দুটো বিশ।
কয়েক মিনিট চুপচাপ থেকে আবার তাকাল মুসার দিকে। পাঞ্জা লড়ার অভ্যেস আছে?
আছে।
এসো, হয়ে যাক…
প্রডিসারের অফিসে?
অসুবিধে কি? বসে থাকার চেয়ে তো ভাল… বলতে বলতেই সামনের টেবিল থেকে কফি কাপ আর ম্যাগাজিন সরিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে লাগল। লোকটা। সোফা থেকে নেমে কার্পেটে হাঁটু গেড়ে দাঁড়িয়ে ডান কনুইটা রাখল টেবিলে, হাতের পাঞ্জা খোলা। ডাকল, এসো।
গিয়ে টেবিলের অন্য পাশে হাঁটু গেড়ে একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ডান হাতের কনুই টেবিলে রেখে চেপে ধরল লোকটার পাঞ্জা। চোখে চোখে তাকাল।
শুরু! বলল লোকটা।
লোকটা চেষ্টা করছে মুসার হাতকে চেপে শুইয়ে দিতে চাপের চোটে কাঁপছে টেবিলটা। মুসা বেশি চাপাচাপি করছে না, শক্তি ধরে রেখে সোজা করে রেখেছে হাত। লোকটার শরীরে শক্তি আছে বটে, কিন্তু বেশিক্ষণ টিকে থাকার ক্ষমতা নেই, এটা বুঝে ফেলেছে সে।
চোখ মিটমিট আরম্ভ হয়ে গেল লোকটার।
ক্লান্ত হয়ে এসেছে, ঢিল পড়ছে হাতের চাপে। সময় হয়েছে! আচমকা হাতের চাপ বাড়িয়ে দিল মুসা। হাত সোজা রাখতে পারছে না লোকটা। কয়েক সেকেণ্ড আপ্রাণ চেষ্টা করল সোজা রাখার, পারল না, কাত হয়েই যাচ্ছে, তারপর পড়ে গেল টেবিলের ওপর। ককিয়ে উঠল সে, ব্যথায় নয়, পরাজিত হওয়ায়।
ঠিক এই সময় দরজায় দেখা দিলেন অলিংগার। রিসিপশন রুমে দুজন লোককে ওই অবস্থায় দেখে দ্বিধায় পড়ে গেলেন।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল লোকটা। ছুটে গেল অলিংগারের দিকে। কত আর অপেক্ষা করবে, ব্রাউন? অনেক তো হলো।
শান্ত হও, ডট, শান্ত হও, অলিংগার বললেন। আমার সঙ্গে ঝগড়া করে কোন লাভ হবে তোমার?
ভেবে দেখো, ব্রাউন, সময় থাকতে, বলল তরুণ লোকটা। ও-ই ডট কার্লসন, বুঝতে পারল মুসা। শুনলাম, ডিলন কেটে পড়েছে। ছবিটাকে ডোবাতে চাও?
এই অভিনেতার কথাই অ্যাঞ্জেলা ডোভার বলেছিল, প্রথমে যাকে দি সাফোকেশন টু ছবির জন্যে পছন্দ করা হয়েছিল।
ডট, আমার হাতে আর কিছু নেই এখন। তুমি জানো না। পরে কথা বলব।
ইশারায় মুসাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল ডট, এ কে? ছবিতে অভিনয় করবে?
না।
আরেকবার মুসার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল ডট, আসলেই তাকে অভিনয় করতে আনা হয়েছে কিনা। শ্রাগ করল। তারপর রওনা হয়ে গেল দরজার দিকে।
ক্লান্ত দৃষ্টি ফুটেছে অলিংগারের চোখে। রক্তশূন্য লাগছে চেহারা। কেমন আছ? চমৎকার কাজ করেছ গাড়িটাতে, আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও?
ভারি দম নিয়ে প্রযোজকের পিছু পিছু তার অফিসে ঢুকল মুসা। টেবিলে পড়ে রয়েছে ওর বাবার হাতের আরেকটা কাজ। একটা চোখ, মণিতে কাঁটাচামচ গাঁথা। যতরকম বীভৎসতা সম্ভব, সব যেন ঢোকানোর চেষ্টা হয়েছে এই একটা ছবিতেই।
মিস্টার অলিংগার, বলল সে, কিডন্যাপাররা আর কোন খবর দিয়েছে?
মাথা নাড়লেন প্রযোজক। টেবিলে পড়ে থাকা তিন গোয়েন্দার কার্ডটা তুলে নিয়ে দেখতে দেখতে বললেন, তোমাদেরকে এই কেস থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম, তাই না? তাহলে ভাল হয়। কিডন্যাপাররা যা যা করতে বলে তাই আমাদের করা উচিত, তাহলে ডিলন ভাল থাকবে।
মাথা ঝাঁকাল মুসা, যেন সব বুঝতে পেরেছে। ব্যাপারটা বড়ই অদ্ভুত। সাধারণত তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করে কিডন্যাপাররা, টাকাটা নিয়ে সটকে পড়তে চায়। এরা এত দেরি করছে কেন?
কিডন্যাপারদের ব্যাপারে অনেক কিছু জানো মনে হয়? হাসির ভঙ্গিতে ঠোঁটগুলো বেঁকে গেল অলিংগারের, মুসার কাছে সেটাকে হাসি মনে হলো না।
কিডন্যাপ কেসের সমাধান আরও করেছি আমরা, কিছুটা অহঙ্কারের সঙ্গেই বলল মুসা। আপনি আমাকে সরে থাকতে বলেছেন। কিছু মনে করবেন না, আমার বন্ধু কিশোর পাশাকে নিয়ে এসেছি আজ স্টুডিওতে। ডিলনের পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। কিছু বেরিয়েও যেতে পারে।
পুরু একটা মিনিট ছাতের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন অলিংগার। তারপর মুখ। নামালেন। মুসা ভেবেছিল মানা করে দেবেন, তা করলেন না। আইডিয়াটা ভাল। তা করতে পার। পটার বোনহেডকে দিয়ে শুরু করগে। ওই লোকটাকে আমার বিশ্বাস হয় না।
পকেটের স্ফটিকটার কথা মনে পড়ে গেল মুসার। মনে হতে লাগল, আবার গরম হয়ে উঠছে ওটা।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অলিংগারের অফিস থেকে বেরিয়ে কিশোরকে খুঁজতে লাগল মুসা।
এক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করেও ওকে পেল না সে। সাউণ্ড স্টেজে নেই, ক্যাফেটেরিয়ায় নেই। কোথায় গেল? একটা সিনারি শপের মোড় ঘুরে আরেকটু হলেই ওর গায়ে হোঁচট লেগে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল মুসা। খাইছে! বলে চিৎকার। করে উঠল।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মেঝেতে চিত হয়ে আছে কিশোর পাশা। গলায় লাল, মোটা একটা গভীর ক্ষত। জবাই করলে যেমন হয়।
০৭.
একটা মুহূর্তের জন্যে বিমূঢ় হয়ে গেল মুসা। বুঝতে পারছে না দৌড়ে যাবে সাহায্য আনতে, না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে কোন অলৌকিক ক্ষমতায় আবার জ্যান্ত হয়ে ওঠে কিনা কিশোর? আরেকবার চিৎকার করে উঠল সে। বুক ভেঙে যাচ্ছে কষ্টে। কিশোরের এই পরিণতি সহ্য করতে পারছে না সে।
হাটু গেড়ে বসে পড়ল বন্ধুর বাকা হয়ে পড়ে থাকা দেহের পাশে। দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠল, কিশোর, কে তোমার এই অবস্থা করল!…বলো কে, কে করল-…ওকে আমি, আমি… মেঝেতে কিল মারতে শুরু করল সে।