এতগুলো কথা তো বললেন, কিছুই বুঝলাম না! ফেটে পড়ার অবস্থা হয়েছে। কিশোরের।
ডিলনের স্ফটিকগুলো নিয়ে এসো। আমি ওগুলোকে টিউন করে, প্রোগ্রাম করে চ্যানেল করে দেব। দেখবে কি ঘটে।
যেন ক্যাবল টিভি টিউনিং করছে আরকি! আনমনে বিড়বিড় করল মুসা।
চোখ মুদল বোনহেড। স্ফটিকগুলো এনে দাও। বোনহেড কোথায় আছে বের করে দিচ্ছি।
স্ফটিক আপনাকে ডিলনের সন্ধান দেবে? মুসারও অসহ্য লাগতে আরম্ভ করেছে এ ধরনের কথাবার্তা। যদি না জানে? যদি মন খারাপ থাকে, কিংবা রেগে গিয়ে থাকে আপনার ওপর, বলতে না চায়?
স্ফটিক বলবেই।
এ ব্যাটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাগলা গারদে ভরা উচিত এখনই! ভাবল মুসা।
ওকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ বলে বসল কিশোর, ঠিক আছে, ওই কথা রইল। তাহলে। আমরা স্ফটিকগুলো বের করে এনে দেব আপনাকে। যত তাড়াতাড়ি পারি।
.
০৮.
গাড়িতে ফেরার পথে সারাটা রাস্তা ঘোঁৎ ঘোঁৎ করল মুসা। বোনহেডের ওপর রাগ। বলল, কিশোর, ওই ব্যাটাকে আমি চিনি। দেখেছি কোথাও। মনে করতে পারছি না। আর তুমিই বা চট করে রাজি হয়ে গেলে কি করে, স্ফটিকগুলো খুঁজে দেবে? ওরকম পাগলকে শায়েস্তা করাই তো তোমার স্বভাব। ফালতু কথা তুমি কখনই বিশ্বাস করো না।
গাড়িতে উঠল কিশোর। সীটবেল্ট বাঁধল। হেসে বলল, এখনও করি না। আমাদেরকে কিছু একটা বোঝাতে চেয়েছে পটার বোনহেড, ইঙ্গিতে। কিংবা উল্টোপাল্টা কথা বলে আমাদের কাছে কিছু লুকাতে চেয়েছে। যা-ই করুক, আমি তার সঙ্গে খেলা চালিয়ে যাব। দেখিই না কি বেরোয়। এমনও হতে পারে, ডিলনের স্ফটিকগুলো সত্যি কোন একটা সূত্র দিয়ে বসল আমাদের।
ডিলনের ম্যালিবু বীচের বাড়ি থেকে স্ফটিকগুলো খোঁজা শুরু করবে ঠিক করল দুজনে। মুসা গাড়ি চালাচ্ছে, কিশোর কথা বলছে। আপনমনেই বকর বকর করতে থাকল বোনহেড, রিডার, ডিলন আর অ্যাঞ্জেলাকে নিয়ে।
একটা চিকেন লারসেন রেস্টুরেন্টের সামনে এসে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল মুসা। সেই যে লারসেন, মুরগীর রাজা, যার কাহিনী বলা হয়েছে খাবারে বিষ বইতে। কিশোর জিজ্ঞেস করল, খিদে পেয়েছে?
না। তবে খেতে বসলে তোমার বকবকানিটা তো বন্ধ হবে। আরিব্বাপরে। বাপ, কানের পোকা নাড়িয়ে ফেলল!
চুপ হয়ে গেল কিশোর।
আবার ডিলনের বাড়িতে চলল মুসা। বাড়িতে পৌঁছে ভেতরে ঢোকার সময় আর ভাল লাগল না তার। তবু কিশোরের সঙ্গে এগোতে লাগল, অনিচ্ছাসত্ত্বেও। সাবধানে সদর দরজার দিকে এগোল দুজনে। এখনও খোলা, তালা নেই।
ভেতরে উঁকি দিল মুসা। আসবাবপত্র যেখানে যেভাবে পড়ে ছিল, সেভাবেই। রয়েছে, ঠিক করা হয়নি। করবেই বা কে?
কেউ কিছু ছোঁয়নি,বলল সে।
এগোও।
আবার এগোল দুজনে। মুসা আগে আগে। পায়ের তলায় মড়মড় করে কাচ গুড়ো হওয়া শুরু হয়েছে। কাচের গুঁড়োর সঙ্গে এখন মিহি বালি মিশেছে। সৈকত থেকে উড়ে এসে পড়েছে ওই বালি।
সাংঘাতিক একটা লড়াই হয়ে গেছে এখানে, মুসা বলল।
বুঝতে পারছি, কিশোর বলল। চোখ বোলাচ্ছে ঘরে। মেঝেতে পড়ে থাকা কাচের গুড়ো পরীক্ষা করে বলল, স্ফটিকের গুড়ো নয় এগুলো। অসমান। স্ফটিক ভাঙলে ছোট স্ফটিকই হয়ে যায় আবার।
তাহলে কোত্থেকে এল?
রহস্য।
ডিলনের স্ফটিক খুঁজতে লাগল ওরা। মুসা চলে এল শোবার ঘরে। খানিক পরে বাড়ির পেছন দিক থেকে কিশোরের ডাক শোনা গেল, দেখে যাও!
হল পেরিয়ে দৌড়ে পেছনের বেডরুমে চলে এল মুসা, এখান থেকে সাগর দেখা যায়। বুকশেলফের সামনে ঝুঁকে রয়েছে কিশোর, একটা বইয়ের দিকে তাকিয়ে।
মুসার সাড়া পেয়ে বলল, পটার বোনহেডের অটোগ্রাফ দেয়া তারই লেখা। বই। এই দেখো, অনেক বই লিখেছে, জোরে জোরে নাম পড়তে লাগল কিশোর, ইনফিনিটি স্টপস হিয়ার, আউট অভ বডি এক্সপিরিয়েনসেস, হাউ টু বি ইউর অউন বেস্ট ট্র্যাভেল এজেন্ট, দি থার্ড আই বুক অভ অপটিক্যাল ইলিউশন, গেটিং রিচ বাই গোইং ব্রোকঃ অ্যান অটোবায়োগ্রাফি।
দম নিতে কষ্ট হওয়ার অনুভূতিটা হলো আবার মুসার। বলল, স্ফটিকগুলো এখানে নেই, কিশোর। আমি গাড়িতে গিয়ে বসি। তুমি দেখে তাড়াতাড়ি চলে এসো, অন্য কোথাও খুঁজব।
গাড়িতে বসে আছে তো আছেই মুসা, কিশোরের আর দেখা নেই। তিরিশ মিনিট পরে এল সে।
এত দেরি করলে?
অ্যাঞ্জেলা ডোভারকে ফোন করেছিলাম। কিশোর জানাল, ও বলল, স্ফটিক ছাড়া কখনও কোথাও যায় না ডিলন। ভয়ের দৃশ্যগুলোতে অভিনয় করার দিন। পুষ্পরাগমণি সাথে করে নিয়ে যায় সে। রোমান্টিক দৃশ্যে নীলকান্তমণি। কোয়ার্জ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল যেদিন জ্যান্ত কবর দেয়ার দৃশ্যটা নেয়ার কথা। সেই দিনই গায়েব হয়ে গেল ডিলন। আগের দিন নাকি ওর ক্লোজ-আপ নেয়া হয়েছিল।
কোথায় যাব? মুভি স্টুডিওতে?
গোরস্থানে।
গোরস্থান! কিশোর, কি জানি কেন, আমাদের কেসগুলো খালি গিয়ে গোরস্থানে শেষ হতে চায়! অনেক কেই তো হল! এবারেরটাও কি তাই হবে? এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, একেক সময় মনে হয়, গোরস্থানে থাকার জন্যেই যেন আমাদের জন্ম হয়েছিল। আর কোথাও গেলে হয় না এখন? কাল দিনের বেলা নাহয় যাব।
রাতে যেতে ভয় লাগছে তো? হাসল কিশোর। সাথে করে স্ফটিক নিয়ে। যাওয়ার অভ্যেস ডিলনের। অ্যাঞ্জেলার কাছে জানলাম, ছোট একটা বাক্সতে ভরে ওগুলো নিয়ে যেত সে। গত বিদ্যুৎ বারেও নিয়েছিল। অ্যাঞ্জেলা বলল, শুটিঙের সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার ট্রাকগুলো এখনও গোরস্থানেই রয়েছে।