ডিলন কোথায়? কিশোরকে জিজ্ঞেস করল মুসা।
হরর অথবা ভূতের ছবি তৈরি করার মত করেই যেন সাজানো হয়েছে রিডারের বাড়িটা। মধ্যযুগীয় কায়দায় ভারি ভারি করে তৈরি হয়েছে আসবাব, খোদাই করে অলঙ্করণ করা হয়েছে। রক্তলাল মখমলে মোড়া গদি। দেয়ালে ঝাড়বাতি। লোহার বড় বড় মোমদানীতে জ্বলছে বড় বড় মোম। কালো কাপড়ে লাল রঙে লেখা, ইংরেজিতে লেখা হয়েছে ব্যানার, যার বাংলা করলে দাঁড়ায়ঃ মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছ বলে স্বাগতম, ডিলন। আঁকাবাঁকা করে আঁকা হয়েছে অক্ষরগুলো, দেখে মনে হয় নিচ থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে। লিভিংরুমের মাঝখানে, ঝোলানো হয়েছে ব্যানার। তার নিচে বিশাল কাচের ফুলদানীতে রাখা হয়েছে লাল গোলাপ।
সুইমিং পুলের দিকে মুখ করা বারান্দায় বাজনা বাজাচ্ছে মরগানের দল। হলিউডের সিনেমা জগতের বড় বড় চাঁইয়েরা অতিথি হয়ে এসেছে। খাচ্ছে, নাচছে, আনন্দ করছে।
ওই যে অলিংগার, দেখাল রবিন। বাজনার শব্দকে ছাপিয়ে জোরে জোরে কথা বলতে হচ্ছে, নইলে বোঝা যায় না। আমাদের দিকে তাকালেই সরে যেতে হবে।
ডিলন কোথায়? একজন ওয়েইটারকে এগিয়ে আসতে দেখে আরেক দিকে মুখ করে দাঁড়াল কিশোর।
পেছন থেকে এগিয়ে এসে প্রায় ছোঁ মেরে মুসার চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে নিলেন রিডার। ঘটনাটা কি?
ইয়ে…ইয়ে…মানে…ইয়ে… থেমে গেল মুসা। কথা আটকে গেছে। কি বলবে জানে না।
তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেল রবিন। হেসে বলল, গোয়েন্দাগিরির ব্যবসায় আর পোষাচ্ছে না। তাই ক্যাটারিং ধরেছি।
খুব ভাল করেছ, হরর ছবির সংলাপ বলছেন যেন পরিচালক। তবে মুভি বিজনেস থেকে দূরে থাকবে। যদি হৃৎপিণ্ডে কাঁচির খোঁচা খেতে না চাও। হিরোকে নিয়েই বড় বিপদে আছি এমনিতেই। আর ঝামেলা বাড়িও না।
বুঝলাম না, মিস্টার রিডার? কিশোর বলল।
ডিলনের জন্যে এই পার্টি দিয়েছি। যাতে সে আসে। মন ভাল হয়। আবার অভিনয় করে সাফোকেশন টু-তে। কি জবাব দিয়েছে জান? সিয়াও। আউ রিভোয়া। হ্যাসটা লুয়েগো। শ্যালম। নানা ভাষায় এই কথাগুলোর একটাই মানে, বিদায়।
ডিলন কোথায় জানেন?
পুলের পানির তলায় থাকতে পারে। কিংবা আমার টরচার চেম্বারে। অ্যাঞ্জেলাকে নিয়ে ওদিকটাতেই যেতে দেখেছি।
গোল একটা ঘোরান সিঁড়ি দেখালেন রিডার। নিচে একটা ঘর রয়েছে। সেখানে অত্যাচার করার প্রাচীন সব অ্যানটিক যন্ত্রপাতি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বসে কথা বলতে দেখা গেল অ্যাঞ্জেলা আর ডিলনকে।
বেন, তিন গোয়েন্দাকে চিনতে পেরে হেসে বলল অ্যাঞ্জেলা, ওরা গোয়েন্দা। তোমাকে অনেক খুঁজেছে।
তাই নাকি? হাসি মুখে বলল বটে ডিলন, কিন্তু কণ্ঠস্বর তেমন আন্তরিক মনে হল না।
ওই কিডন্যাপিংটা নিশ্চয় খুব বাজে ব্যাপার হয়েছে, রবিন বলল আলাপ জমানর ভঙ্গিতে।
কথাটার জবাব না দিয়ে কর্কশ গলায় ডিলন বলল, তোমরাই পটারকে অপমান করতে গিয়েছিলে?
অপমান? আকাশ থেকে পড়ল যেন মুসা, বলেন কি? আমি তার রেসলিঙের মস্ত বড় ভক্ত। অপমান করতে পারি?
টেলিভিশনে আপনার সাক্ষাৎকার দেখার পর থেকেই কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্যে মরে যাচ্ছি, মিস্টার ডিলন, কিশোর বলল নিরীহ কণ্ঠে। আপনি বলেছেন, অন্ধকারে আপনি বুঝতে পারেননি কিডন্যাপাররা কজন ছিল। তাদের কথা শুনেছেন নিশ্চয়। গলা শুনেও মানুষ গণনা করা যায় অনেক সময়।
মাথা নাড়ল ডিলন। ওই ব্যাটারা অনেক চালাক। কেবলই কণ্ঠস্বর বদল করেছে। আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে। অনেক বড় অভিনেতা ওরা, আমার ওস্তাদ। চোখের পাতা সামান্যতম কাপল না ওর। শান্ত, স্বাভাবিক রয়েছে।
একটা স্বর নকল করে শোনাতে পারেন?
দেখ, বেশি চালাকি… লাফ দিয়ে একটা পুরানো উঁচু চেয়ার থেকে নেমে পড়ল ডিলন, ওটাতে বসিয়ে অত্যাচার করা হত মানুষকে।
তার হাত চেপে ধরল অ্যাঞ্জেলা। আরে থামো থামো, ওরা তোমার উপকারই করতে চেয়েছে।
আপনার জন্যে খুবই সহজ কাজ, ডিলনের ওই আচরণ যেন দেখেও দেখেনি। কিশোর, এমনি ভঙ্গিতে বলল, কারণ আপনি বড় অভিনেতা। যে কোন লোকের স্বর নকল করে ফেলতে পারবেন। এভাবেই বলুন না, হাল্লো, পটার? কেমন আছ, পটার? তারপর এই কথাগুলো আবার আপনার স্বাভাবিক স্বরে বলুন। শুনতে খুব। ইচ্ছে করছে।
বলো না, বেন, অ্যাঞ্জেলা বলল। ছেলেগুলো এত করে যখন বলছে।
বলল ডিলন। একবার অন্য স্বরে, একবার নিজের আসল স্বরে। গায়ে কাঁটা দিল মুসার। এই কণ্ঠ তার চেনা। অলিংগারের অফিসে রেডিয়াল বাটন টিপে ফোন। করার সময় ওপাশ থেকে এই স্বরই শুনতে পেয়েছিল। কিশোরের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল সে। জবাবে কিশোরও ঝাঁকাল।
আপনার ছবি দেখেছি। সিনেমা, কিশোর বলল। তাতে বেঁধে রাখতে দেখেছি। কিডন্যাপাররাও কি বেঁধে রেখেছিল সারাক্ষণ?
ঢিলেঢালা একটা হাফ-হাতা টারকুইজ শার্ট পরেছে ডিলন। চট করে একবার কব্জির দিকে তাকাল। দাগটাগ কিছু নেই। আড়চোখে তাকাল কিশোরের দিকে। মাথা নেড়ে বলল, না, ঘরে তালা দিয়ে রেখেছিল কেবল।
সাংঘাতিক চালাক তো ব্যাটা, ভাবল মুসা। কাচের ব্যাপারটা কি বলুন তো? এত কাচ?
কিসের কাচ? জিজ্ঞেস করল ডিলন।
আপনার সৈকতের ধারের বাড়িতে। সারা ঘরে কাচ ছড়িয়ে ছিল।
হঠাৎ ঘরের সমস্ত আলো মিটমিট করতে শুরু করল, জ্বলে আর নেভে, জ্বলে আর নেভে।