আবার সঙ্কেত দিতে লাগল অলিংগারের ঘড়ি। চাবি টিপে বন্ধ করে বললেন, আমাকে যেতে হচ্ছে। পরে কথা বলব।
দ্বিধায় পড়ে গেল মুসা। হাঁটতে হাঁটতে ফিরে এল নিজের গাড়ির কাছে। অলিংগার প্রযোজক, অনেক ছবিরই প্রযোজনা করেছেন, অভিজ্ঞতা আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি চেনেন অভিনেতাদেরকে। হয়ত ঠিকই বলেছেন, সময় হলেই এসে হাজির হবে ডিলন। ওসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে এখন তার গাড়ি আনতে যাওয়া উচিত। ওটাই তার আসল কাজ।
গাড়ি চালিয়ে রাস্তার মাথায় ফোন বুদে চলে এল সে। মেরিচাচীর বোনের ছেলে, নিকি পাঞ্চকে ফোন করার জন্যে। রকি বীচে এসেছে বেশিদিন হয়নি নিকি। একেক জনের কাছে সে একেক রকম। মুসার কাছে মোটর গাড়ির জাদুকর।
রবিনের কাছে এক বিরাট প্রশ্ন। কখন যে বিশ্বাস করা যাবে নিকিকে বলার উপায় নেই।
কিশোরের কাছে। একটা আগাগোড়া চমক। একদিন যেন আকাশ থেকে রকি বীচের মাটিতে খসে পড়েই বোমার মত ফাটল বুউউউম! সৃষ্টি করল এক জটিল রহস্য।
সেই নিকি পাঞ্চ উধাও হয়ে গিয়ে আবার হাজির হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়, অর্ধেক সময় ব্যয় করে পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে, পুরানো গাড়ির পার্টস খোঁজে আর মুসাকে শেখায় কি করে ইঞ্জিন ফাইন-টিউন করতে হয়, বাকি অর্ধেক সময় কোথায় থাকে সে-ই জানে।
একটা গ্যারেজের ওপরের ঘরে থাকে নিকি। সপ্তমবার রিং হওয়ার পর ফোন তুলল। যাক, আজ তাড়াতাড়িই ধরল। সাধারণত বারোবারের মাথায় ছাড়া সে ধরে না। ধরেই জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
আমি, মুসা। একটা জাগুয়ার আনতে যাচ্ছি।
নিকির মুখে কফি, বরবর আওয়াজ হল, গিলে ফেলল তাড়াতাড়ি। জাগুয়ারের তালা খোলা খুব সহজ, কিন্তু চাবি ছাড়া স্টার্ট দেয়া বড় কঠিন।
নিকি ভাই, চুরি নয়, কিনে আনতে যাচ্ছি।
হেসে উঠল নিকি। জাগুয়ার কিনবে? আর লজ্জা দিও না। জান কত…?
বাধা দিয়ে মুসা বলল, জানি। সত্যিই কিনব। আমার জন্যে না। একটা ফিল্ম। কোম্পানি…
ও, তাই বলো। যাব। গাড়ি পছন্দ করতে ভাল লাগে নিকির, খুশি হয়েই রাজি হল।
সকালটা শেষ হওয়ার আগেই এক্সকুসিভ কারসের শোরুমে এসে ঢুকল মুসা আর নিকি। দোকানটার আরেকটা ডাকনাম রয়েছে ওখানে, এক্সপেনসিভ কারস, অর্থাৎ অনেক দামি গাড়ি।
হলিউডে ব্রাউন অলিংগারের নাম শুনলেই অনেক বড় বড় দোকানদার গদগদ। হয়ে যায়। গাড়ির দোকানদারও তাদের মধ্যে একজন। নতুন গাড়ি, পছন্দ করতে সময় লাগল না। ঘন্টাখানেক বাদেই কালচে সবুজ একটা জাগুয়ার এক্স জে সিক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ওরা।
রকি বীচে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরে বেড়াল। নিকি ঘুরল গাড়িটার কোথাও কোন গোলমাল আছে কিনা বোঝার জন্যে, আর মুসা ঘুরল ওখানকার পরিচিত মানুষকে দেখানর জন্য যে সে একটা জাগুয়ার চালাচ্ছে। ঘোরার আরও একটা কারণ, বেন ডিলনের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া। ঘরময় ছড়ান ভাঙা কাচ, স্ফটিক, আর বোনহেডের রহস্যময় হুশিয়ারির ব্যাপারগুলোও ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
এসব কথা তোমার দুই দোস্তকে না বলে আমাকে বলছ কেন? নিকি বলল।
আমি একাই সারতে চাই।
হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে নিকি বলল, বেশ, দেখো চেষ্টা করে।
চালিয়ে-টালিয়ে অবশেষে মুসার গুহায় এসে ঢুকল ওরা। মুসার গুহা নামটা দিয়েছে কিশোর। ইয়ার্ডের জঞ্জালের ভেতরে লুকান ট্রেলার যেটাতে তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার, তার পাশেই তৈরি করা হয়েছে মুসার এই ব্যক্তিগত গ্যারেজ। গাড়িটাড়ি সব এখানে এনেই মেরামত করে সে।
অনেক সময় আছে কাজটা সারার, পুরো দেড় দিন, মুসা বলল।
অত সময় লাগবে না, একটা স্কুড্রাইভার দিয়ে উইশীল্ড-ওয়াশারের ফ্লুইড ট্যাঙ্কটায় টোকা দিয়ে বলল নিকি। এটা সরিয়ে প্রথমে আরও বড় একটা লাগাতে হবে।
লাগাতে বেশিক্ষণ লাগল না। চাপ বাড়ানোর জন্য ছোট একটা এয়ার পাম্পও লাগিয়ে দিল। তারপর, শেষ বিকেলে বাড়িতে ছুটল মুসা, ওর বাবার কাছ থেকে কিছু কৃত্রিম রক্ত নেয়ার জন্যে। ছবির প্রয়োজনে এই রক্ত রাখতে হয় মিস্টার আমানকে।
রক্ত আনার পর নিকি বলল, দেখো লাগিয়ে, কাজ হয় কিনা।
ওয়াশার বাটন টিপে দিল মুসা। ওয়াশার নজল দিয়ে পিচকারির মত ছিটকে বেরোল রক্ত। কিন্তু উইণ্ডশীল্ডে না লেগে লাগল গিয়ে ছাতে।
হলো না! বলে উঠল সে। গাড়িটার এই অবস্থা দেখলে আমাদের হৃৎপিণ্ড টেনে ছিঁড়বেন রিডার। হঠাৎ করেই মুসা অনুভব করল আবার তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ভারি কিছু চেপে বসছে বুকে। দুহাতে স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরল সে।
কি হলো? জিজ্ঞেস করল নিকি।
জানি না, বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল মুসা, দম নেয়ার জন্যে। তার মনে হতে লাগল এটা সেই জিন, সাফোকেশনের জিন। স্ফটিকটার কারসাজিও হতে পারে। প্যান্টের পকেট থেকে বের করল ওটা। হাতে আবার গরম লাগল।
কি ওটা? জানতে চাইল নিকি।
মুসার পেছন থেকে জবাব এল, স্ফটিক। কোয়ার্জ কিংবা টুরম্যালাইন হবে, ভালমত পালিশ করা। এক মাথা চোখা তাই একে বলা হয় সিঙ্গল-টারমিনেটেড ক্রিস্টাল।
এভাবে কথা কেবল একজনই বলে। ঝট করে ফিরে তাকাল মুসা। কিশোর পাশা দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোঁকড়া চুল এলোমেলো হয়ে আছে। গায়ে টকটকে লাল টি-শার্ট, বুকের কাছে বড় বড় করে লেখা রয়েছেঃ লাভ টয়, সাম অ্যাসেম্বলি রিকয়ার্ড। পাশে দাঁড়িয়ে আছে রবিন।