আপনার ডায়লগ শুনে। হিটার আছে? রড? গ্যাট? দি ফ্রেঞ্চ অ্যাজেন্ট ছবিতে আপনি ওই ডায়লগ বলেছিলেন। ছবিটা আমি দেখেছি।
চোখ কান খোলা রাখো তুমি! সোজা হয়ে বসেছে অ্যাঞ্জেলা, বুড়ো মানুষের মত কুঁজো হয়ে বসার আর প্রয়োজন নেই। কোলের ওপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে নিয়েছে। নীল জিনস পরেছে।
আমার পরের ছবিটায় আমি পল্লির রোল করব, আশি বছর বয়েস। আশি বছর হলে কি করে মানুষ, না জানলে অভিনয় করতে পারব না, সে জন্যেই এখানে। এসেছি কাছে থেকে দেখার জন্যে। এখানে ওই বয়েসের প্রচুর মানুষ আছে। ভাল অভিনয় করতে হলে দেখার ক্ষমতা খুব ভাল থাকা লাগে। কিশোরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, অভিনয় করার কথা কখনও ভেবেছ?
ভেবেছে মানে? মুসা বলল, কিশোর তো•..
জোরে কেশে উঠল কিশোর। মুসাকে শেষ করতে দিল না কথাটা। মোটুরামের অভিনয় করেছে, এটা নিয়ে কোন গর্ব তো নেইই, শুনতেও ভাল লাগে না তার। মুসাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল, বেন ডিলনের ব্যাপারে কথা বলতে চাই আমরা, মিস ডোভার।..
মাথা নাড়ল অ্যাঞ্জেলা। ব্যক্তিগত আলোচনা হয়ে যাবে।
স্ক্যাণ্ডাল নয়, আমরা চাই তথ্য। শেষ কখন ডিলনের সঙ্গে দেখা হয়েছে আপনার? কি কি কথা হয়েছে? কেউ তাকে হুমকি দিচ্ছে এরকম কি কিছু বলেছে? আপনাদের মাঝে রোমান্টিকতা কর কি আছে না আছে জানতে চাই না আমরা।
বেঞ্চে নড়েচড়ে বসল অ্যাঞ্জেলা। আঙটি দিয়ে আলতো টোকা দিতে দিতে বলল, এক বছর ধরে আমার সঙ্গে প্রেম করার পর আমাকে ফেলে গেল সে। এটা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছিল। খুব কষ্ট পেয়েছি আমি। এতটাই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, কাজকর্মই বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম।
তারমানে, কিশোর বলল, ডিলন মারাত্মক বিপদে পড়লেও আপনার কিছু এসে যায় না?
তা বলিনি। বিপদ সে ইচ্ছে করে টেনে আনে। মানুষকে ভোগায়। আমাকে ভুগিয়েছে। সিনেমা কোম্পানিকে ভুগিয়েছে। মুসার দিকে তাকাল অ্যাঞ্জেলা, কি ব্যাপার, তুমি কিছু বলছ না?
কিশোরই তো বলছে। গাল চুলকাল মুসা। গত শুক্রবার সকালে ডিলনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ও বিপদে পড়েছে, বুঝতে পেরেছি।
অ্যাঞ্জেলা বলল, এর আগের রাতে আমি গিয়েছিলাম।
গিয়েছিলেন? ভুরু কুঁচকে তাকাল কিলোর।
ডিনার খেয়েছি ওর বাড়িতে। সেদিন সাফোকেশন ছবিতে আমার কাজ শেষ হয়েছিল। তো, আমাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছ কেন? শেষ দেখেছি বলে?
আপনি শেষ দেখেননি। শেষ দেখা হয়েছে কিডন্যাপারদের সঙ্গে।
কিডন্যাপার! আঁতকে উঠল অ্যাঞ্জেলা, অলিংগার জানে?
তার কাছেই পাঠানো হয়েছে র্যানসম নোট, মুসা জানাল।
বেচারা অলিংগার। মরেছে!
ডিলনের সঙ্গে কেমন কাটল আপনার সন্ধ্যাটা, বলবেন? অনুরোধ করল কিশোর।
চমৎকার ডিনারের ব্যবস্থা করেছিল সে। আমার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে ভুল করেছে, একথা শুনিয়ে, বোকার মত রসিকতাও করেছে। মনমেজাজ ভালই ছিল তার।
ডিলনের বন্ধু এবং শত্রুদের কথা কিছু বলবেন?
শত্রুর নাম বলতে শুরু করলে তো মাইলখানেক লম্বা হয়ে যাবে তালিকা। তবে বেশি রেগে যাওয়ার কথা ডট কার্লসনের। সাফোকেশন টু-র নায়কের রোলটা পাওয়ার কথা ছিল তার। হঠাৎ করে ডিলনকে দিয়ে দেয়া হল। ফলে রেগে গিয়ে কিছু একটা করে বসাটা ডটের পক্ষে বিচিত্র নয়। ডিলনের গুরুটাকেও সন্দেহ করতে পার। পটার বোনহেডের কথায় ওঠবস করে ডিলন। যা করতে বলে তাই করে। বোনহেডই কিছু করেছে কিনা কে জানে।
খুব একটা সাহায্য আপনি করতে পারছেন না, কিশোর বলল।
সরি। তেমন কিছু জানিই না, কি করব বল? উইগটা ঠিক করে তার ওপর হ্যাটটা বুসিয়ে দিল আবার অ্যাঞ্জেলা, পলি সাজল। বুড়ো মানুষের গলা নকল করে বলল, ঠিক আছে, কোন কিছুর প্রয়োজন পড়লে এস আবার। দেখি তখন কোন সাহায্য করতে পারি কিনা।
ওর কথার ধরনে হেসে উঠল কিশোর আর মুসা। গুডবাই জানিয়ে চলে এল নিজেদের গাড়ির কাছে। গাড়িতে উঠে কিশোর বলল, কাল স্কুল শেষ করে প্রথমেই স্টুডিওতে যাব, তোমার বাবা যা-ই বলুন।
আমি যেতে পারব না, মুসা বলল। ফারিহার সঙ্গে দেখা করতেই হবে। ও রেগে আছে।
ফারিহার সঙ্গে দুদিন পরে দেখা করলেও চলবে। কিডন্যাপারদের কাছ থেকে হয়ত পরবর্তী নির্দেশ পেয়ে গেছেন অলিংগার। তোমার কাজ তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ব্যস্ত রাখা।
ব্যস্ত রাখব? কেন?
কারণ স্টুডিওতে আমার কিছু কাজ আছে। জানিয়ে করা যাবে না কিছুতেই।
অলিংগারকে ব্যস্ত রাখবে, পরদিন প্রযোজকের অফিসের বাইরে বসার ঘরে বসে কথাটা ভাবছে মুসা, কিন্তু কিভাবে? কথা বলে, নানা রকম কৌশল করে? সেটা রবিন আর কিশোরের কাজ, ওরাই ভাল পারে। জেদ চেপে গেল তার। ওরা পারলে সে পারবে না কেন?
আপাতত অলিংগারকে ব্যস্ত রাখার জন্যে মুসার দরকার নেই। নিজের ঘরে। ব্যস্তই রয়েছেন তিনি। রিসিপশন রুমের চারপাশে চোখ বোলাল সে। আরেকজন লোক বসে আছে, অলিংগারের সঙ্গে দেখা করার জন্যে। ঘন কাল চুল, উজ্জ্বল নীল ফ্রেমের সানগ্লাস পরেছে। আঙুল দিয়ে কখনও চেয়ারের হাতলে টাট্ট বাজাচ্ছে, কখনও নিজের উরুতে। লম্বা বেশি নয়। গায়ে শক্তি আছে বোঝা যায়। মাঝে মাঝে জুতোর ডগা দিয়ে যেন ঠেলে সরানর চেষ্টা করছে পুরু কার্পেট।
বেঞ্চের ফাইট কটায়? মুসাকে জিজ্ঞেস করল লোকটা, দুটো দশে?