প্রজাপতির খামারে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কেউ নেই। কারো চিহ্নই নেই খামারে। এমনকি মিসেস ডেনভারও কটেজে নেই, বাইরে কোথাও গেছে। আর দুই প্রজাপতি মানবের তো এ-সময় থাকারই কথা নয়। প্রজাপতি ধরতে বেরিয়েছে।
ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল রবিন আর জিনার। দর থেকে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, একটা পাঁচ বছরের ছেলে আর একটা ভেড়ার বাচ্চাকে দেখেছে কিনা।
জবাব এলো, দেখেনি।
রেগে রয়েছে এখনও, জিনা বললো রবিনকে। দেখেছো কেমন কাটা কাটা জবাব দিলো? প্রজাপতি না খুঁজে এখন ওরাও আমাদের সাহায্য করলে কাজ হতো।
আবার আগের জায়গায় জমায়েত হলো তিন গোয়েন্দা, জিনা আর রাফি। প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে ওরা। ল্যারিকে পাওয়া যায়নি। এরপর কি করবে, এই নিয়ে আলোচনা করছে ওরা, এই সময় হঠাৎ কান খাড়া করে ফেললো রাফিয়ান। তারপর চেঁচিয়ে উঠলো উত্তেজিত হয়ে। যেন বোঝানোর চেষ্টা করছে, আমি একটা জিনিস বোধহয় পেয়েছি।
বুঝে ফেললো জিনা। চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি, কি পেয়েছিস রাফি?
কান আরও খাড়া করে ফেললো রাফিয়ান।
যা যা এগো, নির্দেশ দিলো জিনা। দেখ কি পেয়েছিস!
চলতে আরম্ভ করলো রাফিয়ান। মাঝে মাঝেই থেমে গিয়ে কান পাতে, শোনে, তারপর আবার চলে। ওরাও শোনার চেষ্টা করছে, কিন্তু কুকুরের মতো প্রখর নয় ওদের শ্রবণশক্তি। কিছুই শুনতে পেলো না।
আরি! কিশোর বললো। ও তো গুহার দিকে চলেছে! ওদিকে গেছে ল্যারি? ফার্ম থেকে অনেক দূরে, পথও খুব জটিল। কি করে এলো!
কি জানি! বুঝতে পারছি না, জিনা বললো। কিন্তু রাফির তো ভুল হওয়ার কথা নয়?
যেভাবেই যাক,মুসা বললো, সেটা পরেও জানা যাবে। এখন ছেলেটাকে খুঁজে পেলেই হয়।
মিনিটখানেক পরেই শোনা গেল একটা ক্লান্ত কণ্ঠ, টোগো টোগো! কোথায় তুই?
ল্যারিইইই! প্রায় একসঙ্গে চিৎকার করে উঠে ছুট লাগালো চারজনে।
অবশ্যই সবার আগে পৌঁছলো সেখানে রাফিয়ান। তিন গোয়েন্দা আর জিনা পৌঁছে দেখলো ছেলেটার মাথা চাটছে সে, তার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে ল্যারি। গুহার ঠিক বাইরে বসে আছে। ভেড়ার বাচ্চাটা নেই সাথে।
ল্যারি! ল্যারি! বলে চিৎকার করে ছুটে গেল জিনা। কোলে তুলে নিলো তাকে।
বাদামী চোখ মেলে সকলের দিকে তাকালো ল্যারি। মোটেই অবাক হয়নি ওদেরকে দেখে। শান্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলো যেন, টোগো পালিয়েছে। ওই ওখানে গিয়ে লুকিয়েছে। গুহাটা দেখালো সে।
গেছে, যাক, মুসা তার গাল টিপে দিয়ে বললো। তুমি যে যাওনি, এটাই বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। ঢুকলে আর কোনোদিন পাওয়া যেতো না তোমাকে।
চলো ওকে বাড়ি নিয়ে যাই, রবিন বললো।
কিন্তু জিনার কোলে থেকেই লাথি মারতে শুরু করলো ল্যারি। চিৎকার করে বললো, না, না, আমি যাবো না! টোগোকে ফেলে যাবো না! টোগো! টোগো!
শোনো, ল্যারি, বোঝনোর চেষ্টা করলো কিশোর। গুহার ভেতরে থেকে থেকে শীঘ্রি বিরক্ত হয়ে যাবে টোগো। তখন আপনাআপনিই বেরিয়ে আসবে। তোমার মা তোমার জন্যে কাঁদছেন।
কাঁদুক, সাফ জবাব দিয়ে দিলো ল্যারি। আমি টোগোকে ছাড়া যাবে না।
তোমার খিদে পায়নি? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
এই উত্তেজনার মুহূর্তেও মুসার কথায় হেসে ফেললো সবাই।
ল্যারি বললো, পেয়েছে। কিন্তু টোগোকে ছাড়া খাবো না। টোগো! টোগো! জলদি আয়। আমরা বাড়ি যাবো।
ওকে এখুনি নিয়ে যাওয়া দরকার, রবিন বললো। বাড়িতে নিশ্চয় সবার পাগল হওয়ার অবস্থা। টোগো ঢুকতে যখন পেরেছে, বেরিয়ে আসতে পারবে। জন্তুজানোয়ারের অনুভূতি খুব প্রখর। আর যদি বেরোতে না-ই পারে, দুঃখ করা ছাড়া আর কি করার আছে? দড়ি ছাড়া গুহাগুলোয় ঢোকা কোনোমতেই উচিত হবে না।
চলো, ল্যারি, জিনা বোঝালো ওকে। টোগো সময় হলেই আসবে। খেলতে গেছে তো ভেতরে। খেলা শেষ হলেই বেরিয়ে আসবে। ধীরে ধীরে গুহার কাছ থেকে সরে আসতে লাগলো সে। তোমার মা যে কাঁদছে, খারাপ লাগছে না তোমার?
লাগছে তো।
তাহলে চলো বাড়ি গিয়ে খেয়েদেয়ে টোগোকে নিতে আসবো আমরা আবার।
অবশেষে রাজি হলো ল্যারি।
খড়িমাটির পথ বেয়ে ফিরে চললো দলটা। সবাই খুশি। ল্যারিকে খুঁজে পাওয়ার উত্তেজনায় জ্যাক আর রিডের কথা ভুলেই গেছে ওরা।
ছেলেকে দেখে ছুটে এলেন মিসেস কলিউড। জিনার কোল থেকে নিয়ে নিলেন তাকে। জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে কেঁদে বললেন, কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই, ল্যারি? ওই ভেড়ার বাচ্চাটাই তোর সর্বনাশ করলো। গেল কই হতচ্ছাড়াটা!
ওকে গাল দিচ্ছো কেন? ওর খেলতে ইচ্ছে করে না? গুহার ভেতরে খেলতে গেছে।
সব শুনে শিউরে উঠলেন মিসেস কলিউড। ওই গুহায় ল্যারি ঢুকলে কি সর্বনাশ হতো সেকথা আর ভাবতে চাইলেন না তিনি।
বাবার দাও, মা, খিদে পেয়েছে, ল্যারি বললো।
সে বসলো খেতে, আর টেবিল ঘিরে সবাই বসলো তার খাওয়া দেখতে। আজ যেন ল্যারির খাওয়াটাই এক নতুন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গপগপ করে খেতে লাগলো ল্যারি। তার খাওয়া দেখেই বোঝা গেল কি প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে।
খাওয়া শেষ করেই চেয়ার থেকে নেমে পড়লো ল্যারি, আমি টোগোকে আনতে যাবো।
না না, তোমার যাবার দরকার নেই, তাড়াতাড়ি ছেলের হাত ধরলেন মা। আমি কেক বানাতে যাচ্ছি, তুমি আমার কাছে বসে থাকবে। সময় হলে আপনিই ফিরে আসবে টোগো।
সত্যিই ফিরে এলো টোগো। তিন গোয়েন্দা, জিনা আর জনি বসে কথা বলছে তখন পুকুর পাড়ে। নাচতে নাচতে চত্বরে ঢুকলো বাচ্চাটা। মানুষ দেখেই ব্যা ব্যা করে উঠলো।