কি বলছ? নিক অবাক। সারারাত তো ঘরেই ছিলাম আমি। একটা মুহূর্তের জন্যে বেরোইনি।
মিথ্যে কথা! আমরা আগের বার যখন এসেছিলাম, তখনই আমাদের পিছু নিয়েছিলে!
সারারাত ঘরে ছিলাম, একই স্বরে বলল নিক। তোমরা ভুল করছ। একটি বারের জন্যেও বোনহেডের চোখ থেকে চোখ না সরিয়ে পিছু হেঁটে বেরিয়ে গেল
হচ্ছেটা কি এখানে? রেগে গিয়ে বোনহেডকে জিজ্ঞেস করল মুসা।
তোমার বোঝার সাধ্য হবে না, বলল বোনহেড। যতক্ষণ না মনের খোলা অংশকে আরও খুলতে না পারবে।
চোখ উল্টে দেয়ার উপক্রম করল কিশোর। গুঙিয়ে উঠে বলল, প্লীজ, আবার শুরু করবেন না ওসব কথা! বোনহেড চুপ করে আছে দেখে বলল, অনেকেই আমাদের কাছ থেকে কথা লুকানোর চেষ্টা করেছে, আগে। পারেনি। প্রতিবারেই ওদের কথা টেনে বের করেছি আমরা, মুখোশ খুলে দিয়েছি। আপনিও পারবেন না। বেন ডিলনের ব্যাপারে কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছেন আপনি।
শ্রাগ করল বোনহেড। হ্যাঁ-না কিছু বলল না। আরেক কথায় চলে গেল, ডিলনের এই গায়েব হয়ে যাওয়াটা যারা তাকে চেনে তাদের সবার কাছেই বেদনাদায়ক, ওর নিজের কাছেও। মনের খোলা অংশ আবিষ্কার করে ফেলেছিল সে। ও হলো ফাইন্ডিং দা পাথ নামের চমৎকার সেই ভাস্কর্যটার মত। ভাস্কর্যটার। চারটে পা, একেকটা একেক দিক নির্দেশ করছে।
ফস করে জিজ্ঞেস করে বসল মুসা, শেষ কবে আপনি ডিলনের ম্যালিবু বীচের বাড়িতে গিয়েছিলেন?
প্রশ্নটা অবাক করল বোনহেডকে। বীচের বাড়ি? কখনও যাইনি। আমি যাব কেন? ছাত্ররাই শিক্ষকের বাড়ি আসে।
তাহলে ভাস্কর্যটার কথা কি করে জানলেন? ওটা দেখেছি ডিলনের বাড়িতে। পা উল্টে পড়ে থাকতে। আসবাবপত্রের সঙ্গে সঙ্গে ওটাকেও ভাঙা হয়েছে।
ওটার কথা আপনি জানলেন কি করে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
প্রশ্নের জবাবেই যেন বিশাল থাবার মুঠো খুলল বোনহেড। হাতের তালুতে একটা বড় বেগুনী পাথর। আবার শক্ত করে বন্ধ করে ফেলল মুঠো। মূল্যবান কাঁপুনি শুরু হয়েছে স্ফটিকের। আমি যাই।
ওদেরকে বেরিয়ে যেতে বলল বোনহেড, ঘুরিয়ে। ভারি পায়ে থপথপ করে হেঁটে চলে গেল যে ঘরে মোমবাতি জ্বলছে সেদিকে। কিশোর আর মুসা দাঁড়িয়ে আছে। ওদের চারপাশের মোমগুলো নিভে যাচ্ছে একের পর এক।
ডিলনের বাড়ির ভাস্কর্যটার কথা বলে একটা ভাল কাজ করেছ, কিশোর বলল।
থাক আমার সঙ্গে, রসিকতা করে বলল মুসা, দিনে দিনে আরও কত কিছু দেখতে পাবে।
প্রায় দুটো বাজে। বোনহেডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল দুজনে। আরেকবার মুখে লাগল রাতের তাজা হাওয়া। হাই তুলতে শুরু করল ওরা। বিশ্রাম চায়, বুঝিয়ে দিল শরীর।
সোজা এখন বিছানায়, ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বলল মুসা। তোমাকে নামিয়ে দিয়েই চলে যাব।
নিকের ব্যাপারে কি করবে? ডানের সাইড-ডোর মিররের দিকে তাকিয়ে। রয়েছে কিশোর। নিক বসে আছে ওর গাড়িতে। আমরা কোথায় যাই দেখার জন্যেই বোধহয়।
রিয়ার-ভিউ মিররের দিকে তাকাল মুসা। বেশ কয়েক গজ পেছনে ছায়ায়, দাঁড়িয়ে রয়েছে নিকের ক্যামারো। মুসার মুখ থেকে হাসি চলে গেল। বেশ, পিছু নেয়ারই যদি ইচ্ছে হয়ে থাকে, নিতে দেব ব্যাটাকে। আসতে থাকুক। ক্যারাবুঙ্গায় গিয়ে খসিয়ে দেব।
হ্যাঁ, তাই কর। আরাম করে সিটে হেলান দিল কিশোর।
পেছনে, কেউ লেগেছে জানলে ভুলভাল ড্রাইভিং শুরু করে লোকে, মুসা বলল।
হু! মিররের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। নিকের গাড়ির দিকে চোখ।
যে তোমাকে ফলো করছে তার সঙ্গে খুব রহস্যময় আচরণ করা উচিত তোমার। বলতে থাকল মুসা, এই যেমন ধর, হলুদ লাইট দেখলে জোরে চালিয়ে পার হয়ে যাওয়া উচিত নয়। যদি পেছনের লোকটা পেরোতে না পারে? তোমাকে হারিয়ে ফেলবে সে। মজাটাই নষ্ট। আর ব্যাঙের মত লাফ দিয়ে বারবার লেনও বদল করা চলবে না। তোমার সঙ্গে থাকার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে দিতে বাধ্য হবে সে…
আহ, বকবকটা থামাও না! ক্যারাবুঙ্গার তিন ব্লক দূরে খসাবে।
তাহলে এখুনি গুড নাইট বলে নিতে পার নিকি মিয়াকে। একবারেই একসিলারেটর অনেকখানি চেপে ধরল মুসা। একটা ওয়ান-ওয়ে পথ ধরে ছুটল। একটা ব্লকের দিকে। ভুল পথে যাচ্ছে সে, উল্টো দিক থেকে কোন গাড়ি আসতে দেখল না, তাই রক্ষা। নইলে অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে যেতে পারত। আচমকা ডানে মোড় নিয়ে একটা গলিতে ঢুকে পড়ল। এবড়োখেবড়ো কাঁচা রাস্তায় লাফাতে শুরু করল গাড়ি। কয়েক গজ এগিয়েই ইঞ্জিন বন্ধ করে হেডলাইট নিভিয়ে দিল। মাথা নিচু করে রইল সে আর কিশোর।
আপন গতিতেই নিঃশব্দে এগিয়ে ক্যারাবুঙ্গা মোটরসের পুরানো গাড়ির সারিতে এসে ঢুকে পড়ল মুসার ভেগা। ব্রেক কষল সে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল, ব্লকটা ঘুরে আসছে নিক।
আমাদেরকে পাবে না, কিশোর বলল। খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে না পেয়ে ফিরে যাবে।
মিস্টার নিক, খিকখিক করে শয়তানী হেসে বলল মুসা, এইবার আমাদের পালা। তুমি কোথায় যাও আমরা দেখব। কোন ইন্টারেস্টিং জায়গায় নিয়ে চলো আমাদেরকে।
.
১০.
নিকের সঙ্গে চলল দুই গোয়েন্দার ইঁদুর-বেড়াল খেলা। ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে খেলাটা। রাত দুটোর বেশি। এই সময় রাস্তায় যানবাহনের ভিড় খুব কম। নিকের অগোচরে থাকার জন্যে কয়েক ব্লক দূরে থেকে অনুসরণ করতে হচ্ছে মুসাকে।
এত কষ্ট তো করছি, হাই তুলে বলল সে, ফল পেলেই হয় এখন।