দ্রুত ঘরের দিকে রওনা হলেন কলিউড। টেলিফোন করলেন থানায়। তারপর রিসিভার রেখে দিয়ে বললেন, ওরা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে। টেডকে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছে। আধ ঘণ্টা পর এখানে ফোন করবে বললো।
ওই আধ ঘণ্টা যেন আর কাটতেই চাইলো না। বার বার ঘড়ি দেখছে কিশোর। স্থির হয়ে বসতে পারছে না কেউই। সব চেয়ে বেশি অস্থির হয়ে আছে জনি। ল্যারি আর তার ভেড়ার বাচ্চাটাকে এতোক্ষণে একবারও দেখা গেল না। গেল কোথায়?—অবাক হয়ে ভাবলো জিনা।
টেলিফোনের শব্দ যেন বোমা ফাটালো ঘরে, খুব জোরে বেজেছে বলে মনে হলো ওদের কাছে। প্রায় ছুটে গিয়ে রিসিভার তুললেন কলিউড। হ্যাঁ হ্যাঁ, বলছি…খবর কি?…ও, হ্যাঁ…হ্যাঁ… রিসিভার কানে ঠেসে ধরেছেন তিনি। তাই নকি?…থ্যাঙ্ক ইউ। গুড-বাই।
রিসিভার নামিয়ে রেখে ছেলেমেয়েদের দিকে ফিরলেন তিনি।
জ্যাক ভাইয়া চুরি করেনি, তাই বললো না? জনি জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ।
হাত তালি দিয়ে বাচ্চা ছেলের মতো লাফাতে শুরু করলো জনি। বলেছিলাম ! বলেছিলাম না! ও চোর হতেই পারে না, হতেই পারে না…
খারাপ খবরও আছে, বাবা বললেন।
কী? থমকে গেল জনি।
টেড স্বীকার করেছে, কলিউড বললেন, প্লেন চুরি করতেই এসেছিলো চারজন লোক। ওদের দুজন খুব ভালো পাইলট। বিদেশী। অন্য দুজন সাধারণ অপরাধী, ওদেরকে আনা হয়েছে ঝড়ের রাতে বিড় আর জ্যাককে কিডন্যাপ করার জন্যে। ওদেরকে বেহুশ করে ধরে এনে এয়ারফীন্ডের বাইরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে কোথাও। ওদেরকে সরিয়ে ফেলার পর দুই পাইলট গিয়ে প্লেন নিয়ে উড়ে গেছে। এয়ারফীন্ডের লোকেরা টের পেলো যখন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তারমানে, সাগরে পড়ে যারা মারা গেছে, তারা রিড আর জ্যাক নয়, ওই দুজন বিদেশী পাইলট? কিশোর বললো।
হ্যাঁ। তবে ওদের জন্যে ভাবছি না আমি। আমার উদ্বেগ রিড আর জ্যাককে নিয়ে। ওদেরকে কোথায় লুকানো হয়েছে, টেড জানে না। তাকে বলা হয়নি। তাকে টাকা দেয়নি, কারণ প্লেন দুটো সাগরে পড়ে গেছে, তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
পাইলট দুজন মরেছে, বাবার উদ্বেগের কারণ বুঝে উদ্বিগ্ন হলো জনিও, আর চোর দুটোও নিশ্চয় পালিয়েছে! এমন কোথাও রেখে গেছে বন্দিদেরকে, যেটা কোনোদিনই জানা যাবে না!
ঠিক তাই, বাবা বললেন। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুজনকে খুঁজে বের করতে হবে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে অনেক, অনেক কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয় ওদের। হাত-পা বাঁধা থাকলে, খাবার আর পানি না পেলে মরে যাবে। চোর দুটো যদি পালিয়ে থাকে কে ওদেরকে খাবার দিয়ে আসবে?
আতঙ্কিত হয়ে বললো জনি, ওদেরকে খুঁজে বের করতেই হবে, বাবা!
কিন্তু কোথায় খুঁজতে হবে জানি না আমরা। পুলিশও জানে না।
বিড়বিড় করে কি বললো কিশোর, বোঝা গেল না। নিচের ঠোঁটে ঘনঘন চিমটি কাটতে শুরু করলো সে।
১৫
থমথমে নীরবতা। কেউ জানে না কোথায় খুঁজতে হবে। কথাটা যেন প্রচণ্ড আঘাত করে স্তব্ধ করে দিয়েছে সবাইকে। সবার মনেই এক প্রশ্নঃ কোথায় আছে রিড আর জ্যাক?
এতো সহজে কজা হয়ে গেল দুজনে? মুসা মুখ খুললো। নিশ্চয় এয়ারফীল্ডে বিশ্বাসঘাতক রয়েছে, চোরগুলোকে সাহায্য করেছে যে।
থাকতে পারে, কলিউড বললেন। খুব ধীরেসুস্থে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে এই কাজ করেছে। নিশ্চয় নতুন ধরনের কিছু ছিলো প্লেনের ভেতর, যেগুলোর নকশার জন্যেই প্লেন চুরি করেছিলো বিদেশী ওই পাইলটেরা। পালিয়ে তো প্রায় গিয়েই ছিলো। ওদের কপাল খারাপ, পড়লো ঝড়ের মুখে।
ওরা ভেবেছিলো, জিনা বললো, ঝড়র সময় চুরি করাটাই ভালো। আন্দাজ ঠিকই করেছিলো। তখন ওদেরকে পেন চুরি করতে বাধা দিতে আসেনি কেউ। গার্ডেরা নিশ্চয় গিয়ে সবাই ঘরে ঢুকে বসেছিলো।
আমার অবাক লাগছে, কিশোর বললো, এতো কিছু ঘটে গেল ডাউসন আল ডরির নাকের ডগা দিয়ে, অথচ ওরা কিছুই জানলো না?
প্রজাপতি ছাড়া ওদের মাথায় আর কিছু নেই, বিরক্ত গলায় বললো জনি। পুলিশ সহজে ছাড়বে না ওদেরকে। এতো বেকুব যে মানুষ হয়, না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।
এখন কথা হলো, কুটি করলো কিশোর, আমরা কি করতে পারি? এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে তো ইচ্ছে করছে না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কলিউডের দিকে তাকালো সে।
তোমরা আর কি করবে? তিনি বললেন। পুলিশের কাছে খবর এসেছে, দুজন লোক খুব দ্রুত একটা ভ্যান চালিয়ে চলে গেছে। ওদের গতিবিধি সন্দেহজনক ঠেকেছে দুচারজন পথচারীর কাছে। গাড়ির নম্বরও টুকে নিয়েছে ওরা। হতে পারে চোরদুটোই। ওদেরকে যদি পুলিশ ধরে ফেলে, জ্যাক আর রিড কোথায় আছে জানা যাবে। আর তো কোনো উপায় দেখি না।
হতাশায় গুঙিয়ে উঠলো কেউ কেউ। কিছুই করার নেই ওদের। এখানে মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে থাকা আদিম প্রকৃতিতে কোথায় খুঁজবে দুজন বন্দি মানুষকে? খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার চেয়েও কঠিন কাজ, প্রায় অসম্ভব।
এখানে বসে বসে ভাবলে তো আর সমস্যার সমাধান হবে না, উঠলেন মিস্টার কলিউড। আমি কাজে যাই। তোর মা কোথায়, জনি?
বাজার করতে গেছে, ঘড়ির দিকে তাকালো জনি। ডিনারের আগেই ফিরবে।
ল্যারিটাও কি ওর সঙ্গে গেল নাকি? ওর কোনো সাড়াশব্দই নেই। বাচ্চাটাকেও নিশ্চয় নিয়ে গেছে?
ও-কি ওটাকে ছাড়া নড়ে নাকি?
হুঁ! বেরিয়ে গেলেন কলিউড।
তিন গোয়েন্দা আর জিনার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো জনির, আরে, ভুলেই গিয়েছিলাম! তোমাদের নিশ্চয় খাবারে টান পড়েছে?