কিশোরের দিকে প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকালো বিমান বাহিনীর গার্ড। হাসি ফুটলো মুখে। বুদ্ধিমান ছেলে। এই গরমের দিনে তোমাদের গোসলটা নষ্ট করলাম বলে খারাপই লাগছে আমার। ওই ছেলেটার মাথায় গোলমাল আছে, জনির দিকে হাত তুললো সে। বেশি গোঁয়ার। এতোই যদি গোসলের শখ ছিলো, তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এলে না কেন? তাহলেই তো আমি আর কিছু বলতাম না। আমার জানা থাকতো, এই সময়ে কুকুরের চিৎকার শোনা যাবে, কিছু হৈ-হট্টগোল শুনতে পাবো। দেখতে আসতাম না।
থাক, কিছু মনে করবেন না, কিশোর বললো। আর আসব না। তাছাড়া এখানে থাকছিও না আমরা, যে জ্বালাতে আসবো। মাত্র কয়েকটা দিন, বেড়াতে এসেছি।
সো লং জানিয়ে, অনেকটা স্যালুটের ভঙ্গিতে হাত তুলে, মার্চ করে চলে গেল লোকটা।
ও ব্যাটা এখানে মরতে এলো কেন? এখনও মেনে নিতে পারছে না জনি। আমাদের গোসলটা নষ্ট করলো! গোপন কোনো ব্যাপার যদি না-ই থাকে…।
আই, চুপ করো! ওকে থামিয়ে দিলো মুসা। কিশোরের মতো সে-ও খুব লজ্জা পেয়েছে। দোষ তো ওদেরই। নোটিশ দেখার পরেও নামলো কেন পানিতে? ও কি বলে গেল শুনলে না? ওর ওপর আদেশ রয়েছে। আমাদের মতো তো আর ইস্কুলের ছাত্র নয় যে অফিসিয়াল আদেশকেও কিছু না বলে উড়িয়ে দেবে। সরকারি চাকরি করে। ইউনিফর্মের একটা দাম তো আছে।
যা, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। গা মুছে চলো এখন তোমাদের বাড়িতে। তোমার মার কাছ থেকে কিছু খাবার চেয়ে নেবো। সাঁতার কেটে সব হজম হয়ে গেছে। পরিস্থিতি সহজ করার জন্যে হাসলো সে।
কিন্তু হাসি ফোঁটানো গেল না জনির মুখে। একে তো লোকটার ব্যবহার ভালো লাগেনি, তার ওপর বন্ধুদের কাছে লজ্জা পেয়েছে। বড়মুখ করে এনেছিলো। রাগে, ক্ষোভে এখন মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।
গা মুছে কাপড় বদলাতে বদলাতে জিজ্ঞেস করলো, আমার ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি যদি নিই, আবার আসবে তো?
না, বললো কিশোর। তবে তার সাথে দেখা করতে পারলে খুশি হবো।
হুঁ! আবার চুপ হয়ে গেল জনি।
বাড়ির কাছাকাছি আসতে দেখা গেল, ভেড়ার বাচ্চা কোলে নিয়ে প্রায় ছুটে আসছে ল্যারি।
ওই যে আসছে, হেসে বললো জিনা। ছড়াকার ভুল করেছেন। ওকে নিয়েই বরং ছড়াটা লিখে ফেলা উচিত ছিলোঃ ল্যারি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব…
হেসে উঠলো সবাই।
ছড়াটা আমিও জানি, হেসে বললো ল্যারি। ম্যারি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব, ওটা তো? সুর করে দুলে দুলে ছড়া বলতে আরম্ভ করলো সে।
বাড়ি থেকে আবার বেরিয়েছো? জনি বললো।
বা-রে। মা-ই তো তোমাদের ডাকতে বললো। চায়ের সময় হয়েছে…
মোটেও ডাকতে পাঠায়নি মা। তুমি নিজেই এসেছে, মা জানে না…
না এসে কি করবো? টোখোটা পালালো। ওকে খুঁজতে খুঁজতেই না…
আমাদের কাছে চলে এসেছো? হেসে ফেললো রবিন।
আমাদের কি দোষ? বড় বড় মায়াবী চোখ মেলে রবিনের দিকে তাকালো ল্যারি। মা বললো চা হয়েছে। ভাবলাম বুঝি তোমাদের ডাকতে বলছে, তাই…
চলে এসেছে, এই তো? খুব ভালো করেছো, আদর করে তার গাল টিপে দিলো জিনা।
খুশি হয়ে উঠলো আবার ল্যারি। ভেড়ার বাচ্চাটাকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ওকে আদর করলে না? ও মন খারাপ করবে তো।
হাসতে বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো জিনা। বললো, জনি, তুমি খুব ভাগ্যবান। ইস, আমার যদি এমন একটা ভাই থাকতো!
হাসি ফুটলো জনির মুখে। খানিক আগের গোমড়া ভাবটা কেটে গেল। ল্যারির হাত ধরলো, চল, বাড়ি চল।
হাঁটতে হাঁটতে মুসা ঠাট্টা করলো, ল্যারি, তোমার বাচ্চাটা খালি পালায়, ওকে বেঁধে রাখতে পারো না?
সঙ্গে সঙ্গে জবাব এলো, রাখতাম তো। কিন্তু ও যে খুব কাঁদে। মা নেই তো, তাই।
একেবারে চুপ হয়ে গেল মুসা।
জানালা দিয়ে দলটাকে আসতে দেখে বেরিয়ে এলেন মা। এসেছো। ভালো করেছে। মেহমান এসেছে বাড়িতে। ভাবলাম, তোমরা এলে দেখা হতো। আলাপ করতে পারতে।
কে এসেছে, মা? ভুরু কোঁচকালো জনি।
জ্যাক।
জ্যাক ভাইয়া! এসেছে! খুব ভালো হয়েছে…!
কথা শুনে বেরিয়ে এলো এক সুদর্শন তরুণ। লম্বা। হাসি হাসি মুখ। দেখেই তাকে ভালো লেগে গেল তিন গোয়েন্দা আর জিনার।
হাল্লো! হেসে বললো জ্যাক। তোমাদের কথা খালার কাছে শুনলাম। দেখা হয়ে ভালো হলো। হাত মেলাতে এগিয়ে এলো সে।
এক এক করে তিন গোয়েন্দা আর জিনা হাত মেলালো। এগিয়ে এলো রাফিয়ান। জ্যাকের সামনে বসে একটা পা উঁচু করে দিলো। আরি, কুকুরটা কি করছে! অবাক হয়ে বললো সে।
হাত মেলাতে বলছে, হেসে বললো জিনা। আপনাকে পছন্দ হয়ে গেছে ওর।
৬
খেতে খেতে অনেক কথাই হলো।
শেষে বিদায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে উঠলো জ্যাক। তাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলো ছেলেমেয়েরা। টোগোকে নিয়ে ল্যারিও এলো তাদের সঙ্গে।
লম্বা লম্বা পায়ে পাহাড়ের মোড়ে হারিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রইলো ওরা। তারপর আবার ফিরে এলো বাড়িতে।
ডিম, দুধ, রুটি, মাখন আর পনির ঝুড়িতে ভরে দিলেন মা। সেগুলো নিয়ে, তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার ক্যাম্পে ফিরে চললো তিন গোয়েন্দা আর জিনা।
জনি রয়ে গেল খামারে, তার কাজ আছে। পরদিন আবার যাবে ক্যাম্পে, বলে দিলো সে।
ঢাল বেয়ে উঠছে ওরা। আগে আগে চলেছে রাফি। এই সময় কোথা থেকে যেন উড়ে এসে ফুলের ওপর বসলো বড় একটা প্রজাপতি। এরকম প্রজাপতি আর কখনও দেখেনি ওরা।