টোগো, এসেছিস! আয়, আয়, এদিকে আয়! চিৎকার করে ডাকলো জনি।
আর, তোর পিঠে লিখলো কে?
ভুরু কোঁচকালো কিশোর।
লেখাটা পড়ার চেষ্টা করে পারলো না মুসা। বললো, শয়তান লোকের কাজ। বাচ্চাটাকে একা পেয়ে তার পিঠে কি লিখে দিয়েছিলো। মুছে গেছে।
ওর সাদা রঙটাই নষ্ট করে দিয়েছে, জিনা বললো জনিকে, ধুয়ে ফেলো। বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে।
দাঁড়াও! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে উঠলো কিশোর। জে আর এম-এর মতো লাগছে আমার কাছে। আর ওই দুটো অক্ষর বোধহয় আর এবং পি, না না, বি! নিচের অংশটা মুছে যাওয়ায় পি-এর মতো লাগছে।
জে এম! আর বি! উত্তেজনায় দম বন্ধ হয়ে যাবে যেন জনির। কোটর থেকে চোখ প্রায় ঠিকরে বেরোনোর অবস্থা। তার মানে কি জ্যাক ম্যানর আর রিড বেকার! কে লিখলো?
আরও অক্ষর আছে ওর পিঠে, ছোট ছোট করে লেখা! কিশোর বললো, শক্ত করে ধরে রাখা ওকে। পড়ার চেষ্টা করি। আমার বিশ্বাস জ্যাক আর রিডই ওকে দিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে। ওদের কাছেই চলে গিয়েছিলো বাচ্চাটা!
প্রায় মুছে যাওয়া অক্ষরগুলো পড়ার চেষ্টা করতে লাগলো সবাই। মোট চারটা অক্ষর আছে বলে মনে হচ্ছে। ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে এসেছে বোধহয় বাচ্চাটা, পাতার ঘষায় ঝাপসা হয়ে গেছে অক্ষর।
শব্দটা কে! দেখতে দেখতে বললো কিশোর। প্রথম অক্ষরটাকে জি. ও. সি. যা খুশি ধরা যায়। কিন্তু তৃতীয় শব্দটা ভি, কোনো সন্দেহ নেই। আমি শিওর লেখাটা কেভ, মানে গুহা। আর গুহার ভেতরেই ঢুকেছিলো টোগো। মুখ তুললো সে। তাহলে ওখানেই নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছে জ্যাক আর রিডকে আর আমরা কিনা ভাবছিলাম…তোমার বাবা কোথায়, জনি?
গোলাঘরের পেছনে পাওয়া গেল কলিউডকে। কাজ করছেন। ভেড়ার বাচ্চা আর ওটার পিঠের লেখা দেখানো হলো তাকে।
কি করবো এখন? জিজ্ঞেস করলো কিশোর। গুহায় ঢুকবো? না পুলিশকে ফোন করবেন?
পুলিশকে অবশ্যই জানানো দরকার, কলিউড বললেন। তোমরা গুহায় চলে যাও। সাথে করে দড়ি নিয়ে যাও বেশি করে। দড়িওয়ালা গুহাগুলোয় ওদেরকে রাখার সম্ভাবনা কম, কারণ ওগুলোতে প্রায়ই লোক ঢোকে দেখার জন্যে। দড়ির একমাথা ধরে সুড়ঙ্গের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে একজন। আরেক মাথা ধরে অনন্যরা ভেতরে ঢুকবে। এতে হারানোর ভয় থাকবে না। বুঝতে পেরেছে আমার কথা?
মাথা কাত করলো কিশোর। আপনি না বললেও তা-ই করতাম। তাছাড়া রাফিকে তো নিয়েই যাচ্ছি। ও অনেক সাহায্য করতে পারবে।
মাথা ঝাঁকিয়ে পুলিশে ফোন করতে চলে গেলেন কলিউড।
জনি, কিশোর বললো, জলদি গিয়ে দড়ি নিয়ে এসো। আর টর্চ, যে কটা পারো। মোমবাতি আর দেশলাইও আনবে। গুহায় ঢুকে বিপদে পড়তে চাই না।
১৭
ঝাড়-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে প্রায় দৌড়ে চলেছে দলটা। ভেড়ার বাচ্চাটা মুসার কোলে। ওটা বুঝতেই পারছে না ব্যাপারটা কি? মানুষগুলো এরকম করছে কেন? আর সেজন্যেই যেন থেকে থেকে চেঁচিয়ে উঠছে ব্যা ব্যা করে। শরীর মুচড়ে, লাথি মেরে নেমে পড়তে চাইছে কোল থেকে, কিন্তু কেউ তার আবেদন কানে তুলছে না। দরকার আছে বলেই নিয়েছে ওকে।
অবশেষে গুহায় যাবার খড়িমাটি বিছানো পথে এসে পড়লো ওরা। জুতোর ঘায়ে বিচিত্র শব্দ করে ছিটকে কিংবা গড়িয়ে পড়ছে আলগা খড়িমাটির টুকরো। ওরা এসে দাঁড়ালো প্রবেশপথের কাছে, যেটার কপালে লেখা রয়েছে সাবধানবাণী।
ভেড়ার বাচ্চাটাকে মাটিতে নামিয়ে শক্ত করে ধরে রাখলো মুসা। জিনা ডাকলো, রাফি, এদিকে আয়। শোক টোগোকে। গন্ধটা মনে রাখ। তারপর ওর পিছে পিছে যাবি, যেখানেই যায়। দেখতে না পেলে গন্ধ শুকে কে এগোবি।
অযথা এসব কথা বললো জিনা। কিভাবে অনুসরণ করতে হয় খুব ভালোই জানা আছে রাফিয়ানের। টোগোর গন্ধ তার পরিচিত, তবু জিনার কথায় আরেকবার ভেড়ার বাচ্চাটার আগা-পাশ-তলা কলো সে।
টোগোকে ছেড়ে দিলো মুসা। রাফিকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে বললো জিনা। জানে পারবে, তবু নিশ্চিত হতে চায় টোগোর গন্ধ শুকে ঠিকমতো এগোতে পারে কিনা রাফি। মাটি আর বাতাস শুকতে শুকতে প্রায় ছুটে চললো কুকুরটা। প্রথম গুহাটায় এসে ঢুকলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো জিনার দিকে।
যা যা, এগোরাফি, আদেশ দিলো জিনা। বুঝতে পারছি, টোগোর পিছু নিয়ে এই অত গুহায় তোকে ঢুকতে বলায় তোর অবাক লাগছে। কিন্তু ঢুকতে বলার কারণ আছে। আমরা জানতে চাই, বাচ্চাটা কোথায় যায়। এতো কথা বললো সে এই জন্যে, তার আশঙ্কা হচ্ছে বিরক্ত হয়ে না আবার এই মজার খেলাটা বন্ধ করে দেয় রাফি।
কিন্তু বন্ধ করলো না রাফিয়ান। আবার মাটি কলো।
সেই গুহাটায় এসে ঢুকলো সে, যেটাতে রঙের সৃষ্টি করেছে বরফের ঝাড় আর স্তম্ভ। চকচকে উজ্জ্বল রঙিন থামের মতো লাগছে কোনো কোনোটাকে। ওটা পেরিয়ে ঢুকলো আরেকটা গুহায়, যেটাতে সব চেয়ে বেশি রঙ। রামধনুর সাত রঙের বাহার দেখা যায় যেখানে। যেটাকে পরীর রাজ্য মনে হয়েছিলো জিনার। সেটা পেরিয়ে ঢুকলো আরেক গুহায়, যেখানে দড়ি ছাড়া সুড়ঙ্গ রয়েছে কয়েকটা।
এই যে, তিনটে সুড়ঙ্গ, জিনা বললো। আমার মনে হয় না, দড়িওয়ালা সুড়ঙ্গ ধরে ঢুকবে রাফি…।
তার কথা প্রমাণ করতেই যেন একটা দড়িছাড়া সুড়ঙ্গের মুখের কাছে মাটি শুঁকতে শুরু করলো রাফি। বাঁয়ের একটা পথ, যেটাতে সেদিন আচমকা ঢুকে গিয়েছিলো সে, তারপর অনেক ডাকাডাকি করে বের করে আনতে হয়েছে।