বেন, ডিলনের বাহুতে থেকে বলল ডানা, ওসব কিছু না। শুধুই কল্পনা। একটা মাছি মারারও ক্ষমতা নেই তোমার।
কাট! চেঁচিয়ে উঠলেন রিডার, অ্যাঞ্জেলা, ওকে বেন বলছ কেন?
শিওর, এ ছবি থ্যাঙ্কসগিভিডের দিনে মুক্তি দেয়া হবে, রবিন বলল।
কেন? মুসার প্রশ্ন।
তখন খেতে ব্যস্ত থাকবে সবাই। এই ঘোড়ার ডিমের দিকে নজর থাকবে না। এ একটা দেখার জিনিস হলো!
হাসতে শুরু করল কিশোর আর মুসা।
এতই খারাপ? জিজ্ঞেস করলেন আমান।
রবিন আর মুসা চুপ করে রইল। ভাবছে, জবাবটা কিশোরই দিক। কিশোরের বুদ্ধি বেশি, সিনেমার ব্যাপারে জ্ঞান বেশি, ঠিক জবাব সে-ই দিতে পারবে।
স্ক্রিপ্টের কোন হাতমাথা নেই, ডিরেক্টরের হয়ে আছে মাথা গরম, কিশোর বলল। রিডারের মত কম দামি পরিচালক বেশি বাজেটের ছবিতে হাত দিতে গেলে হবেই এরকম। মাথা গরম হয়ে গেছে লোকটার। মণ্ডে এসোই এখনও মাথা– থেকে নামেনি। ওই একই কাণ্ড করছে। আঙ্কেল, আপনি সত্যি কথাটা শুনতে চাইলেন, তাই বললাম।
ভাবনায় ফেলে দিলে আমাকে তুমি, কিশোর, আমান বললেন। কিশোর বুঝল, ভাবনায় তিনি আগেই পড়েছেন, তার সঙ্গে আলোচনা করে নিজের ধারণাগুলো মিলিয়ে দেখলেন আরকি।
সবগুলো ডেইলি দেখার পর উঠে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা। বাইরে গিয়ে লোকের সঙ্গে আলাপ করে ডিলন অপহরণ কেসের সূত্র খোঁজার ইচ্ছে। আটকালেন ওদেরকে আমান।
আজ সকালে ব্রাউন অলিংগার ফোন করেছিলেন, বললেন তিনি। তিনি ভয়। পাচ্ছেন, তোমরা তদন্ত করতে গিয়ে ডিলনের বিপদ বাড়িয়ে দেবে।
বাবা…
জানি, তোমরা খুব ভাল গোয়েন্দা, আমান বললেন বাধা দিয়ে, আমার চেয়ে তো আর বেশি জানে না কেউ। কিন্তু অলিংগার কিডন্যাপারদের নির্দেশ মেনে চলতে চান। তিনি বলেছেন টাকা গেলে তার যাবে, বাইরের কেউ, মানে তোমরা যাতে এতে নাক না গলাও। তোমাদেরকে চলে যেতে বলছি আমি। সরি।
কোন প্রতিবাদেই আর কাজ হবে না। রাজি করাতে পারবে না ওরা রাফাত আমানকে। অলিংগারের ওপরই রাগ হতে লাগল ওদের। গটমট করে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে রওনা হল মুসার গাড়িতে করে। সমস্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে লাল আলো লেপ্টে দিয়েছে যেন অস্তমিত সূর্য। অন্ধকারের দেরি নেই।
ড্রাইভিং হুইলে বসেছে মুসা, রবিন তার পাশে, হাতে রেডিও, আর পেছনের সিটে বসে বকবক করে বলে যাচ্ছে কিশোর, জ্যাক রিডার কি কি ভুল করেছেন।
হঠাৎ করেই বলল, অ্যাঞ্জেলা ডোভারের সঙ্গে ডিলনের অভিনয় তাকে জেলাস করে তুলেছে।
নাকি তুমিই জেলাস হয়ে গেছ? রসিকতা করল রবিন, সেজন্যেই রিডারকে দোষ দিচ্ছ।
রবিনের কথা কানে তুলল না কিশোর। মেয়েটার চোখে ভয়াবহ আলো ফেলে শুটিঙের ব্যবস্থা করেছেন পরিচালক, ভুল অ্যাঙ্গেলে ছবি তোলা হয়েছে।
একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি রাখল মুসা। রেডিওর ডায়াল ঘোরাচ্ছিল। রবিন, জিজ্ঞেস করল, কি হলো?
খিদে পেয়েছে, বলল মুসা। চলো, কিছু খাই।
রবিন বলল, আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে। মা বাইরে যাবে। চলো, বাড়ি গিয়েই খাব।
আধ ঘণ্টা পর রবিনদের বাড়িতে এসে রান্নাঘরে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। প্রচুর খাবার রয়েছে টেবিলে। সেগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা।
পেট কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে এলে পকেট থেকে র্যানসম নোটের কপিটা বের করে টেবিলে রাখল কিশোর।
সেটা দেখে রবিন বলল, কি মনে হয় তোমার? পরবর্তী নির্দেশ কি পাঠিয়েছে মিস্টার অলিংগারের কাছে?
ঠিক এই সময় রান্নাঘরে ঢুকলেন রবিনের বাবা। ওদেরকে দেখে হাত নেড়ে বললেন, খাও তোমরা। আমি শুধু কফি খাব। কাপ নিতে গিয়ে নোটটার ওপর। চোখ পড়ল তাঁর। জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি?
একটা কেসের তদন্ত করছি আমরা, বাবা, রবিন বলল।
কফিতে চুমুক দিতে দিতে নোটটা দেখতে লাগলেন মিলফোর্ড। হঠাৎ বললেন, রবিন, ডেইলি ভ্যারাইটি থেকে কাটা হয়েছে অক্ষরগুলো, বুঝতে পেরেছ?
আপনি শিওর? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
নিশ্চয়ই।
কফি শেষ করে উঠে চলে গেলেন মিলফোর্ড।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে আরম্ভ করেছে কিশোর। গভীর চিন্তায় ডুবে গেছে।
শান্ত কণ্ঠে আনমনেই বলতে লাগল একসময়, এর মানে জান তো? বেন। ডিলনকে যে কিডন্যাপ করেছে সে ফিল্মের সঙ্গে জড়িত। সাফোকেশন টু-র। কর্মচারী হলেও অবাক হব না।
.
০৬.
পুরো একটা মিনিট চুপ হয়ে রইল তিনজনেই। তাকিয়ে রয়েছে র্যানসম নোটটার দিকে। যেন ওটাতেই রয়েছে সমস্ত রহস্যের জবাব।
কিশোরের কথার প্রতিধ্বনি করেই যেন অবশেষে রবিন বলল, কর্মীদের কেউ বেন ডিলনকে কিডন্যাপ করেছে?
কিংবা কোন অভিনেতা, বলল কিশোর। সিনেমার লোক, এ ব্যাপারে আমি শিওর। সাধারণ চোরডাকাতে ভ্যারাইটি পড়ে না। বেশি পড়ে সিনেমার লোকে। তাদের কাছে ওটা বাইবেল। খুব জরুরী সূত্র এটা। বড় একটা ধাপ এগোলাম। T_ তার মানে, মুসা বলল, এমন একজন লোক দরকার, যার ওপর সন্দেহ হয়, যার মোটিভ আছে। আর দরকার জানা, কোথায় আটকে রাখা হয়েছে ডিলনকে।
আস্তে আস্তে, কিশোর বলল, তাড়াহুড়া করলে ভুল হয়ে যাবে। শান্ত হয়ে মাথা খাঁটিয়ে একেকটা প্রশ্নের জবাব বের করতে হবে। তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে। সাফোকেশন টু-র শ্রমিক কর্মী অভিনেতা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। জানতে হবে কে ডিলনের শত্ৰু, কে মিত্র। আমি অ্যাঞ্জেলা ডোভারকে দিয়ে শুরু করতে চাই।