জবাব নেই।
ঘরে ঢুকল মারফি আর পাম।
মুসা ভাবছে, কি হল? আরেকবার মারফিকে ডাকতে শুনল, অ্যাই, বেন!
বাড়ির ভেতরের কোন ঘর থেকে ডাকটা শোনা গেল, তারপর নীরবতা। বড় বেশি চুপচাপ হয়ে গেল যেন সব কিছু। সতর্ক হয়ে উঠল মুসার গোয়েন্দামন। কোন গণ্ডগোল হয়েছে। ঢুকে পড়ল সে। ঢুকেই থমকে গেল।
লিভিংরুমটা দেখতে পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ঝড় বয়ে গেছে ঘরটাতে। সমস্ত আসবাবপত্র উল্টোপাল্টা, কিছু কিছু ভাঙা। কাত হয়ে পড়ে আছে একটা ভাস্কর্য। লম্বা টেবিল ল্যাম্প আর টবে লাগান গাছের চারাগুলোও কাত হয়ে আছে মেঝেতে। জিনিসপত্র ভেঙেচুরে তছনছ। থ্রিলার ছবির দৃশ্যের মতই লাগছে।
ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে মারফি আর পাম। মূর্তির মত স্থির। কি করবে বুঝতে পারছে না।
হলোটা কি? বিড়বিড় করল পাম।
বাকি ঘরগুলোও দেখা দরকার, মুসা বলল।
কেন? মারফির প্রশ্ন।
কি দেখব? জিজ্ঞেস করল পাম।
আরেকবার পুরো ঘরটায় চোখ বোলাল মুসা। গম্ভীর হয়ে বলল, লাশ!
.
০২.
যাহ, লাশ থাকবে কেন? বিশ্বাস করতে পারছে না পাম।
জবাব দিল না মুসা। গণ্ডগোল যে হয়েছে সে তো দেখতেই পাচ্ছে। প্রচণ্ড লাফালাফি করছে হৃৎপিণ্ডটা। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। মাথার ভেতরটা হালকা লাগছে। অক্সিজেনের ঘাটতি পড়েছে যেন ঘরে।
মাথা ঝাড়া দিয়ে মাথার ভেতরটা পরিষ্কার করতে চাইল সে। বলল, আসুন, ঘুরে দেখি।
মুসার জুতোর তলায় পড়ে কাচের টুকরো গুড়ো হচ্ছে। ছড়িয়ে রয়েছে। ওগুলো। কোন জিনিস না ছুঁয়ে, যেটা যেভাবে রয়েছে না নড়িয়ে, সতর্কতার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে লাগল সে। ভাবছে, কি হয়েছিল এখানে? বেডরুমে ঢুকল। ফোনের তার ছেঁড়া। ফোন করে তখন কেন জবাব পায়নি পাম, বোঝা গেল।
বেন নেই! ডাকাতি-টাকাতি হয়নি তো? মুসার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটা।
জানি না। ডাকাতেরা ড্রয়ার আর আলমারি ঘাটে শুনেছি, চেয়ার-টেবিল উল্টে ফেলতে শুনিনি। কিছু চুরি গেল কিনা দেখে বলতে পারবেন?
উঁচু একটা আলমারির দুটো ড্রয়ার খুলে দেখল পাম। ছোয়ওনি কিছু।
তোমার কথাবার্তা যেন কেমন লাগছে? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল মারফি। মনে হচ্ছে এ লাইনে অভিজ্ঞতা আছে…।
আমি গোয়েন্দা, বলতে গিয়েও থেমে গেল মুসা। এখনই সেটা জানান। বোধহয় ঠিক হবে না। তবে কিছু একটা বলা দরকার। বাঁচিয়ে দিল পাম, চলে যাওয়া উচিত…।
এখনই কি? আবার কাচের টুকরো মাড়িয়ে লিভিংরুমে ফিরে এল মুসা। এত কাচ এল কোথা থেকে? ভাবতে গিয়ে কিশোরের একটা কথা মনে পড়লঃ কি ভেঙেছে সেটা যদি বের করতে না পার, কি ভাঙেনি সেটা দেখো।
কাচ এল কোথা থেকে বের করার জন্যে রান্নাঘরে এসে ঢুকল মুসা। আলমারি খুলে সেগুলোর অবস্থা দেখতে লাগল।
এই, করো কি? মুসার কাঁধ খামচে ধরল মারফি। বিখ্যাত অভিনেতার ঘর থেকে স্যুভনির নেয়ার মতলব?
কাচ ভাঙা এল কোত্থেকে দেখতে চাইছি।
কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিল মারফি। লজ্জিত কণ্ঠে বলল, সরি! মাথার ভেতরটা কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
কাচের সব জিনিসই মনে হলো ঠিক আছে, কিছু ভাঙেনি। জানালাগুলো দেখল মুসা। ভাঙা নেই একটাও। ফুলদানীও সব আস্ত। মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে না ফুল কিংবা পানি।
কয়েকবার করে ঘরগুলো দেখল মুসা। কিছু বুঝতে পারল না। পারলে ভাল হত! রহস্যের সমাধান করে অবাক করে দিতে পারত কিশোর আর রবিনকে।
কিন্তু পারল না।
গোরস্থানে ফেরার পথে চুপচাপ রইল মুসা। শুনছে মারফি আর পামের উত্তেজিত আলোচনা। নানা রকম যুক্তি খাড়া করছে ওরা। ওদের ধারণা, বাড়িটাতে ওসব ঘটার আগেই বেরিয়ে গেছে বেন। কিংবা মাতাল হয়ে এসে নিজেই ওই অবস্থা করেছে ঘরবাড়ির, শেষে রাত কাটাতে গেছে কোন মোটেলে।
ওদের এসব যুক্তি হাস্যকর লাগছে মুসার কাছে। শুনলই শুধু, কিছু বলল না। বলতে গেলে ওরাও তার মতামত শুনতে চাইবে। বলতে পারবে না সে। কিছুই ভেবে বার করতে পারেনি এখনও। কাজেই চুপ থাকতে হলো।
রিয়ার-ভিউ মিররে মুসার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল মারফি, ঠিক পথেই যাচ্ছি তো?
না। ডানে মোড় নিয়ে তারপর দক্ষিণে।
গোরস্থানে রিডারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল সদ্য খোঁড়া একটা কবরের মধ্যে। ধমক দিয়ে একজন অভিনেতাকে বোঝাচ্ছে কি করে বেলচা দিয়ে কবরের মাটি সরাতে হবে।
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ। ছিপছিপে শরীর, বেশ সুঠাম, নিয়মিত টেনিস খেলেন বা অন্য ব্যায়াম করেন বোঝা যায়। পরনের সাদা প্যান্ট আর গায়ের পিচ রঙের পোলো শার্ট রোদেপোড়া চামড়া ও ধবধবে সাদা চুলের সঙ্গে মানিয়েছে বেশ।
বেন কই? তিনজনকে ফিরতে দেখে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন রিডার।
আপনার সঙ্গে একটু একা কথা বলা যাবে? কবরের দিকে তাকিয়ে বলল মুসা।
কবর থেকে উঠে এলেন রিডার। মুসা, মারফি আর পামের সঙ্গে সরে যেতে লাগলেন একটা নির্জন জায়গায়। পেছনে আসতে লাগলেন বৃদ্ধ ভদ্রলোক। পায়ের শব্দে মুসা ফিরে তাকাতেই হেসে আন্তরিক গলায় বললেন, আমি ব্রাউন অলিংগার। সাফোকেশন টু-র প্রযোজক। চেকগুলো যেহেতু আমাকেই সই করতে হবে, জানা দরকার টাকাগুলো সব পানিতে ফেলছে কিনা জ্যাক।
দ্বিধা করল মুসা। রিডার কিছুই বললেন না। বলল সে, ডিলন নেই।
মুসার চোখের দিকে তাকালেন অলিংগার। হাত বাড়িয়ে কাঁধ খামচে ধরলেন। শক্তি আছে। কানের কাছে বিপবিপ করল তার হাতঘড়ির অ্যালার্ম। আমাকে ভয় দেখানর চেষ্টা, না? এমনিতেই তো চুল সব পেকে গেছে, আর কি। পাকাবে? কে তুমি?