এই, সবাই স্ক্রিনিং রুমে চলে আসুন, মাইক্রোফোনে বললেন রিডার। সব ঘরেই স্পিকার লাগান রয়েছে, তাতে শোনা গেল তার কথা। আপনাদের জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে।
চলো, অ্যাঞ্জেলাকে বলল ডিলন। ছেলেগুলো বিরক্ত করে ফেলেছে। আমাকে।
কাচের ব্যাপারটা বললেন না তো মিস্টার ডিলন? মুসা নাছোড়বান্দা।
আমি কি করে বলব? খেঁকিয়ে উঠল ডিলন। আমি কি দেখেছি নাকি? ধরেই আমার মাথায় একটা বস্তা টেনে দিয়ে ঢেকে ফেলল। ঠেলে মুসাকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে অ্যাঞ্জেলার হাত ধরে টানল সে। কাচ নিয়ে কে মাথা ঘামায়? আমি তো ভেবেছি আর কোনদিনই ফিরতে পারব না। একটা কথা শোনো, কাজে লাগবে। বড় বেশি ছোঁক ছোঁক কর তোমরা। ভাল নয় এটা। অ্যাঞ্জেলাকে নিয়ে ঘোরান সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল সে। বেরিয়ে গেল টরচার চেম্বার থেকে।
এটাই চেয়েছিলাম, কিশোর বলল। ওকে নার্ভাস করে দিতে পেরেছি।
অত্যাচার করার ভয়াবহ যন্ত্রগুলোর দিকে তাকাল মুসা। এ ঘরে এসে কে নার্ভাস হবে না!
নার্ভাস হলে লাভটা কি? কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল রবিন, আমরা চেয়েছি ও ভুল করুক। বেস কিছু বলুক। যাতে কাঁক করে টুটি টিপে ধরতে পারি। তা তো করল না। পুরোপুরি ঠাণ্ডা রইল। ওর কিছু করতে পারব না।
ওরা তিনজনও উঠে এল ওপরতলায়। স্ক্রিনিং রুমে বড় একটা সিনেমার পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জ্যাক রিডার।
বক্তৃতা দেয়ার ঢঙে বলছেন, …আমরা সবাই একটা উদ্দেশ্যেই এখানে জমায়েত হয়েছি। ডিলন যে নিরাপদে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসেছে এটা জানানোর জন্যে। দুনিয়া কোন দিনই জানতে পারবে না, মৃত্যুর কতটা কাছে চলে গিয়েছিল এতবড় একজন অভিনেতা। তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি সত্যি আনন্দিত। আরও খুশি হব যদি ছবিটা শেষ করতে পারি।
কেউ হাসল, কেউ কাশল, কেউ কেউ দৃষ্টি বিনিময় করল পরস্পরের দিকে।
এসব তো আমরা জানি, চিৎকার করে বলল একজন। সারপ্রাইজটা কি?
সারপ্রাইজ? হাসছেন রিডার। হাত কচলাচ্ছেন। সেটা একটা গোপন ব্যাপার। আমাদের সবারই কিছু না কিছু গোপনীয়তা আছে। ডিলনেরও আছে। সেটা গোপন রাখাই ভাল।
কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে মুসা, ভাল করে তাকাল ডিলনের মুখের দিকে। ভাবের কোন পরিবর্তন দেখতে পেল না। লোকটা সত্যিই বড় অভিনেতা, মনে মনে স্বীকার না করে পারল না সে।
ডিলন এই প্রথম আমার ছবিতে কাজ করছে না, রিডার বলছেন, আরও করেছে। তার প্রথম ছবিটাই পরিচালনা করেছি আমি।
আর বলবেন না! দুহাতে মুখ ঢেকে হতাশ হওয়ার অভিনয় করল ডিলন। ভ্যাম্পায়ার ইন মাই ক্লোজেটের কথা বলছেন তো? ছবিটা মুক্তিই দিতে দিল না স্টুডিও। ওই ভয়ঙ্কর বোমা ফাটানোর দৃশ্যটাই এর জন্যে দায়ী। ওফ বিচ্ছিরি!
হ্যাঁ, একমত হয়ে মাথা ঝাঁকালেন রিডার। আমারও একই অবস্থা হয়েছিল ওই ছবি করতে গিয়ে। লোকে আমার দিকে ফিরেও তাকাত না তখন। বড় পরিচালক বলা তো দূরের কথা, এখন যেমন বলে। থামলেন তিনি। তাকালেন। শ্রোতাদের দিকে। হাততালি আর প্রশংসা আশা করলেন যেন। লেডিজ অ্যাণ্ড জেন্টলম্যান, ডিলন জানে না কথাটা, ওই ছবির একটা প্রিন্ট আমার কাছে আছে। সেটাই দেখান হবে এখন।
এইবার হাততালি আর চিল্কারে ফেটে পড়ল শ্রোতারা।
লাইটস! ক্যামেরা! অ্যাকশন! শুটিঙের সময় যেভাবে চেঁচানো সে রকম করে চেঁচিয়ে উঠলেন রিডার।
আলো নিভে গেল। রোম খাড়া করে দেয়া বাজনা বেজে উঠল। পর্দায় ফুটল ছবি।
এক ভয়াবহ ছবি। বোর্ডিং স্কুলে ছাত্ররা বার বার ভ্যাম্পায়ারের শিকার হতে লাগল। পিশাচটাকে জ্যান্ত করে তুলেছিল কয়েকটা ছেলে। বহুদিন বন্ধ করে রাখা পাতাল ঘরে গিয়ে ঢুকেছিল, পেয়ে গিয়েছিল একটা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি আর একটা কঙ্কাল, ওই পাণ্ডুলিপিতে লেখা ছিল কি করে জ্যান্ত করে তুলতে হয় ভ্যাম্পায়ারকে। খেলার ছলে ওরা করে ফেলেছিল কাজটা, সত্যিই যে জেগে উঠবে। পিশাচ কল্পনাই করতে পারেনি।
প্রথমেই ভ্যাম্পায়ারের কামড় খেল ডিলন। হয়ে গেল ভ্যাম্পায়ার। ফ্যাকাসে চেহারা, তাতে সবুজ আভা, চোখের চারপাশে কালো দাগ, চোয়াল বসা, কালো আলখেল্লা পরা ভয়ঙ্কর ভ্যাম্পায়ার আতঙ্কের ঝড় তুলল যেন পর্দায়।
হঠাৎ আঙুল দিয়ে রবিন আর কিশোরের পিঠে খোঁচা মারল মুসা। কিশোরেরটা এতই জোরে হয়ে গেল, উফ করে উঠল সে।
আমি যা দেখেছি তুমিও দেখেছ? ওর কানে কানে বলল মুসা, মনে করতে পার?
অন্ধকারেই উজ্জ্বল হলো কিশোরের হাসি। ভাল মত। এই পোশাকই পরেছিল সে, হ্যালোউইনের রাতে আমাদের হেডকোয়ার্টারে ঢোকার সময়।
.
১৬.
একটা মুহূর্ত; দীর্ঘ, স্তব্ধ হয়ে যাওয়া একটা নীরব মুহূর্ত অনড় হয়ে রইল তিন গোয়েন্দা। নড়তে পারল না। চোখ আটকে রইল পর্দায়, যেখানে ভ্যাম্পায়ারের সাজে সাজা বেন ডিলন নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। রক্ত শোষণ করছে একের পর এক মানুষের।
আমি চেয়েছিলাম, রবিন বলল। একটা ভুল করুক ডিলন। মাত্র একটা। তাহলেই ধরতে পারতাম।
করে ফেলেছে, উত্তেজিত কণ্ঠে মুসা বলল। হ্যালোউইনের দিনে আমাদের হেডকোয়ার্টারে ঢুকে। সেরাতে কোথায় ছিল প্রমাণ করতে পারব আমরা। কিডন্যাপারটা আটকে রাখেনি, এটা তো শিওর।
উত্তেজিত কিশোরও হয়েছে, তবে অনেক বেশি সতর্ক রয়েছে সে। ভিডিও টেপে রেকর্ড করা রয়েছে, চুরি করে আমাদের হেডকোয়ার্টারে ঢুকেছিল একজন। লোক। সেই লোকই যে ডিলন, প্রমাণ করতে পারছি না আমরা। তবে তাড়াহুড়া করলে হয়তো বিশেষ একজনকে ভড়কে দিতে পারব।