কেসটা আবার ভাল লাগতে আরম্ভ করেছে আমার, মুসা বলল।
লাগবেই। কারণ একটা মেজর রোল প্লে করতে হবে তোমাকে।
মুসার মেজর রোলটা হল হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে ভিডিও টেপটা নিয়ে আবার বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে পার্টিতে ফিরে আসা। ছবিটা শেষ হওয়ার আগে।
রকি বীচের দিকে তীব্র গতিতে গাড়ি ছুটিয়েছে মুসা। বুকের মধ্যে কাপন শুরু হয়ে গেছে তার। ব্রেকটা গোলমাল করতে আরম্ভ করেছে, অ্যাকসিলেরেটর পুরোটা না নেমে মাঝপথেই আটকে যাচ্ছে। বিরক্ত লাগে মুসার। এত সময় ব্যয় করে গাড়িটার পেছনে, সব কিছু ঠিকঠাক রাখতে চায়, তারপরেও প্রয়োজনের সময় গোলমাল করতে থাকে। সন্দেহ হতে লাগল তার, পৌঁছতে পারবে তো সময়মত?
ইয়ার্ডে পৌঁছে একলাফে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে। ক্যাসেটটা বের করে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে আবার লুফে নিল। যেন প্রার্থনা করল সৌভাগ্য বয়ে আনার জন্যে।
তারপর বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে ছুটল আবার বেল এয়ারের দিকে।
ভূতুড়ে চেহারার ছমছমে পরিবেশের সেই বাড়িটাতে যখন পৌঁছল, দেখল তখনও ছবি চলছে। নিঃশব্দে স্ক্রিনিং রুমের পেছনে প্রোজেকশন বুদে ঢুকে পড়ল মুসা। ঘরটা খালি। প্লেয়ারে ক্যাসেটটা ভরল সে। কয়েকটা বোতাম টিপতেই বন্ধ হয়ে গেল প্রোজেকটরের ফিল্ম। ছবি চলে গেল পর্দা থেকে। কয়েক সেকেণ্ড পরেই। সেই জায়গা দখল করল ভিডিও প্লেয়ার, কয়েকটা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে আবার ছবি ফোঁটাল পর্দায়।
ক্যাসেটটা চালু করে দিয়েই দৌড়ে স্ক্রিনিং রুমে চলে এল মুসা, রবিন আর কিশোরের পাশে।
হাসাহাসি শুরু করেছে দর্শকরা।
একজন বলল, দারুণ এডিটিং করেছ তো হে জ্যাক। কোত্থেকে তুললে এটা?
ঘুমিয়ে ছিলে নাকি তখন? বিরক্ত হয়ে বলল আরেকজন। মনে হচ্ছে ক্যামেরাকে ছেড়ে দিয়ে আরেক জায়গায় চলে গিয়েছিলে? ফোকাসিঙের এই অবস্থা কেন?
ট্রেলারের দরজায় লাথি মারতে দেখা গেল ডিলনকে।
কি ব্যাপার, ডিলন? বলে উঠল এক মহিলা। এরকম করলে কেন? ঢুকতে বাধা দিয়েছিল নাকি কেউ? দেখা তো যাচ্ছে না।
খুশি হয়ে উঠল তিন গোয়েন্দা। ডিলনের নাম বলেছে মহিলা। তার মানে ওরা। সফল হতে চলেছে।
কার কথা বলছেন? গলায় জোর নেই ডিলনের, ওটা আমি নই…
জ্বলে উঠল ঘরের সব আলো। ডিলনের দিকে ঘুরে তাকালেন রিডার। চোখে খুনীর দৃষ্টি। এগুলো কখন তুললে?
নীল একটা স্ফটিক হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে মরিয়া হয়ে বলল ডিলন, আমি নই! ওই লোকটা আমি নই, বলছি না!
তুমি নও মানে? নিশ্চয় তুমি! কানা হয়ে গেছি নাকি আমরা!
আমি নই, দুর্বল কণ্ঠে আবার বলল ডিলন।
তাহলে কে? কোমল গলায় জানতে চাইল অ্যাঞ্জেলা ডোভার। ছবিটা শেষ করার পরেও ওই পোশাক তোমার কাছে রেখে দিয়েছিলে। কেন অস্বীকার করছ?
পার্টিতে পটার বোনহেডকেও দাওয়াত করা হয়েছে। উঠে দাঁড়াল সে। দুহাত দুপাশে ডানার মত ছড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে শান্ত হতে বলল দর্শকদের। বলল, অনেক সময় আমাদেরকে আমাদের মত লাগলেও আসলে আমরা নই।
চমৎকার, বোনহেড, তীব্র ব্যঙ্গ ঝরল মুসার কণ্ঠে। ঠিকই বলেছেন। এই যেমন, এখনও গা থেকে টু-টন টিটানের গন্ধ ধুয়ে ফেলতে পারেননি আপনি।
তাড়াহুড়ো করে আবার চেয়ারে বসে পড়ল বোনহেড।
অস্বস্তিতে কেবলই চেয়ারে উসখুস করছে ডিলন।
হচ্ছেটা কি কিছুই তো বুঝতে পারছি না! রিডার বললেন।
দ্রুত ঘরের সামনের দিকে চলে এল কিশোর, রবিন আর মুসা, যেখানে ওদেরকে সবাই দেখতে পাবে। পর্দাটার কাছে।
মিস্টার রিডার, বলতে লাগল কিশোর, যে টেপটা দেখলেন ওটা আমাদের। নয় দিন আগে হ্যালোউইনের রাতে ভোলা। রকি বীচে আমাদের ট্রেলারে ঢুকেছিল ডিলন, চুরি করে।
মৃদু গুঞ্জন উঠল দর্শকদের মাঝে। অবিশ্বাসের হাসি হাসল কেউ কেউ।
অসম্ভব, প্রতিবাদ জানাল অ্যাঞ্জেলা। হ্যালোউইনের তিন দিন আগে কিডন্যাপ করা হয়েছে বেনকে।
কোন কিডন্যাপিংই হয়নি, জোর গলায় বলল কিশোর। পুরোটাই ধাপ্পাবাজি।
হঠাৎ ব্রাউন অলিংগারের ঘড়ি অ্যালার্ম দিতে শুরু করল, উঠে দাঁড়ালেন তিনি। এসব ফালতু কথা শোনার কোন মানে হয় না। নিশ্চয় নেশা করে এসেছে ছেলেগুলো। কিডন্যাপ অবশ্যই হয়েছিল। জ্যাক, দেখছ কি? বের করে দাও ওগুলোকে। দরজার দিকে এগোনোর চেষ্টা করলেন তিনি। পথ আটকাল মুসা।
একটু দাঁড়ান, মিস্টার অলিংগার, কিশোর বলল, আপনিও জড়িত আছেন
মানে? ভুরু কুঁচকে গেছে রিডারের।
বেন ডিলনকেই জিজ্ঞেস করুন না, মুসা বলল।
উঠে দাঁড়াল ডিলন, যেন বেরিয়ে যাওয়ার জন্যেই। কিন্তু সবগুলো চোখ তার দিকে ঘুরে যাওয়ায় বেরোতে আর পারল না। অলিংগারের দিকে তাকাল। তারপর একে একে কিশোর, মুসা আর রবিনের দিকে। ভঙ্গি আর দৃষ্টি দেখে মনে হলো। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে খেপা জানোয়ার।
এদিক ওদিক তাকিয়ে শেষে বসে পড়তে বাধ্য হলো আবার, তবে চেয়ারে না বসে বসল চেয়ারের হাতলের ওপর। বেশ, স্বীকার করছি, ওটা কিডন্যাপ ছিল না। কিডন্যাপ করা হয়নি আমাকে। জোক। রসিকতা।
জোক! রাগে চিৎকার করে উঠলেন রিডার, আমার ছবিটাকে স্যাবোটাজ করে দিয়ে রসিকতা! এরকম একটা কাজ কি করে করতে পারলে!
বসে পড়লেন অলিংগার। চোখে আগুন। পরিচালকের দিকে তাকিয়ে বললেন, এসব ঝামেলা না করে আসলে তোমাকে খুন করা উচিত ছিল, জ্যাক। যাতে আর কোন দিন কোন ছবি বানানোর পাগলামি করতে না পারো!