হ্যাঁ, মাথা নাড়লো কিশোর। জনির মনের এই অবস্থা, এ-সময়ে তার কাছে খাবার চাইতে লজ্জাই লাগছে তার। ভাগ্যিস পয়সা দিয়ে কিনে নেয়ার ব্যবস্থা করে নিয়েছিলো, নইলে এখন আরও খারাপ লাগতো।
রবিন, তুমি আমার সাথে এসো, জনি বললো। যা যা লাগে, নিয়ে নাও।
রান্নাঘরের দিকে চলে গেল দুজনে।
খানিক পরে খাবারের ঝুড়ি নিয়ে ফিরে এলো।
জনি, কিশোর বললো, সকালটা আজ তোমার সাথেই থাকি আমরা, কি বলো? তোমার কাজে সাহায্য করবে।
তাহলে তো খুব ভালোই হয়, উজ্জ্বল হলো জনির মুখ। কাজে সাহায্যের চেয়ে এখন বেশি প্রয়োজন তার বন্ধুদের সঙ্গ। বাবাকে কথা দিয়েছিলাম আজ মুরগীর ঘরগুলো পরিষ্কার করবো। তোমরাও হাত লাগালে ডিনারের আগেই সেরে ফেলতে পারবো।
ঠিক আছে, চলো। তোমার কাজ শেষ হয়ে গেলে আমাদের সাথে বেরোতে পারবে। বিকেলে কোথাও একসাথে ঘুরতে যেতে পারবো আমরা।
মুরগীর খোয়াড়ের কাছে শুয়ে থাকতে দেখা গেল ডবিকে। সোজা তার দিকে এগিয়ে গেল রাফিয়ান। সাথী পেয়ে গিয়ে খেলা জুড়ে দিলো দুটোতে।
সারাটা সকাল কঠোর পরিশ্রম করলো ছেলেরা। জিনা ওদেরকে খোঁয়াড় পরিষ্কারের কাজে সাহায্য করতে পারলো না, ওর এসব নোংরা লাগে। সে গিয়ে জনিদের বাগানে ফুল দেখলো। কিছু গাছের মরা পাতা বাছলো। বেড়ে ওঠা পাতা কাঁচি দিয়ে হেঁটে দিলো। ফুল গাছের পরিচর্যা করতে খুব ভালো লাগে তার।
ওদের কাজও শেষ হয়েছে, এই সময় গাড়ির এঞ্জিনের শব্দ কানে এলো।
নিশ্চয় আন্টি আসছেন, কিশোর বললো। চলো, দেখি।
হাত ধুয়ে ছেলেরা এসে দেখলো, ইতিমধ্যেই যা বলার স্ত্রীকে বলে ফেলছেন মিস্টার কলিউড। শুনে জনির মা-ও উদ্বিগ্ন হলেন। বের করতে না পারলে মরবে তো! পায়ের আওয়াজ শুনে মুখ তুললেন। ও, তোমরা। আমি ভাবলাম ল্যারি।
ল্যারি? ভুরু কোঁচকালো জনি। গাড়িতেই বসিয়ে এসেছিলে নাকি?
গাড়িতে? অবাক হলেন মিসেস কলিউড। তাকে পাব কোথায় বসানোর জন্যে? আমার সঙ্গে যায়নি তো। বাড়িতেই আছে।
কই, বাড়িতে তো নেই। আমরা তো ডাবলাম তোমার সাথে গেছে।
বলিস কি! ভয় দেখা দিলো মায়ের চোখে। আমি তো ভেবেছি তোর কাছে। আছে!
আর আমরা ভেবেছি তোমার সাথে গেছে। গলা কাঁপছে জনির।
জনি, পুকুর! প্রায় কেঁদে ফেললেন মা। জলদি গিয়ে দেখ পানিতে পড়লো কিনা! ল্যারি, ল্যারি, বাপ আমার, কোথায় গেলি…! বলতে বলতে মা-ই ছুটে বেরোলেন ঘর থেকে।
মিস্টার কলিউড বললেন তিন গোয়েন্দাকে, তোমরা পাহাড়ের দিকে চলে যাও। হয়তো ভেড়ার বাচ্চাটা ছুটে গিয়েছিলো। ওটাকে খুঁজতে গিয়ে পথ হারিয়ে থাকতে পারে।
১৬
ল্যারির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে পুকুরের দিকে চলে গেল জনি। মাঝখানটা বেশ গভীর ওটার, আর ল্যারি সাঁতার জানে না।
রাফিয়ানকে নিয়ে জিনা আর তিন গোয়েন্দা ছুটলো গেটের দিকে।
খাড়া ঢাল বেয়ে ওঠার সময় এদিক ওদিক তাকালো ওরা, বার বার ডাকতে লাগলো ল্যারির নাম ধরে। কিন্তু ছেলেটার ছায়াও নেই। কেন যেন কিশোরের মনে হচ্ছে, ফার্মে নেই ল্যারি। ভেড়ার বাচ্চাটাই হারিয়েছিলো, তাকে খুঁজতে খুঁজতে দূরে কোথাও চলে গেছে সে।
আমাদের ক্যাম্পে হয়তো গিয়ে বসে আছে, মুসা বললো। ওখানে যাবার খুব ইচ্ছে ওর, দেখলাম সেদিন।
গিয়ে থাকলে তো ভালোই, কিশোর বললো। আমার মনে হয় না। একা একা অতদূরে যায়নি সে কথনও। চেনার কথা নয়।
কি যে শুরু হলো আজ! খালি লোক হারানোর খবর শুনছি! জিনা বললো। প্রথমে গেল রিড আর জ্যাক, কোথায় আছে কেউ জানে না। এখন ল্যারি নিখোঁজ!
কোনো ছুটিই কি আরামে কাটাতে পারবো না আমরা? রবিনের প্রশ্ন। যেখানেই যাই, উত্তেজনা আর রহস্য যেন আমাদের পায়ে পায়ে গিয়ে হাজির।
খালি উত্তেজনা আর রহস্য হলে তো কোনো কথা ছিলো না, মুসা বললো। বিপদ আসে যে! সেটাই মাঝে মাঝে অসহ্য লাগে।
ক্যাম্পে এসে পৌঁছলো ওরা। ল্যারি আর টোগোর ছায়াও নেই।
এবার কোথায় যাই? জিনা বললো।
যাবো যেখানেই থোক, মুসা বললো। বলা যায় না কতোক্ষণ লাগবে খুঁজতে। এক কাজ করা যাক, কিছু মুখে দিয়ে নিই। খালি পেটে খুঁজতে বেরিয়ে আমরাও সুবিধে করতে পারবো না।
কথাটা মন্দ বলোনি। কিভাবে কোথায় খুঁজব, ইতিমধ্যে একটা প্ল্যানও করে ফেলা যাবে, একমত হলো কিশোর।
খাবার, অর্থাৎ শুধু স্যান্ডউইচ তৈরি করতে বসলো জিনা আর রবিন। হাত কাঁপছে জিনার। কোনো জিনিসই ঠিকমতো ধরে রাখতে পারছে না। বললো, গেল কোথায় ছেলেটা! কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়, আল্লাহ না করুক! সারা সকাল ধরে নিখোঁজ!
স্যান্ডউইচ তৈরি হলো।
রবিন ডাকলো, এসো, বসে যাও। তা কি ঠিক করলে? কিভাবে কোথায় খুঁজবো?
আলাদা হয়ে ছড়িয়ে পড়বো আমরা, কিশোর একটা স্যান্ডউইচ হাতে তুলে নিলো। কিছু টম্যাটো আর গাজর নিয়ে পকেটে ভরলো। পাহাড়ের আশেপাশে খুঁজবো। একটু পর পরই ল্যারির নাম ধরে ডাকবো। তোমরা যাবে পাহাড়ের ওই দিকটায়, রবিন আর জিনাকে বললো সে। একজন খুঁজতে খুঁজতে ওপর দিকে উঠবে, আরেকজন নামবে। এই পাশটায় খুঁজবো আমি আর মুসা, একইভাবে। তারপর আমরা দুজন চলে যাবো প্রজাপতির খামারে। ওখানেও যেতে পারে।
স্যান্ডউইচ হাতে নিয়েই উঠে পড়লো ওরা। দুই দল চলে গেল দুদিকে। রাফি একবার গেল এদলের কাছে, আরেকবার দলের কাছে। এমনি করে সারা পাহাড়ময় ছুটে বেড়াতে লাগলো সে। একটা কাজ পাওয়া গেছে। সে-ও বুকে গেছে, ল্যারি হারিয়েছে। ছেলেটা আর টোগোর গন্ধ তার চেনা। বাতাস কে সেই গন্ধ বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে।