পাহাড়ের দিকে যেতে যেতে জনি বললো, যা সুন্দর জায়গা! খুব পছন্দ হবে। তোমাদের। আমিও তোমাদের সঙ্গে ক্যাম্পে থাকতে পারতাম, কিন্তু বাড়িতে অনেক কাজ।
২
সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে গোলাঘরে রেখেছে জনি। দুটো তাঁবু, দুটোই ভালো। আবহাওয়া এখন যেরকম, তেমন থাকলে এই ভাবুরও দরকার নেই। খোলা আকাশের নিচেই ঘুমাতে পারবে অভিযাত্রীরা।
জিনিসগুলোর প্রশংসা করলো তিন গোয়েন্দা আর জিনা।
একটা ঠেলাগাড়ি বের করে তাতে জিনিসগুলো তুলতে আরম্ভ করলো জনি। তার সঙ্গে হাত লাগালো তিন গোয়েন্দা আর জিনা। ল্যারিও যতোটা পারলো সাহায্য করলো ওদেরকে। চামচ থেকে শুরু করে, ফ্রাইং-প্যান, কেটলি, মোটকথা ক্যাম্পিলের যতো জিনিস দরকার, সব জোগাড় করে রেখেছে জনি।
সে বললো, ঠেলাগাড়ি পরেও নিতে পারবে। আগে জায়গা পছন্দ করো।
তার চেয়ে আরেক কাজ করা যাক, কিশোর বললো। জিনা, তুমি আর রবিন চলে যাও। জায়গা পছন্দ করো গিয়ে আমরা মালপত্র নিয়ে আসছি।
জায়গা বাছতে বেশিক্ষণ লাগলো না। ঠেলে বেরিয়ে থাকা একটা পাথরের নিচ থেকে দেখা গেল ঝর্না বইছে। স্বচ্ছ টলটলে পানি। পানি যেখানে গিয়ে পড়ে ছোট একটা ডোবামতো তৈরি করেছে, সেখানে গজিয়ে উঠেছে ঘন সবুজ গাছপালা। ওই ঝর্নার পাড়েই ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিলো ওরা।
মালপত্র সব এনে রাখা হলো জায়গামতো। কিন্তু সেরাতে আর তাঁবু ফেলার ঝামেলায় যেতে চাইলো না কেউ। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। তারা থাকবে। বাতাসও বেশ উষ্ণ। রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমালেও অসুবিধে হবে না।
খাবারের প্যাকেটগুলো খুলতে বসলো রবিন আর জিনা। রবিন ভাবছে, ভাঁড়ার করা যায় কোন জায়গাটাকে। মনে পড়লো, ঝর্নাটা যে পাথরের নিচ থেকে বেরিয়েছে, সেখানে একটা গুহা আছে। ভেতরটা বেশ ঠাণ্ডা। খাবার রাখলে সহজে নষ্ট হবে না। অন্যদেরকে বলতে তারাও একমত হলো তার সাথে।
ওদেরকে কাজেকর্মে সাহায্য করলো জনি। তার যাবার সময় হলো। বললো, রাতের খাবারের দেরি হয়ে গেছে এমনিতেই। আমি যাই। কাল দেখা হবে। ইস্, তোমাদের সঙ্গে থাকতে পারলে ভালোই হতো!…আচ্ছা, চলি।
ডবিকে নিয়ে রওনা হয়ে গেল সে। নেমে যাচ্ছে ঢাল বেয়ে। সেদিকে তাকিয়ে একবার নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো শুধু কিশোর। কিছু বললো না।
ও তোমাদের খুব ভালো বন্ধু, জিনা মন্তব্য করলো।
একমত হয়ে মাথা ঝাঁকালো তিন গোয়েন্দা।
কটা বাজে? বলে ঘড়ি দেখলো কিশোর। আরিব্বাপরে! আটটা বাজে! বুঝতেই পারিনি। তা ঘুমটুম পেয়েছে কারো?
পেয়েছে,হাই তুললো মুসা।
রবিন আর জিনা জানালো, তাদেরও ঘুম পেয়েছে। এমনকি কিছুই না বুঝে রাফিয়ানও হুফ বলে মাথা ঝাঁকালো।
ঘুমের আর দোষ কি? মুসা বললো। সারাটা দিন কি কম কষ্ট গেছে? তা ঘুমের আগে হালকা কিছু খেয়ে নিলে কেমন হয়?
আমিও একথাই ভাবছি, কিশোর বললো।
ভাঁড়ারের দায়িত্ব নিয়েছে রবিন। বললো, রুটি, মাখন আর সামান্য পনির হলেই চলবে। কি বলো? আর গোটা দুই টম্যাটো। কিছু জাম, আর, সেই সাথে এক গ্লাস করে বরফ দেয়া দুধ হলে…
চমৎকার হয়। রবিনের কথাটা শেষ করে দিলো মুসা। হাত তালি দিয়ে বললো, জবাব নেই!
বরফ পাবে কোথায়? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
তাই তো, একমুহূর্ত ভাবলো রবিন। চিন্তা নেই, তুড়ি বাজালো সে। ঝর্নার পানি যেরকম ঠাণ্ডা, তাতে বোতল চুবিয়ে রাখলেই বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে দুধ। পানি এমন ঠাণ্ডার ঠাণ্ডা, মনে হয় ফ্রিজ থেকে বের করা হয়েছে।
হালকা খাওয়া। তাড়াতাড়িই সেরে ফেললো ওরা। তার পর হলুদ ফুল ফুটে থাকা একটা বড় ঝোপ বেছে নিয়ে তার পাশে কম্বল বিছিয়ে শুয়ে পড়লো।
শোয়র সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লো মুসা। কিশোর ঘুমালো তারপর। রবিন আর জিনা শুয়ে শুয়ে কথা বললো কিছুক্ষণ, ওদেরকে সঙ্গ দিলো রাফিয়ান।
জিনা ঘুমালো। সারাদিন এতো পথ দৌড়ে এসে রাফিয়ান খুব ক্লান্ত। সেও ঘুমালো। রবিন জেগে রইলো আরও কিছুক্ষণ। অনেক তারাই ফুটেছে আকাশে। তবে তার মাঝে ঝকঝক করছে মস্ত একটা তারা, চট করে চোখে পড়ে। দেখছে আর ভাবছে রবিন, আহা, পৃথিবীটা কি সুন্দর এখানে! এরকম একটা জায়গায় যদি চিরটাকাল বাস করা যেতে
আকাশে তারার মেলা, নিচে নিঝুম ধরণী। সব কিছু নীরব, শুধু ঝর্নার একটানা বয়ে চলার কুলকুল ছাড়া। মাঝে মাঝে দূরের খামারবাড়ি থেকে ভেসে আসছে কুকুরের ডাক, বোধহয় ডবি। তারপর বাতাস যখন স্তব্ধ হয়ে গেল, সেই ডাকও শোনা গেল না আর।
কিছুক্ষণ ঘুমানোর পরই জেগে গেল রাফি। একটা কান খাড়া করলো। মৃদু একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে, মাথার ওপরে। একটা চোখ মেললো। কালো একটা বাদুড়। শূন্যে পাক খেয়ে খেয়ে নিশাচর পোকা খুঁজে বেড়াচ্ছে। আবার ঘুমিয়ে পড়লো সে।
হঠাৎ জোরালো একটা আওয়াজে সবারই ঘুম ভেঙে গেল। লাফিয়ে উঠে বসলো সবাই। নীরবতার মাঝে আওয়াজটা বড় বেশি হয়ে কানে বাজছে।
কী? জিনার প্রশ্ন।
এরোপ্লেন, জবাব দিলো কিশোর। তাকিয়ে রয়েছে পাহাড়ের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ছোট বিমানটার দিকে। নিশ্চয় ওদিকের এয়ারী থেকে এসেছে।…কটা বাজে? আরিব্বাবা, নটা পাচ! বারো ঘণ্টা ঘুমালাম।
বাজুকগে, বলে আবার শুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো মুসা। চোখ বন্ধ করে বললো, আমি আরো ঘুমাবো।
এই ওঠো, ওঠো, জোরে জোরে ঠেলা দিলো তাকে কিশোর। এলাকাটা ঘুরে দেখা দরকার। প্রজাপতির খামার দেখবে না?