হেসে উঠল রবিন। হুফার ভাবে সে কমিকের সংস্কারক, দামি কমিকগুলো বাঁচার চেষ্টা করছে। কিন্তু ডিকসন আর মরগান ভাবছেন, সে কেবল একটা কাজেই পটু, গোলমাল বাধানো। এক সেকেন্ড ভাবল সে। বোরামের ব্যাপারটা কি? আমার তো মনে হয় না কেউ ওকে পছন্দ করে। ডুফার তাকে ঘৃণা করে, কারণ তাকে ঠকিয়েছে এডিটর। হুফারের বিশ্বাস, ক্রিমসন ফ্যান্টমের বারোটা বাজিয়েছে বোরাম। ডিকসনও দেখতে পারেন না। কমিক কেনার জন্যে এত চাপাচাপি করেও তাকে রাজি করাতে পারেনি লোকটা।
যে বইটা সে কেনার এত চেষ্টা করল, সেটাই চুরি হয়েছে, এতে কি কিছু প্রমাণিত হয়? মুসার প্রশ্ন।
হয়, জবাব দিল কিশোর। তাকে সন্দেহ হয়। তোমার ওপর হামলা চালিয়েছে বলেও সন্দেহ করতে পারতাম, যদি শরীরের গঠন মিলে যেত। বোরামকে দেখলে মনে হয় একটা বগা, ভুড়িওয়ালা বগা। আর তোমার ওপর যে হামলা চালিয়েছিল, সে স্বাস্থ্যবান লোক, পেশীবহুল শরীর।
গাড়ির ছাতের দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকাল কিশোর। তার সন্দেহের তালিকায় মিরিনা জরডানকেও যোগ করতে চাইছে। কিন্তু মেলাতে পারছে না। ডিকসনের সঙ্গে যখন দরাদরি করছে কিশোর, তখন স্টলের পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে কি অপরাধ করেছে মিরিনা?
অপরাধ জগতের এটা একটা পুরানো কৌশল। সুন্দরী একটা মেয়েকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দিয়ে লোকের নজর সেদিকে আকৃষ্ট করা, এবং সেই সুযোগে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত করে অপরাধটা ঘটিয়ে ফেলা।
কিন্তু মিরিনাকে এই অপরাধের সঙ্গে জড়াতে ভাল লাগছে না কিশোরের। ও এতে জড়িত না থাকলেই সে খুশি হয়।
কেসটা বড়ই অদ্ভুত, অবশেষে বলল কিশোর।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ডিকসন একটা কথা ঠিকই বলেছেন, সংগ্রহ-টংগ্রহ যারা করে, ওই মানুষগুলোর মাথায় আসলেই কিছুটা ছিট আছে। নইলে কমিক বুক জোগাড়ের মত একটা ছেলেমানুষীতে এত আগ্রহ কেন?
ঠিক, শুকনো গলায় বলল রবিন। চালাক হলে তো ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র জোগাড়ের মত বড়মানুষীই করত। কম্পিউটার নিয়ে পাগল হত। হাসিটা চওড়া হল তার। কিংবা পুরানো গাড়ি নিয়ে।
মুসা কিছু বলল না। তবে কিশোর টিটকারিটা হজম করল না। খোঁচা দিয়ে বলল, হ্যাঁ, কিছু কিছু মানুষের মেয়ে দেখলে পাগল হয়ে যাওয়ারও একটা বাতিক আছে।
কেসের ব্যাপারে আলোচনার আপাতত এখানেই ইতি ঘটল।
রকি বীচে পৌছে ইয়ার্ডের কাছে কিশোরকে নামিয়ে দিল মুসা।
ভেতরে ঢুকে অফিসের বারান্দায় চাচা-চাচীকে বসে থাকতে দেখল কিশোর। তাদেরকে জানাল, রাতে বাড়ি ফিরবে না। হোটেলে থাকবে। কাজ আছে। রাশেদ পাশা কিছুই বললেন না। মেরিচাচী জানতে চাইলেন, কাজটা কি। জানাল কিশোর, অবশ্যই অনেক কিছু গোপন করে, ঢেকেঢুকে। তারপর চলে এল নিজের ঘরে। পোশাক পাল্টানোর জন্যে।
আধ ঘণ্টা পরেই ইয়ার্ডে এসে পৌঁছল অন্য দুই গোয়েন্দা। পোশাক পাল্টে এসেছে। বাইরে রাত কাটাতে হবে, তাই ব্যাগে করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে। মুসার ইমপালাতে করেই চলল ওরা, কোস্ট হাইওয়ে ধরে। মুসাকে সান্তা মনিকা হয়ে যেতে বলল কিশোর।
কেন? জানতে চাইল মুসা।
ম্যাড ডিকসনের স্টলে লেখা রয়েছে, তার দোকানটা সান্তা মনিকায়, দেখনি? কিশোর বলল, ফোন বুক দেখে ঠিকানা জেনে নিয়েছি। পথেই পড়বে, বেশি ঘুরতে হবে না আমাদের। দেখেই যাই কি ধরনের বই বিক্রি হয় ওখানে।
ম্যাড ডিকসনের কমিক এমপারিয়ামটা রয়েছে পিকো বুলভারে। বাণিজ্যিক এলাকার একধারে একটা সাধারণ দোকান। দুপাশে আরও দুটো দোকান, দুটোরই করুণ চেহারা, ব্যবসা ভাল না বোঝাই যায়। একটাতে বেতের তৈরি আসবাব বিক্রি হয়, আরেকটাতে নানা ধরনের ভ্যাকিউয়াম ক্লিনার।
ডিকসনের দোকানটায় রঙের ছড়াছড়ি। ডিসপ্লে উইনডোগুলোর কাছে সঁটানো রয়েছে রঙ-বেরঙের ছবি, সবই কোন না কোন কমিকের বিচিত্র হিরোর। দরজার কাছে লাগানো রয়েছে স্টেলারা স্টারগার্লের বিশাল এক ছবি। দেখতে হুবহু মিরিনা জরডানের মত। কিংবা বলা যায় মিরিনাই দেখতে স্টেলারার মত।
বাহ, সবুজ একটা ভ্যানের পাশে গাড়ি রাখতে রাখতে বলল মূসা, দেখো, কে এসেছেন!
গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ডিকসন। দরজার দিকে নজর। দুটো ছেলে কমিক বইয়ের দুটো ভারি বাক্স নিয়ে বেরোচ্ছে। বোঝার ভারে কুঁজো হয়ে গেছে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে ডাকল কিশোর, মিস্টার ডিকসন?
আরে, তোমরা, এলোমেলো চুলে আঙুল চালালেন ম্যাড। হাতে একগাদা কমিক।
স্টলে বিক্রির জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন বুঝি, কিশোর বলল আলাপ জমানো ভঙ্গিতে। শূন্য জায়গা ভরবেন, চোরে যেগুলো খালি করে দিয়েছে?
হ্যাঁ, হাতের কমিকগুলোর দিকে তাকিয়ে জবাব সিন ডিকসন। তারপর মুখ তুলে হাসলেন। শুনলাম, বাতাসে ওড়ার কায়দা শিখে ফেলেছ? তিন তলা থেকে চত্বরে না পড়ে গিয়ে পড়েছ সুইমিং পুলে? মাথা দুলিয়ে বললেন, তোমরা গোয়েন্দাগিরির সঙ্গে সঙ্গে এসবও প্র্যাকটিস করো নাকি?
ডিকসনের হাতের দিকে তাকাল কিশোর। সবচেয়ে ওপরে কমিকের ছবি দেখল। ফ্যান ফান নাম্বার ওয়ানের আরেকটা কপি। প্রাইস স্টিকারটায় দৃষ্টি আটকে গেল তার। দাম লেখা রয়েছে দুশো পঞ্চাশ ডলার।
ঠিক এরকম একটা কমিকই চুরি হয়েছে দেখেছি, কিশোর বলল। এটার দাম তো অনেক কম। নীল বোরামের কাছে অনেক বেশি চেয়েছিলেন?