ধুলো ছড়ানোটা কোন ব্যাপার না, মুসা বলল। ডজনখানেক স্প্রে ক্যান। আছে আমাদের বাড়ির বেসমেন্টে, বাবার জিনিস। এই স্পেশাল ইফেক্ট দেখিয়ে আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না।
কল্পনার জোর আছে তোমাদের মানতেই হবে, মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন অলিংগার। তবে ভুল করছ। আমি কোন মেসেজ পাইনি আজ। চাইলে গিয়ে আমার অ্যানসারিং মেশিন চালিয়ে দেখতে পারো তোমরা। কোন মেসেজ নেই। এখানে সেলিব্রেট করতে এসেছি আমি।
কিসের সেলিব্রেট? মুসার প্রশ্ন।
অবশ্যই ডিলনের মুক্তির। অবাক হলে মনে হচ্ছে? খবরটা শোননি? টাকা। মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। ওকে ছেড়ে দিয়েছে কিডন্যাপাররা। এটাই আশা করেছিলাম আমি।
কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে অলিংগারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। তারপর আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, কখন ছাড়ল?
কয়েক ঘন্টা আগে। প্যানট্রিতে গিয়ে ডোনাটের বাক্স খুললেন অলিংগার। গ্লাস বের করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন, দুধ খাবে নিশ্চয়? দুধ তোমাদের দরকার। বেড়ে উঠতে, বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে দুধ। তোমাদের এখন খুব দরকার।
তার মানে এখন সাফোকেশন টু শেষ করতে পারবেন?
হাসলেন অলিংগার। তবে এই প্রথম তার চোখে বিস্ময়ের আলো ঝিলিক দিয়ে যেতে দেখল কিশোর। নাহ্, আর পারলাম না। অনেক দেরি হয়ে গেছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এখন আর সাফোকেশন টুর শুটিং শেষ করা সম্ভব না। তাছাড়া এত বড় একটা বিপদ থেকে এসে ডিলনেরও মনমেজাজ শরীর কোনটাই ভাল না। এই অবস্থায় অভিনয় করতে পারবে না। শ্রমিক কর্মচারী আর অন্য অভিনেতাদেরও মন খারাপ হয়ে গেছে। ছবি এইটা খতম। কেউ যদি না যায়। কাকে পরিচালনা করবে জ্যাক রিডার?
তাই। ছবিটা তাহলে আর করতে চান না। আপনি বুঝে ফেলেছেন, এই অখাদ্য গিলবে না দর্শকেরা। তাই যা খরচ হয়েছে সেটা তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে চান। খরচ হয়ে যাওয়া দুই কোটি ডলার।
দুই কোটি? দুধ ঢালতে ঢালতে বললেন অলিংগার, আরও অনেক বেশি খরচ হয়েছে।
হয়তো। এবং সেটাই আপনি ফেরত চান। ছবি শেষ না করলে ইনসিওরেন্স কোম্পানি টাকা দেবে না…
অলিংগারের হাত থেকে গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেল।
ভাঙা কাচ…ভাঙা কাচ…ভাঙা কাচ…মুসার মগজে যেন তোলপাড় তুলল। ভাঙা কাচের শব্দ।
ছবির ব্যাপারে অনেক বেশি জানো তোমরা, প্রযোজক বললেন। এতটা, ভাবতে পারিনি। ঠিকই আন্দাজ করেছ। ছবিতে লোকসান হলে সেটা দিতে বাধ্য বীমা কোম্পানি, বীমা সে জন্যেই করান হয়। টাকাটা আদায় করার মধ্যে কোন অন্যায় দেখি না আমি।
কিন্তু কিডন্যাপিঙের খেলা খেলে, কর্কশ গলায় বলল কিশোর। টাকা আদায় করাটা কেবল অন্যায় নয়, পুলিশের চোখে ঠগবাজি।
হাসি হাসি ভাবটা চলে গেল অলিংগারের চেহারা থেকে। ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। দৃষ্টি। অস্বীকার করছি না। তবে পুলিশকে সেটা প্রমাণ করতে হবে। তোমরা এখন যেতে পার। আলোচনা শেষ।
শহরে ফেরার পথে গাড়ির হিটার চালু করে দিল মুসা। তবু ঠাণ্ডা যাচ্ছে না। তার, শরীর গরম হচ্ছে না। বার বার ঘড়ি দেখছে কিশোর, পাঁচটার খবরটা শোনার জন্যে অস্থির। পাঁচটা বাজার দশ মিনিট আগে, রকি বীচ থেকে তখনও অনেক দূরে রয়েছে ওরা, পথের ধারে পুরানো একটা খাবারের দোকান চোখে পড়ল কিশোরের। বাড়িটার সব কিছুই জীর্ণ মলিন, কেবল একটা স্যাটেলাইট ডিশ অ্যান্টেনা ছাড়া।
অ্যাই, রাখো তো। গাড়িটা পুরোপুরি থামার আগেই লাফ দিয়ে নেমে পড়ল।
দোকানে একজন খদ্দেরও নেই। বাবুর্চি দাঁড়িয়ে আছে একহাতে প্লেট আর আরেক হাতে কাটাচামচ নিয়ে। প্লেটে ডিম ভাজা।
খবর দেখবেন না? জিজ্ঞেস করল কিশোর, অনেকটা অনুরোধের সুরেই।
এক চামচ ডিমভাজা মুখে পুরে দিয়ে টেলিভিশনের দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে ইঙ্গিত করল লোকটা। প্রায় ছুটে গিয়ে টিভি অন করে দিল কিশোর। পর্দায় ফুটল ফাইভ-অ্যালার্ম নিউজ।
কিছু কিছু অভিনেতা হিরোর অভিনয় করে, কিন্তু আজ একজন অভিনেতা প্রমাণ করে দিয়েছেন বাস্তবেও তিনি হিরো, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলছে টিভি অ্যাংকারপারসন। আজ সকালে জনপ্রিয় অভিনেতা বেন ডিলনকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশ। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন তিনি। পুলিশকে বলেন, এগারো দিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন। একটু আগে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর এই বন্দি থাকার কাহিনী তিনি শোনান সাংবাদিকদেরকে। একজন ফাইভ-অ্যালার্ম নিউজ রিপোর্টারও ছিল সেখানে… ই চলতে আরম্ভ করল ভিডিওটেপ। পর্দায় দেখা গেল বেন ডিলনকে। উত্তেজিত হয়ে আছে, থানায় বসে আছে মাইক্রোফোনের সামনে। সানগ্লাসের আড়ালে ঢাকা। পড়েছে তার বিখ্যাত নীল চোখ। সাংবাদিকদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার না করার দুর্নাম আছে এমনিতেই ডিলনের, আর এখন তো সে মানসিক চাপেই রয়েছে।
কিডন্যাপারের চেহারা কেমন জানিয়েছেন পুলিশকে? জিজ্ঞেস করল একজন রিপোর্টার।
নিশ্চয়ই। এক্কেবারে আপনার মত, অভদ্রের মত বলল ডিলন। আন্দাজেই তো বলে ফেললেন। কি করে জানাব? আমি কি ওদের চেহারা দেখেছি নাকি? দিনের বেলা সব সময় চোখ বেঁধে রাখত আমার। রাতে খুলে দিলেই বা কি? আলো জ্বালত না। ঘর থাকত অন্ধকার। কাউকে দেখতে পেতাম না।
ডিলন, অ্যাঞ্জেলা ডোভারের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কি আবার ভাল হবে মনে হয়?