এই কনভেনশন রুমটাকে কেন ম্যাডহাউস বলে বুঝতে পারছে কিশোর। পাগলখানা! বিড়বিড় করল সে, ঠিক নামই দিয়েছে! বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, চলো, আইজাক হুফারকে খুঁজে বের করি।
সব চেয়ে লম্বা লাইন পড়েছে হুফারের টেবিলের সামনে। অন্য আর্টিস্টদের মত তার টেবিলে বই, ম্যাগাজিন কিংবা পোস্টার নেই বিক্রির জন্যে। ভক্তদের বাড়িয়ে দেয়া খাতায় দ্রুত একে দিচ্ছে কমিকের বিভিন্ন চরিত্র। কোন কোন ভক্ত সহানুভূতির সুরে বলছে কি করে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তার চিত্রকর্মকে, সান্ত্বনা দিচ্ছে। অনুরোধ করছে আরও ভাল কোন চরিত্র তৈরি করার জন্যে, যেটা আগেরটার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। শিল্পীর নিজের হাতে এঁকে দেয়া ছবি পেয়ে খুব খুশি ওরা।
কয়েকটা ছেলে এসে ধরল হুফারকে ক্রিমসন ফ্যান্টম এঁকে দিতে হবে, কিংবা ক্রিমসন ফ্যান্টমের বইতে সই করে দিতে হবে।
দেরি করছেন কেন! চিৎকার করে উঠল এক কিশোর, দিন, এঁকে দিন!
হুফারের নাকের কাছে ক্রিমসন ফ্যান্টমের একটা নতুন সংস্করণ দুলিয়ে বলল আরেকজন, এটাতে সই করুন।
ছেলেটার কব্জি চেপে ধরল হুফার। ক্রিমসন ফ্যান্টমে সই আমি করব না। করাতে হলে বোরামের কাছে নিয়ে যাও। আরও বিশটা চরিত্র তৈরি করেছি আমি। ওগুলোর কোনটা চাও তো বলো, এঁকে দিই।
না, ক্রিমসনেই দিতে হবে, গোঁয়ারের মত বলল অবুঝ ছেলেটা। আঁকতে পেরেছেন, সই দিতে পারবেন না কেন?
ওটা এখন বোরামের সম্পত্তি। তার কাছে যেতে বললাম তো।
না, আপনাকেই দিতে হবে।
আমি পারব না, মাথা নাড়ল হুফার। আর ওভাবে আমার নাকের সামনে ওটা নাড়তে থাকলে মেজাজ ঠিক থাকবে না বলে দিলাম। কালি ঢেলে নষ্ট করে দেব বইটা।
হাত ছেড়ে দিল হুফার।
তার নাকের কাছে বইটা নাড়তেই থাকল ছেলেটা।
ছিরে ফেলব কিন্তু, হুমকি দিল হুফার।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিরক্ত করতে সাহস করল না ছেলেটা। হাত সরিয়ে নিয়ে হারিয়ে গেল ভিড়ের ভেতরে।
দাঁড়াও আমি একবার কথা বলে আসি হুফারের সঙ্গে, ফিসফিসিয়ে দুই বন্ধুকে বলল রবিন। কনুই দিয়ে তো মেরে ভিড় ঠেলে টেবিলের দিকে এগোতে শুরু করল সে। গুঁতো খেয়ে রেগে গিয়ে তার দিকে ঘুরে জ্বলন্ত চোখে তাকাতে লাগল লোকে। পাত্তাই দিল না সে। এগোতেই থাকল। কিন্তু যে হারে ঠেলাঠেলি করছে লোকে, হুফারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে কিভাবে? কাজেই, সরাসরি পথটাই বেছে নিল সে। নাম ধরে ডাক দিল, মিস্টার হুফার?
মুখ তুলে তাকাল হুফার। আবার কি? রবিনের শুন্য হাত দেখে বলল, ও, আলতুফালতু জিনিস অন্তত সই করতে আননি। তা কি চাই? স্কেচ? কার ছবি আঁকব? তোমাকে দেখে কিন্তু লাগছে তুমি কিলার ব্রেন-এর ভক্ত। ঠিক বলেছি না? ততক্ষণে ওর কলম, কাগজের ওপর ছোটাছুটি শুরু করেছে।
আপনাকে আমি ম্যাড ডিকসনের স্টলের সামনে দেখেছিলাম। দোকানটায় বোমা ফাটার আগে। ছেলেটার হাত থেকে কমিক নিয়ে পোড়ানোর দৃশ্যটা দারুণ লেগেছিল আমার কাছে।
আচমকা ব্রেক কষার পর পিছলে গিয়ে যেন থেমে গেল হুফারের কলম।
কমিকগুলো ডাকাতি হওয়ার সময় আপনি ওখানে থাকলে খুব ভাল হত, আবার বলল রবিন। লোকটাকে হয়তো ধরে ফেলতে পারতেন। কোথায় ছিলেন তখন? লোকটাকে দেখেননি?
নীরবে রবিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হুফার। ভক্তরা বিরক্ত হতে আরম্ভ করেছে। একজন চেঁচিয়ে বলল, এই, আগেই এসে বকবক শুরু করলে কেন? লাইনে দাঁড়াও। তোমার পালা আসুক, তারপর জিজ্ঞেস করো।
হুফার, আরেকজন বলল, আমাদের দিকে নজর দিন। ওতো অনেক পরে এল। যেতে বলুন ওকে।
কোথায় ছিলাম? কারও দিকে না তাকিয়ে অবশেষে রবিনের কথার জবাব দিল হুফার। এই চিড়িয়াখানার ভেতরেই। তিক্ত কণ্ঠে কথাটা বলে আবার আঁকতে শুরু করল সে। মুখ না তুলেই বলল, যাও, ভাগ। আমি ব্যস্ত।
স্কেচটা তুলে ধরে বলল, কিলার ব্রেন কিনতে চান কেউ?
তাকিয়ে রয়েছে রবিন। এত তাড়াতাড়ি এভাবে ওর দিক থেকে নজর সরিয়ে নেবে হুফার, কল্পনাও করেনি। এরকম আচরণ করতে না পারলে যে ভক্তদের হাত থেকে রেহাই পেতে পারত না, এ কথাটা ভুলেই গিয়েছিল সে। কানের কাছে, অসংখ্য কন্ঠের চিৎকার শুনতে পেল, ছবিটা কিনতে চায় ওরা, একজন একটা দাম বললে আরেকজন তার চেয়ে বেশি আরেকটা বলছে। নীলামে চড়ানো হয়েছে যেন ওই সদ্য আঁকা ছবি। কোনমতে দুপাশের দুজনকে সরিয়ে আরেকটু আগে বাড়ল রবিন। তার একটা কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আশা করি আবার দেখা হবে আমাদের। এর বেশি আর বলতে পারল না। টেনে তাকে পেছনে নিয়ে গেল কয়েকটা হাত।
ঢুকতে যতটা কষ্ট হয়েছিল, বেরোতে তার চেয়ে কম হল না। সবাই হুড়াহুড়ি করছে টেবিলের কাছে যাওয়ার জন্যে।
ভিড়ের ঠিক বাইরেই অপেক্ষা করছে কিশোর আর মুসা। রবিন বেরোতেই মুসা জিজ্ঞেস করল, কি বলল?
কমিক ডাকাতির সময় সে নাকি এই ঘরেই ছিল, পেছনের জনতার দিকে তাকিয়ে জবাব দিল রবিন। এখন যারা আছে, তখনও হয়তো তাদের অনেকেই ছিল। তার মানে অনেকেই তাকে দেখেছে। সাক্ষ্য দিতে পারবে তারা। হাত দিয়ে ডলে পোলো শার্টটা সমান করার চেষ্টা করতে লাগল সে। ভিড়ের চাপে কুঁচকে লেহে জায়গায় জায়গায়।
হু। সরু হয়ে এল কিশোরের চোখের পাতা, তাহলে ডাকাতির পর পরই এত তাড়াতাড়ি স্টলের কাছে পৌছে গেল কি করে?