অ্যাই, ভুলেই গিয়েছিলাম, মুসা বলল, আজকে হ্যালোউইন উৎসব।
কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরে বেড়াল ওরা। স্কুলের কোন ছেলের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় কিনা দেখল। দেখা গেল অনেককেই, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আছে। নানারকম সাজে সেজেছে ওরা। সাফোকেশন ছবির জোম্বি আর ভয়ঙ্কর ভূতপ্রেতগুলোর কথাই মনে করিয়ে দিল মুসার।
একটা পিজা শ্যাকে ঢুকে পিজা খেয়ে নিয়ে আবার বেরোল ওরা। একটা স্টপ। সাইনের কাছে এসে ব্রেক করল মুসা। চালু করে দিল উইণ্ডশীল্ড ওয়াইপার। এপাশ ওপাশ নড়তে লাগল ওয়াইপার আর কাঁচে লাগতে শুরু করল ঘন রক্ত।
এটা কি? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
অবিশ্বাস্য! রবিন বলল, ওই জাগুয়ারটার মত তোমার গাড়িতেও এই কাণ্ড করেছ?
হাসল মুসা। গাড়িটা ঘুরিয়ে কাচটা এমন ভঙ্গিতে রাখল, যাতে রাস্তায় চলমান। গাড়ির আলো এসে পড়ে আর চালকদের চোখে পড়ে সেই রক্ত। চমকে যেতে লাগল লোকে।
বহু মানুষকে ভয় পাইয়ে দিয়ে একসময় হেডকোয়ার্টারে ফিরে এল ওরা।
দেখো দেখো! চিৎকার করে বলল রবিন, ট্রেলারের দরজার অবস্থা!
শুধু দরজাই না, সতর্ক হয়ে উঠেছে কিশোর, জানালাগুলো ভেঙে দিয়ে গেছে!
তখনই বলেছিলাম, ট্রেলারটাকে জঞ্জালের নিচ থেকে বের করার দরকার নেই,মুসা বলল, এখন হলো তো! ঢুকল কি করে ব্যাটারা?
গেট বন্ধ হওয়ার আগেই হয়ত ঢুকে বসেছিল, অনুমান করল রবিন।
গাড়ি থেকে নেমে ট্রেলারের দিকে দৌড় দিল তিনজনে। ঢুকে পড়ল ভেতরে। মেঝেতে নামিয়ে স্কুপ করে রাখা হয়েছে তিন গোয়েন্দার ফাইলপত্র। ছড়িয়ে রয়েছে কাগজ।
ব্যাটারা এখানে কিছু খুঁজতে এসেছিল! রবিনের কণ্ঠে চাপা রাগ।
মুসার মনে হতে লাগল, দেয়ালটা বুঝি তার দিকে এগিয়ে আসছে। গুঙিয়ে। উঠল সে।
কি হলো, মুসা?
দম আটকে আসছে আমার! শ্বাস নিতে পারছি না!
দেয়ালে টেপ দিয়ে লাগান রয়েছে মেসেজ। খবরের কাগজের অক্ষর কেটে সেই একই ভাবে লিখেছে, অলিংগারের কাছে যেভাবে নোট পাঠান হয়েছিল। এগিয়ে গেল কিশোর। পড়ে দুই সহকারীর দিকে ফিরে বলল, ডিলনের ব্যাপারেই লিখেছে!
এগিয়ে এল রবিন আর মুসা। ওরাও পড়ল মেসেজটাঃ
বেন ডিলনের রক্তপাতের জন্যে তোমরা দায়ী হবে!
.
০৫.
শ্বাস নিতে পারছি না! গলায় হাত দিয়ে ঢোক গিলতে লাগল মুসা। দম আটকে যাচ্ছে আমার! নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
সব তোমার কল্পনা, দ্রুত গিয়ে ট্রেলারের দরজার পাল্লা হাঁ করে খুলে দিল। কিশোর অক্টোবর রাতের তাজা বাতাস ঢোকার জন্যে। আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে গিয়ে বুমম করে ফাটল দুটো বাজি।
এগুলো সাফ করতে কয়েক বছর লেগে যাবে! গুঙিয়ে উঠে ছড়ানো জিনিসপত্রগুলো দেখাল রবিন।
তা না হয় করলাম, কিশোর বলল। সেটা নিয়ে ভাবি না। ভাবছি আমাদের সমস্ত গোপন ফাইল দেখে গেল ব্যাটারা!
আসলে, রবিন বলল, এই হেডকোয়ার্টারে আর চলবে না আমাদের। বহু বছর তো কাটালাম পুরানো জায়গায়। এভাবে আর চলবে না। নতুন জয়িগায় নতুন নতুন যন্ত্রপাতি বসাতে হবে আমাদের, চোর-ডাকাত ঠেকানর ব্যবস্থা। রাখতে হবে…
হাঁসফাস করতে করতে মুসা বলল, কিছুই করতে হত না! ট্রেলারটা যেমন লুকান ছিল তেমনি থাকলেই ভাল হত! এত বছর তো আরামেই ছিলাম,
ছিলাম, রবিন বলল, আমাদের বয়েস কম ছিল, সেটা একটা কারণ। তেমন। মাথা ঘামাত না কেউ। ভাবত, ছেলেমানুষের খেয়াল। এখন আর আমাদেরকে দেখলে সেটা মনে করে না কেউ। সিরিয়াসলি নেয়। বড় হওয়ার এই এক যন্ত্রণা…
ব্যাটারা জানল কি করে এই কেসে কাজ করছি আমরা?
চুপ করে ভাবছে কিশোর। জবাব দিল, নিশ্চয় কিডন্যাপাররা ছবিটার সঙ্গে জড়িত সবার ওপর নজর রেখেছে। তুমিও বাদ যাওনি।
পুরানো একটা ধাতব ফাইল কেবিনেট তুলে সোজা করে রাখতে কিশোরকে সাহায্য করল মুসা। বিশ্বাস করতে পারছি না! র্যানসম নোটটা আজকেই এল। ভাবতেই পারিনি, আমাকেও ফলো করতে আরম্ভ করবে।
ঘরটাকে আগে গুছিয়ে ফেলি, কিশোর বলল। তারপর ভালমত আলোচনা করতে বসব কার চোখ পড়ল আমাদের ওপর।
শুধু আলোচনায় তো কাজ হবে না, রবিন বলল, ওদেরকে বের করতে হবে। কি করে করবে?
পরে ভাবব। এখন জরুরী, ভিডিও সিকিউরিটি সিসটেমটা দেখা।
ঠিক! তুড়ি বাজাল মুসা। ক্যামেরা! লোকগুলোর ছবি নিশ্চয় উঠে গেছে ভিডিও টেপে!
তাহলে তো কাজই হবে, রবিন বলল। কিন্তু টেপ কি অতটা লম্বা ছিল? ওরা যখন এসেছে তখনও রেকর্ড করছিল?
দেখাই যাক না। টেপ রিউইণ্ড করার বোতাম টিপে দিল কিশোর। দুই সহকারীকে জানাল, সারাক্ষণ চলার মত করে সিসটেমটা তৈরি করিনি। ওই পদ্ধতি ভাল না। অন্য ব্যবস্থা করেছি। বাইরে একটা ইলেকট্রিক আই লাগিয়েছি। হেডকোয়ার্টারের কাছাকাছি কেউ এলে চোখে পড়ে যাবে যন্ত্রটার, চালু হয়ে যাবে ভিডিও রেকর্ডার। লোকটা চলে গেলেই অফ হয়ে যাবে ক্যামকর্ডার। আবার কেউ এলে আবার চালু হয়ে যাবে..
প্লে বাটন টিপে দিল কিশোর। মনিটরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তিন জোড়া চোখ। ছবি ফুটতেই আরও ভাল করে দেখার জন্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এল ওরা। ছবি দেখে ছিটকে পেছনে সরে গেল আবার।
লম্বা, পাতলা একটা মূর্তি ঝিলমিল করতে করতে বেরিয়ে এল অন্ধকার থেকে, ভরে দিল পর্দা। ট্রেলারের দিকে এগিয়ে আসছে যেন ভেসে ভেসে, হেঁটে নয়। লম্বা কালো আলখেল্লার কোণ ধরে টানছে বাতাস, বাদুড়ের ডানার মত ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।