ডলনের কথা ভাবল। আবার দম আটকে আসা অনুভূতিটা হলো।
হ্যাঁ, সেরে ফেলা দরকার, মুসা বলল। শুটিং স্পটে যেতে হবে আবার। তদন্তটা বাকি এখনও।
যতটা সহজ হবে ভেবেছিল, তত সহজ হলো না কাজটা। পুরোটা রাত খাটাখাটনি করল ওরা, পরদিন সকাল আটটা নাগাদ শেষ হলো কাজ। সেদিন রোববার। শুটিং হবে না, কর্মচারীদের ছুটি। সারাদিন ধরে ফোনে ফারিহার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করল মুসা, পেল না ওকে। বাড়িতে নেই। আর কোন কাজ না থাকায় বাবাকেই একটা স্পেশাল ইফেক্ট জিনিস তৈরির কাজে সাহায্য করল।
পরদিন সোমবার। স্কুল খোলা। কাজেই স্কুল শেষ করার আগে আর জাগুয়ারটা নিয়ে বেরোতে পারল না।
হলিউডের মুভি স্টুডিওতে সেট সাজিয়েছেন সেদিন জ্যাক রিডার। গেটে মুসাকে আটকাল গার্ড। একবার মাত্র ওয়াশার দিয়ে রক্ত ছড়িয়ে দিতে হলো উইন্ডশীল্ডে, আর বাধা দিল না গার্ড। ছেড়ে দিল ওকে।
সাত নম্বর স্টেজে সেট সাজান হয়েছে। কালো পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন রিডার। হাতে কোন কিছুর খোঁচা খেয়েছেন। টিপে ধরে আছেন জায়গাটা।