করো। কিশোরের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল রবিন, কিন্তু আগে ওকে কেন?
ডিলন নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন তার সঙ্গে অভিনয় করেছে সে। আরও একটা ব্যাপার আছে। মুসার বাবা বললেন ওদের মাঝে মন দেয়ানেয়ার ব্যাপার থাকতে পারে।
পারে?
হ্যাঁ। তিনি শিওর নন।
তোমার জন্যে একটা দুঃসংবাদ আছে, কিশোর, মুসা বলল। অ্যাঞ্জেলা ডোভার বড়ই মুখচোরা স্বভাবের, বাবা একথাও বলেছে। সহজে কথা বলতে চায়। না। ছদ্মবেশে থাকতে পছন্দ করে। এমন ভাবে থাকে, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। ফিল্ম স্টারদেরকে লোকে জ্বালাতন করে তো, বেরোতে পারে না। ঠিকমত…
বাধা দিয়ে কিশোর বলল, ছদ্মবেশ, না? ভাবছি, হ্যালোউইনের রাতে কোথায় ছিল সে?
.
পরদিন বিকেলের আগে সময় করতে পারল না মুসা। কমলা ভেগাটা চালিয়ে নিয়ে। এল পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে। হর্ন বাজাতে বাজাতে ডাকল, এই কিশোর! বেরোও! ওকে পেয়েছি!
ইলেকট্রনিক ওঅর্কশপ থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। কি হয়েছে?
এসো, গাড়িতে ওঠ। এইমাত্র একটা গরম খবর শোনাল বাবা। অ্যানহেইমের বাড়িতে গিয়ে ডুব দিয়েছে অ্যাঞ্জেলা ডোভার, পরের ছবিটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার জন্যে।
অ্যাঞ্জেলা ডোভার? দাঁড়াও, এখনি আসছি! বাড়ির দিকে দৌড়ে চলে গেল কিশোর। দশ মিনিট পরেই ফিরে এল পরিষ্কার জামাকাপড় পরে। নতুন জিনসের প্যান্ট, ইস্ত্রি করা অক্সফোর্ড ড্রেস শার্ট। চল। রবিনদের বাড়িতে গিয়েছিলে?
ও আসতে পারবে না। ট্যালেন্ট এজেন্সিতে জরুরী কাজ আছে, খবর পাঠিয়েছেন বার্টলেট লজ। সেখানে চলে গেছে।
হু! গুঙিয়ে উঠল কিশোর। মাঝে মাঝে মনে হয়, তিন গোয়েন্দা আর নেই আমরা, দুই গোয়েন্দা হয়ে গেছি! ওর এই ট্যালেন্ট এজেন্সির চাকরিটা বাদ দিতে পারলে ভাল হত!
ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছে। ইঞ্জিন স্টার্ট দিল মুসা। না দিলে নেই। আমরা দুজনেই চালাব। ও তো আজকাল আর তেমন সাহায্য করতে পারে না, আমাদেরকে।
তা ঠিক, কিশোর বলল, সবাইকেই একসময় একলা হয়ে যেতে হয়। সব সময় তো আর সবাই একসঙ্গে থাকতে পারে না। এমনও হতে পারে, অন্য কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তুমিও চলে যাবে। তখন একলা চলতে হবে না আমাকে? গোয়েন্দাগিরি তো ছাড়তে পারব না কোনদিনই। আনমনা হয়ে গেল সে। ওই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছেন না, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে… বেসুরো গলায় গুনগুন করে গাইতে লাগল সে।
পুরো একটা ঘন্টা চালানর পর একটা তিনতলা বাড়ির সামনের পার্কিং লটে এনে গাড়ি ঢোকাল মুসা। একটা রিটায়ারমেন্ট কমপ্লেক্স। সাইনবোর্ড লেখা রয়েছেঃ সিলভান উডস রেস্ট হোম। কিশোর বলল, সব ফাঁকিবাজি, মিথ্যে বিজ্ঞাপন। উডস মানে তো বন, এখানে বন কোথায়? সিলভানই বা কই? ওরকম। বনদেবতা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। একটা ফ্রিওয়ে শুধু দেখতে পাচ্ছি।
বন, দেখতে তো আর আসিনি আমরা, মুসা বলল, নায়িকার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। অ্যাঞ্জেলা ডোভারকে পেলেই হলো। তাকিয়ে রয়েছে কিছু লোকের দিকে, সবাই বৃদ্ধ, চুল সাদা হয়ে গেছে। এখানে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা কঠিন হবে ওর জন্যে।
মনে হয়।
খুঁজতে লাগল ওরা। গেম রুম, টিভি রুম, কার্ড রুম, সব জায়গায় উঁকি দিল। হোমের বয়স্ক বাসিন্দারা হয় চেয়ারে বসে খেলছে, কথা বলছে, নয়ত ছড়ি হাতে হাঁটাচলা করছে শরীরটাকে আরও কিছুদিন সচল রাখার অদম্য আকাঙ্ক্ষায়। যতই বুড়ো হোক, মরতে তো আর চায় না কেউ। মহিলারা কেউ সেলাইয়ের কাজ করছে, কেউ বই পড়ছে, দুএকজন গিয়ে ফুল গাছের যত্ন করছে বাগানে। কিশোর আর মুসাকে সবাই দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু কেউ কথা বলছে না। অন্তত শুরুতে বলতে চাইল না।
তারপর ডাক দিল একজন, এই ছেলেরা, শোনো।
ঘুরে তাকাল দুজনে। বড় একটা পাম গাছের ছায়ায় বেঞ্চে বসে আছে এক বৃদ্ধা। ধূসর চুল ছড়িয়ে রয়েছে বিশাল এক হ্যাঁটের নিচে। আঙুল বাকা করে ওদেরকে কাছে যেতে ইশারা করছে মহিলা। কোলের ওপর ফেলে রেখেছে হালকা একটা কম্বল, পা ঢেকে রেখেছে।
এগিয়ে গেল দুই গোয়েন্দা।
বেঞ্চে চাপড় দিয়ে ওদেরকে পাশে বসতে ইশারা করল মহিলা। মুখের চামড়ায় অসংখ্য ভাঁজ। হাসলে সেগুলো আরও বেশি কুঁচকে গম্ভীর হয়ে যায়। বলল, আমার নাম পলি। কাউকে খুঁজছ মনে হয়?
একজন মহিলাকে খুঁজছি, কিশোর বলল।
আমিও তো মহিলা, হেসে বলল পলি। দ্রুত ওঠানামা করল কয়েকবার চোখের পাতা।
রসিকতায় কিশোরও হাসল। তা তো নিশ্চয়। আরও কম বয়েসী একজনকে খুঁজছি।
অ্যানিটার কথা বলছ না তো? ওর বয়েস কম, আটষট্টি।
আমরা খুঁজছি একজন তরুণীকে, অভিনেত্রী।
সাংবাদিক-টাংবাদিক নাকি তোমরা?
না, আমরা গোয়েন্দা, জবাব দিল মুসা।
ও, গোয়েন্দা? সাথে হিটার আছে? রড? গ্যাট? পিস্তল-বন্দুকের পুরানো সব নাম ব্যবহার করল মহিলা। চোর-ডাকাতেরা এখনও কেউ কেউ এই নাম বলে, বিশেষ করে রড।
না, আমরা টিভি ডিটেকটিভ নই।
আমরা তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই, কিশোর বলল। আমাদের সাহায্য চেয়েছে একজন। তার ব্যাপারেই আলোচনা করতাম। মহিলার চোখের দিকে তাকাল সে। আপনি আমাদেরকে সাহায্য করবেন, মিস ডোভার?
হ্যাটটা ঠেলে পেছনে সরাল পলি, ধূসর উইগ সরে গিয়ে বেরিয়ে পড়ল নিচের কোকড়া কালো চুল। অল্প বয়েসীদের চুল আর বুড়ো মানুষের মুখ নিয়ে এখন। অদ্ভুত লাগছে তার চেহারা। কি করে বুঝলে? গলার স্বর তরুণ হয়ে গেল হঠাৎ করেই।