ভেতরে ঢুকলো ওরা। সামনে এগোলো। কোথায় যেন ঘেউ ঘেউ করে উঠলো একটা কুকুর। বাড়ির এককোণ ঘূরে ছুটে বেরিয়ে এলো একটা ছোট জীব। ধবধবে সাদা।
খাইছে! দারুণ সুন্দর ভেড়ার বাচ্চা তো! মুসা বললো।
এই রাফি, চুপ! ধমক দিয়ে বললো জিনা। কিছু বলবি না ওটাকে।
বাচ্চাটার পিছে পিছে বেরোলো একটা বাচ্চা ছেলে। বয়েস পাঁচের বেশি হবে। লালচে কোঁকড়া চুল, বড় বড় বাদামী চোখ। ওদেরকে দেখে থমকে দাঁড়ালো।
তোমরা কারা? জিজ্ঞেস করলো সে।
আমরা জনির বন্ধু, হেসে জবাব দিলো কিশোর। তুমি কে?
আমি ল্যারি। আর ও, ভেড়ার বাচ্চাটাকে দেখিয়ে বললো ছেলেটা, ও টোগো। খুব দুষ্টু।
তাই নাকি? রবিন বললো। খুব সুন্দর তোমার বাচ্চাটা।
সেজন্যেই তো ওকে আমি এতো ভালোবাসি। এই টোগো, আয় আয়, আমার কাছে আয়। বাচ্চাটা এগিয়ে এলে ওটাকে ধরে কোলে তুলে নিলো ল্যারি। তা তোমরা ভাইয়ার কাছে এসেছে বুঝি?।
জনি তোমার ভাই? মুসা বললো। হ্যাঁ, তার কাছেই এসেছি। কোথায় ও?।
ওখানে, হাত তুলে মস্ত গোলাঘরটা দেখালো ল্যারি। ডবিও আছে সাথে। যাও না, গেলেই দেখা হবে।
ভেড়ার বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকে চলে গেল ল্যারি।
ভেড়াটার যেমন লেলাম, ছেলেটার তেমনি গাল। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে, জিনা বললো।
অন্য তিনজনেও মাথা ঝাঁকালো। এমনকি রাফিয়ানও বলে উঠলো, হুফ! গোলাঘরের কাছে এসে গলা চড়িয়ে ডাকলো কিশোর, জনি! জঅনি?
বেরিয়ে এলো ওদেরই বয়েসী একটা ছেলে। সাথে একটা কুকুর। ওদেরকে দেখেই দুহাত তুলে চিৎকার করতে করতে ছুটে এলো জনি, এই যে, তিন গোয়েন্দা, এসে পড়েছে! আরি, জিনাও! আবার রাফিও! এসো এসো। ছুটিটা ভালোই কাটবে এবার আমি তো সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি। ভাবছি এই আসছে, এই আসহো!…আরি আরি, ডবি, তুই আবার যাচ্ছিস কোথায়? আরে ও তো রাফি। তোরও বন্ধু।
ঘাড়ের নোম খাড়া হয়ে গেছে রাফিয়ানের। মৃদু গরগর করছে। তার মাথায় চাপড় দিয়ে জিনা বললো, হয়েছে, আর রাগতে হবে না। ও ডবি। ওদের এখানেই বেড়াতে এসেছি আমরা।
দুটো কুকুরের ভাব হতে সময় লাগলো না। জিনা বললো জনিকে, তোমার ভাইটা কিন্তু খুব সুন্দর। ভেড়ার বাচ্চাটাও।
হেসে উঠলো জনি। আর বলো না। টোগোকে নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত ও। কিছুতেই চোখের আড়াল করতে চায় না। এসো, বাড়িতে এসো।
মায়ের সঙ্গে বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিলো জনি।
তোমাদের কথা রোজই বলে জনি, হেসে বললেন মহিলা। বলেছে এখানে নাকি ছুটি কাটাবে। এসেছো, ভালো করেছে। কোনো অসুবিধে হবে না। তবু, কম্বল সব রেডি করে রেখেছে তোমাদের জন্যে ও। খাওয়ারও অসুবিধে হবে না। দুধ, ডিম, রুটি, মাখন, সব পাবে। যখন যা দরকার, চাইবে, লজ্জা করবে না।
ঘরের ভেতরে ছোটাছুটির শব্দ শোনা গেল। ওই যে, আবার শুরু করেছে! দুটোর জ্বালায়… ঘরের দিকে ফিরে চিৎকার করে মহিলা বললেন, এই ল্যারি, চুপ করলি! ভেড়ার বাচ্চাটাকে নিয়ে আবার ঢুকেছিস ঘরে! কতোবার না মানা করেছি, ওসব নিয়ে ঘরে ঢুকবি না। আবার মেহমানদের দিকে ফিরলেন তিনি। বুঝলে, কুকুর-বেড়াল আমার খারাপ লাগে না। কিন্তু ছাগল-ভেড়া একটুও পছন্দ না। কত বলি ওকে, ওটা ফেলে দিয়ে একটা কুকুরের বাচ্চা পোষ, শোনেই না ছেলেটা। টোগো টোগো করে পাগল।
মা, জনি বললো, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাই বলবে শুধু? চা-টা খাওয়াতে হবে না ওদেরকে?
ও, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। এসো, এসো তোমরা। ভেতরে এসো।
খাবারের বহর দেখে আফসোস করলো মুসা, হায় হায়, এতো! এমন জানলে দুপুরে খেতামই না।
না না, এমন আর কি করতে পারলাম, জনির মা বললেন। তাড়াহুড়ো করে করেছি। জনি, তুই খাওয়া ওদের। দেখিস, কোনো কিছু যেন বাকি না থাকে। আমার কাজ পড়ে আছে…
ঠিক আছে, ঠিক আছে, ভদ্রতা করে বললো কিশোর। আমরা নিজেরাই নিয়ে খেতে পারবো।
হ্যাঁ, খাও। নিজের বাড়ি মনে করবে। কোনো লজ্জা করবে না। চলে গেলেন মহিলা।
টোগো আর ল্যারিও বসেছে ওদের সঙ্গে। পারলে ভেড়ার বাচ্চাটাকে টেবিলেই তুলে দিতো ল্যারি, বড় ভাইয়ের ভয়ে পারছে না। কোলে নিয়ে বসেছে।
মাংসের বড়াগুলো দেখিয়ে জনি বললো, ওগুলো কি দিয়ে তৈরি হয়েছে, জানতে পারলে মোটেও খুশি হবে না টোগো। হাসলো সে। ওর দাদার মাংস দিয়ে।
তাড়াতাড়ি টোগোকে মাটিতে নামিয়ে দিলো ল্যারি। ভয়, কি জানি কোনোভাবে দাদার মাংসের অবস্থা দেখে যদি ভয় পেয়ে যায় ভেড়ার বাচ্চাটা?
কুকুর দেখে অভ্যস্ত টোগো, রাফিয়ানকে দেখে মোটেও ভয় পেলো না। তার গা ঘেঁষে গিয়ে দাঁড়ালো। রাফিও আদর করে তার গা চেটে দিলো। ব্যস, ভাব হয়ে গেল দুটোতে।
খাওয়া শেষ হলো। এই সময় হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন জনির মা। একটা চেয়ার টেনে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তা কি ঠিক করলে? কোথায় থাকবে? ঘরে, না বাইরে?
বাইরেই থাকি, কিশোর বললো। মজা বেশি হবে।
থাকো, যেখানে ইচ্ছে। জনি, তবুটাবুগুলো কোথায় রেখেছিস? দিয়ে দে। ওরা নিজেরাই গিয়ে জায়গা পছন্দ করুক, কোথায় থাকবে।
এসো, বন্ধুদের ডাকলো জনি।
ল্যারি আর ডবিও চললো ওদের সাথে। আর ল্যারির কোলে অবশ্যই রইলো টোগো।
তাঁবু আর অন্যান্য জিনিসপত্র বয়ে নিতে মেহমানদেরকে জনি তত সাহায্য করলোই, ল্যারি আর ডবিও করলো।