লাল চুল মেয়েটাকে আদেশ দিলেন রিডার, পাম, ব্যাটার বীচ হাউসে ফোন করে দেখো। আছে হয়তো ওখানেই… মুসার দিকে চোখ পড়তে থেমে গেলেন। কী?
রোমশ হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে মুসা বলল, আমি মুসা আমান। এটা পাঠিয়েছে বাবা। আপনাকে বলতে বলে দিয়েছে, পোড়ালে এক এক করে তিনটে পরতে খুলে যাবে হাতটা। প্রথমে দেখা যাবে মাংসের রঙ, তারপর সবুজ রঙ গোটা গোটা বেরিয়ে থাকবে, সব শেষে লাল একটা স্তর, অনেকগুলো রগ বের হওয়া।
হাতটার দিকে তাকিয়ে এই প্রথম হাসি ফুটল রিডারের মুখে। চমৎকার! খুব। সুন্দর! তোমার বাবা সত্যি কাজ বোঝে। হাতটা একজন প্রোডাকশন। অ্যাসিসটেন্টকে দিয়ে আবার মুসার দিকে ফিরলেন তিনি।
স্কুল নেই আজ তোমার?
না। স্যারেরা জরুরি মিটিঙে বসবেন।
ও। তোমার বাবার কাছে শুনলাম, গাড়িটাড়ি নাকি খুব ভাল চেনো তুমি? সত্যি?
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
গুড। গাড়ির একটা বিশেষ দৃশ্য দেখাতে চাই ছবিতে। সাহায্য করতে পারবে?
আবার মাথা ঝাঁকাল মুসা। আমার এক বন্ধু আছে, নিকি পাঞ্চ, সে আর আমি মিলে যে কোন গাড়িকে কথা বলাতে পারি।
কথা বলানোর দরকার নেই আপাতত। রক্ত বের করতে পারবে?
তৃতীয়বার মাথা ঝাঁকাল মুসা।
উইশীল্ড ওয়াশার থেকে রক্ত বের করতে হবে, বললেন পরিচালক। চুঁইয়ে চুঁইয়ে হলে চলবে না, বেরোতে হবে ভলকে ভলকে, ধমনী কেটে গেলে যেমন হয়। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে, আবার কমে যায়, বেরিয়ে আসে, কমে যায়।
মুসার ঘাড়ের একটা জায়গায় আঙুল ঠেসে ধরলেন তিনি। শিউরে উঠল মুসা।
গলার শিরা কেটে গেলে কি হয়? বললেন তিনি, হৃৎপিণ্ডের রক্ত পাম্প করার সঙ্গে সঙ্গে পিচকারি দিয়ে পাম্প করার মত রক্ত বেরোয়, কমে যায়, আবার বেরোয়। তেমনি করে বের করতে হবে। প্রথমে অনেক বেশি, আস্তে আস্তে কমে আসবে। পারবে?
কি গাড়ি? শান্তকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল মুসা।
জাগুয়ার এক্স জে সিক্স।
চেহারা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে মুসা। পঁয়তাল্লিশ হাজার ডলার দাম হবে একটা গাড়ির!
পারব, জবাব দিল সে।
ও-কে। হলিউডের এক্সক্লুসিভ কারসের সঙ্গে কথা হয়ে আছে আমার। গিয়ে শুধু বলবে কি জিনিস চাও। পেয়ে যাবে। সোমবারের মধ্যে গাড়ি নিয়ে তোমাকে হাজির দেখতে চাই। পামের দিকে ফিরলেন পরিচালক।
পাচ্ছি না, মিস্টার রিডার, জানাল মেয়েটা, লাইন এনগেজ।
পামের হাত থেকে সেটটা কেড়ে নিয়ে প্রায় আছাড় দিয়ে নামিয়ে রাখলেন। রিডার। আরেক অ্যাসিসটেন্টের দিকে ফিরে ধমকের সুরে বললেন, মারফি, আমার গাড়িটা নিয়ে তুমি আর পাম চলে যাও বেনের বাড়িতে, ম্যালিবু কোর্টে। প্রয়োজন। হলে জোর খাটাবে। ইয়ার্কি পেয়েছে! কন্ট্রাক্ট সই করে এখন তালবাহানা! আর যে-ই করুক, আমি সহ্য করব না!
যাচ্ছি। চশমাটা ঠিক করে নাকের ওপর বসাতে বসাতে বলল মারফি, ম্যালিবু কোর্ট কোথায়? বীচ হাইওয়ের উত্তরে, না দক্ষিণে?
কটমট করে সহকারীর দিকে তাকালেন রিডার। মুখ দেখে মনে হচ্ছে, এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়ে টুটি ছিঁড়ে ফেলবেন মারফির। হরর ছবির আরেকটা দৃশ্য সৃষ্টি করে ফেলবেন।
আমি চিনি, মুসা বলল। ম্যালিবুর কাছেই থাকি আমরা। কোস্ট হাইওয়ের ধারে, রকি বীচে। বেন ডিলনের সাথে দেখা করার প্রবল আগ্রহ তার।
তাই? রিডার বললেন, চলে যাও। উড়িয়ে নিয়ে এস ব্যাটাকে। খসখস করে একটা কাগজে ঠিকানা লিখে মুসাকে দিয়ে বললেন, এই দুটোকেও সাথে করে নিয়ে যাও। দরকার লাগতে পারে। বাড়িটা দেখিয়ে দিয়ে, চাইলে ওদের। ঘাড়ে বাকিটা চাপিয়ে দিয়ে কেটে পড়তে পার। যাও। হাত দিয়ে যেন মাছি তাড়ালেন পরিচালক।
রিডারের লাল মার্সিডিজ ৫৬০ এস ই এল গাড়িটাতে উঠল মুসা। কোমল চামড়ায় মোড়া গদি। চমৎকার গন্ধ। সামনের সিটে বসেছে পাম আর মারফি। পেছনের সিটে মুসা। নরম গদিতে দেবে গেছে শরীর। খুব আরাম। ভেতরে নানারকম যন্ত্রপাতি, অনেক সুযোগ সুবিধে। থ্রি-লাইন টেলিফোন, টিভি, ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ার, ২০০ ওয়াটের অ্যামপ্লিফায়ার আর ডলবি সাউণ্ডযুক্ত স্টেরিও সেট, ছোট রেফ্রিজারেটর, আর আরও অনেক জিনিস। মুসার দুঃখ হচ্ছে মাত্র এক ঘণ্টার পথ যেতে হবে বলে। অনেক দূরের ইনডিয়ানায় এই গাড়িতে চড়ে যেতে পারলেই সে খুশি হত।
প্যাসিফিক কোস্টের ছোট সৈকতের কাছাকাছি এসে গতি কমাল মারফি।
দারুণ জায়গা তো, সৈকতের ধারের সুন্দর বাংলোগুলোর দিকে তাকিয়ে পাম বলল। আমার যদি এরকম একটা বাড়ি থাকত!
কোন দিকে যাব? মুসাকে জিজ্ঞেস করল মারফি।
বাঁয়ে।
মাইলখানেক চলার পর বেন ডিলনের বাড়িটা দেখা গেল। সিডার কাঠে তৈরি একতলা বাড়ি। নেমে গিয়ে বেল বাজাল মারফি। সাথে রয়েছে পাম। মুসা খানিকটা পেছনে। এতবড় একজন অভিনেতার সাথে দেখা করতে যেতে কেমন সঙ্কোচ লাগছে। কি বলবে? আপনি খুব ভাল অভিনয় করেন? অ্যাডভেঞ্চার আর থ্রিলার কাহিনী ছাড়া তো অভিনয় করেন না, হরর ছবিতে করছেন কেন হঠাৎ? টাকার জন্যে? নাহ, এসব বলা ঠিক না। তবে হ্যাঁ, গাড়ি নিয়ে আলোচনা করতে পারে ফেরার পথে।
কয়েকবার বেল বাজিয়েও সারা পেল না মারফি। দরজায় থাবা দিতে লাগল পাম। কাজ হল না। পরস্পরের দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে তাকাল দুজনে। অর্থাৎ, ব্যাপার কি?
ডোরনবে মোচড় দিল মারফি। দিয়েই অবাক হয়ে গেল। খোলা। পাল্লা খোলার আগে দ্বিধা করল। ঠেলা দিয়ে খুলে চৌকাঠে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ডাকল, বেন!