পরদিন শনিবার। হেডকোয়ার্টারের বাইরে দুটো পুরানো চেয়ারে বসে কথা বলছে কিশোর আর মুসা। এই সময় রবিনের গাড়িটা ঢুকতে দেখা গেল।
গাড়ি থেকে নামল রবিন আর চায়না।
এই সেরেছে রে! বলে উঠল মুসা, একেবারে বান্ধবীকে নিয়েই হাজির!
বিরক্ত ভঙ্গিতে মুখ বাঁকাল কিশোর। কিছু বলল না। তাকিয়ে রইল রবিন আর, চায়নার দিকে।
এগিয়ে এল রবিন। বুঝলে কিশোর, খুব ভাল গাইতে পারে চায়না। গত রাতে পার্টি ও একাই মাত করে রেখেছিল।
তাই নাকি? খুব ভাল, দায়সারা জবাব দিয়ে চুপ হয়ে গেল কিশোর।
আরও একটা ভাল ব্যাপার আছে, হেসে বলল রবিন। কিশোরের চুপ হয়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরেছে। পটার বোনহেডের ব্যাপারে আর আগ্রহ আছে?
ঝট করে মুখ তুলল কিশোর। কেন? কিছু জেনেছ নাকি?
চায়নার দিকে তাকিয়ে রবিন বলল, তুমিই বলো?
বোনহেডের সমস্ত বই আমি পড়েছি। একটা চেয়ারে বসল চায়না। ঝুঁকি দিয়ে মুখ থেকে চুল সরাল। একটা মেটাফিজিক্যাল মিনিকিউব। তবে এই বয়েসেও বাদিং সুটে ভালই লাগে ওকে।
হ্যাঁ, একমত হয়ে মাথা ঝকাল রবিন। দুই বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল, কাল রাতে চায়নাদের বাড়ির সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে নেমেছিল বোনহেড।
পুরো সতর্ক হয়ে গেছে কিশোর।
প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা, কিন্তু ও তো সাঁতার জানে না!
সেটা কি আর মানতে চায়, রবিন বলল। মনের খোলা অংশ না কি ঘোড়ার ডিম নিয়ে লম্বা এক লেকচার ঝেড়ে দিল। ছয় জন লোক গিয়ে তুলে এনেছে তাকে, নইলে ডুবেই মরত। ওস্তাদ শোম্যান বলতে হবে। একজন বৃদ্ধার দিকে তার নজর, মহিলা সাংঘাতিক ধনী। আরও কি করেছে, শোনো। দাঁড়াও, দেখাই, একটা ছোট নুড়ি কুড়িয়ে আনল রবিন। একটা স্ফটিককে এরকম করে হাতের তালুতে রেখে বিড়বিড় করে কি পড়ল। তারপর মহিলার কপালে ছোঁয়াল, এমনি করে, বলে চায়নার কপালে পাথরটা ছুঁইয়ে দেখিয়ে দিল কি ভাবে চুঁইয়েছে। বোনহেড। ভারি গলায় বলতে লাগল, লোকটার স্বর নকল করে বলার চেষ্টা করল রবিন, মিসেস অ্যাণ্ডারসন, আপনার সঙ্গে আগে কখনও দেখা হয়নি আমার। অথচ আমি অনুভব করছি, আমাদের পথ দুদিক থেকে এসে এক জায়গায় মিলিত হতে যাচ্ছে।
আর চুপ থাকতে পারল না চায়না। মিসেস অ্যাণ্ডারসনের অনুকরণে বলল, কি যে বলছেন, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি দেখতে পাচ্ছি, আপনার বাড়ির দেয়ালে, বোনহেডকে অনুকরণ করল। রবিন, শুগলের আঁকা একটা ছবি ঝুলছে। কাঠের ফ্রেম। ডান দিকে নিচের কোণটা ভাঙা। পড়ে গিয়েছিল হয়তো।
ঠিক, ঠিক বলেছেন! আপনি জানলেন কি করে? চায়না বলল।
ওর কপালে নুড়িটা আলতো করে চুঁইয়ে চোখ মুদল রবিন। আরও অনেক কিছুই জানি আমি। একটা অ্যানটিক সিরামিক বাউলে একটা বেড়াল ছানা ঘুমিয়ে আছে!
আশ্চর্য! অবিশ্বাস্য! চিৎকার করে উঠল চায়না, দক্ষিণাঞ্চলীয় টানে। অবশ্যই টানটা মিসেস অ্যাণ্ডারসনের।
আবার চায়নার কপালে পাথর ছোঁয়াল রবিন। উইলো গাছটাও দারুণ। বাড়ির ওপর ছায়া ফেলেছে এমন করে, মনে হচ্ছে একটা বেড়ালের ছায়া।
উইলো গাছ? বেড়ালের ছায়া? চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। নিক!
তার দিকে তাকাল না রবিন। অভিনয় চালিয়ে গেল। চায়নার দিকে মাথা সামান্য নুইয়ে বাউ করে বলল, আশা করি ঠিক ঠিক বলতে পেরেছি সব।
তাহলে এই ব্যাপার, মাথা দুলিয়ে বলল কিশোর। সে রাতে মিসেস অ্যাণ্ডারসনের বাড়িতেই গিয়েছিল নিক, তথ্য জোগাড় করতে, চায়নাদের পার্টিতে মহিলাকে তাজ্জব করে দেয়ার জন্যে।
করতে পেরেছে, রবিন বলল। গেঁথে ফেলেছে মহিলাকে। পরামর্শ দাতা হিসেবে বোনহেডকে বহাল করতে রাজি হয়ে যাবে মিসেস অ্যাণ্ডারসন। বললেই মোটা অংকের চেক লিখে দেবে।
শয়তান লোক! ঠগবাজ!
ডিলনের বাড়িতে না গিয়েও এভাবেই ভাস্কর্যটার কথা জেনেছে বোনহেড, মুসা বলল। নিশ্চয় ছবি তুলে নিয়ে এসেছিল নিক।
আমিও তখনই বুঝতে পেরেছি, ঠকাচ্ছে, রবিন বলল। মুখের ওপর বলার সাহস হয়নি। গায়ের জোরে পারতাম না। কারাত-ফারাত কিছু খাটত না ওর সঙ্গে, পিষে ফেলত আমাকে।
আমি হলাম একটা গাধা! জোরে জোরে কপালে চাপড় মারল মুসা। রামছাগল! নইলে ভুললাম কি করে!
কি ভুলেছ?
বলেছি না, কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল মুসা, বোনহেডকে আগেও কোথাও দেখেছি, শুটিং স্পটে দেখার আগে। ও হল টমি দা টু-টন টিটান! অনেক বছর আগে টিভিতে দেখতাম ওকে, রেসলার ছিল। রিঙে উঠত দুটো কাল ধাতুর টুকরো নিয়ে। গুল মারত একেকটা টুকরো একেক টন। সে জন্যেই নাম হয়েছে টু-টন। আরও চাপাবাজি করত। বুকে চাপড় মেরে বলত, আমি হলাম পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিশালী রেসলার।
ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে কিশোর। রবিন আমার বিশ্বাস, মুসা কাল রাতে ভজঘট করে দেয়ার পর আর ফোন ধরবে না ডিলন। তার সঙ্গে। যোগাযোগ করতে হলে তখন অলিংগারকে বেরোতেই হবে। যেখানে লুকিয়ে আছে ডিলন। আমরা তখন তার পিছু নেব।
১১ ?
১২ ?
১৩ ?
১৪.
দুপুর নাগাদ মুভি স্টুডিওর পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে পড়ল ব্রাউন অলিংগারের চকচকে কালো পোরশি ক্যাব্রিওলে গাড়িটা। দ্রুত চলছে। হাত নাড়ল গার্ড, জবাব। দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করলেন না প্রযোজক। বড় বেশি তাড়াহুড়া আছে মনে হয়। রাস্তায় বেরিয়ে বেপরোয়া ছুটতে শুরু করলেন। মোড়ের কাছে গতি কমালেন না। টায়ারের কর্কশ আর্তনাদ তুলে নাক ঘোরালেন গাড়ির। আতঙ্কিত হয়ে পথ ছেড়ে দিয়ে সরে যেতে লাগল অন্যান্য গাড়ি।