গলা চড়িয়ে ডাকলো কিশোর।
সাড়া এলো।
আসছেন, বললো মুসা।
মিস্টার ডাউসনকে এগিয়ে আনতে গেল রাফিয়ান। ঢাল বেয়ে উঠে এলেন প্রজাপতি মানব, পরিশ্রমে হাঁপ ধরে গেছে।
তোমাদের কাছেই আসছিলাম, ডাউসন বললেন। বনেবাদাড়ে ঘোরাঘুরি করো, হয়তো চোখে পড়ে যেতে পারে, সেকথা বলতে। সিনাবার মথ, দেখলেই আমাকে খবর দেবে। পারলে ধরে নিয়ে যাবে কটেজে। দেখতে কেমন বলে দিচ্ছি। পাখার নিচটা…।
চিনি, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। একটু আগে দুজন মিলিটারি পুলিশ গিয়েছিলো আপনার সাথে কথা বলতে। কাল রাতে কোথায় ছিলেন, জিজ্ঞেস করার জন্যে। ভাবলাম, মিসেস ডেনভার তো বুঝিয়ে বলতে পারবে না, আমরাই বলি।
শূন্য দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকালেন ডাউসন। মিলিটারি পুলিশ গিয়েছিলো আমার বাড়িতে?
হ্যাঁ, কাল রাতে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েছে কিনা আপনার জিজ্ঞেস করার জন্যে। মথ শিকারে বেরিয়েছিলেন তো তখন। দুটো এরোপ্লেন…
তাকে কথা শেষ করতে দিলেন না ডাউসন। মথ শিকারে। আমি বেরিয়েছিলাম? পাগল নাকি। ঝড় আসছিলো তখন। শুধু আমাদের এই এলাকা কেন, দুনিয়ার কোনো অঞ্চলেই ওরকম সময়ে মথ বেরোয় না। রাতের বেলা হলেও না। আবহাওয়া খারাপ হলে মানুষের অনেক আগেই বুঝতে পারে ওরা।
ডাউসনের কথা শুনে অবাক হলো কিশোর। কিন্তু আপনার বন্ধু ডরি যে বললো, দুজনেই মথ শিকারে বেরিয়েছেন?
এবার ডাউসনের অবাক হওয়ার পালা। ডরি? কাকে দেখতে কাকে দেখেছো! ও তো আমার সাথেই ছিলো বাড়িতে। দুজনে মিলে নোট লিখেছি।
চুপ হয়ে গেল কিশোর। ভাবছে। ব্যাপার কি? মিস্টার ডাউসন কি কিছু ধামাচাপা দিতে চাইছেন? কাল রাতে যে বেরিয়েছিলেন কোনো কারণে স্বীকার করতে চাইছেন না?
দেখুন, স্যার, শেষে বললো সে, কাল রাতে আমি মিস্টার ডরিকেই দেখেছিলাম। অন্ধকার ছিলো বটে, কিন্তু জাল আর চোখের চশমা লুকাতে পারেনি। কালো কাচের চশমা।
ডরি কালো কাচের চশমা পরে না, আরও অবাক হয়ে বললেন ডাউসন। কি সব আবল-তাবল বকছে!
না, স্যার, আবল-তাবল নয়, এবার কথা বললো মুসা। কাল নিজের চোখে দেখে এসেছি তাকে, কালো কাচের চশমা পরতে। একটা প্রজাপতি ধরে নিয়ে গিয়েছিলাম, বিকেলে। আমাদের কাছ থেকে ওটা নিয়ে একটা ডলার দিলো।
তোমাদের মাথা খারাপ! নাকি ইয়ার্কি মারছো আমার সঙ্গে! রেগে গেলেন ডাউসন। অযথা সময় নষ্ট! আমার বন্ধু, আমি জানি না? ডরি কালো কাঁচের চশমা পরে না। কাল বিকেলে বাড়িতেও ছিলো না সে। আমার সঙ্গে বেরিয়েছিলো। দুজনেই শহরে গিয়েছিলাম কিছু দরকারী জিনিস কিনতে। আর তোমরা বলছো কাল তার সাথে দেখা হয়েছে, প্রজাপতি নিয়ে এক ডলার দিয়েছে, রাতে পাহাড়েও আবার কথা বলেছো!
রাগ করবেন না, স্যার, মোলায়েম গলায় বললো কিশোর। কিন্তু আমরা সত্যিই…
আবার বলছে সত্যি! গর্জে উঠলেন প্রজাপতি মানব। চমকে গেল রাফিয়ান। গরগর করে উঠলো।
আর দাঁড়ালেন না ওখানে মিস্টার ডাউসন। গটমট করে নেমে যেতে লাগলেন ঢাল বেয়ে। রাগতঃ ভঙ্গিতে বিড়বিড় করছেন আপনমনে।
খুব অবাক হয়েছে সবাই। তাকালো একে অন্যের দিকে।
মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না! দুহাত নাড়লো কিশোর। কাল রাতে কি তাহলে স্বপ্ন দেখলাম নাকি? একজনকে যে দেখেছি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাফিও দেখেছে। হাতে জাল, চোখে চশমা। কথা বলেছি। মথ না ধরলে ওরকম ঝড়ের রাতে কি করতে বেরিয়েছিলো সে?
জবাবটা দিলো জনি, হয়তো পেন চুরির সঙ্গে ওই লোকের কোনো সম্পর্ক আছে।
কিশোরও একই কথা ভাবছে। চুপ করে তাকিয়ে রইলো জনির দিকে।
উঁহুঁ, মাথা নাড়লো মুসা, আমার তা মনে হয় না। কাল দেখলাম তো কটেজে। ওই লোক আর যা-ই করুক, প্লেন চুরি করতে পারবে না। দেখে ওরকম মনে হয় না।
কিন্তু আমাদেরকে যে টাকা দিয়েছে, সে যদি সত্যিই ডরি না হয়ে থাকে? প্রশ্ন তুললো রবিন।
নাকি ওই ব্যাটাই মিসেস ডেনভারের ছেলে? জিনা বললো।
দেখতে কেমন? জনি জানতে চাইলো। মিসেস ডেনভারের ছেলেকে আমি চিনি। বলেছি না, আমাদের ওখানে মাঝে মাঝে কাজ করতে যায়। ওর ওপর মোটই বিশ্বাস রাখা যায় না। বলো তো কেমন চেহারা, টেড কিনা বুঝতে পারবো।
খাটো, রোগাটে, চোখে কালো কাঁচের চশমা, বলে চেহারার বর্ণনা দিলো মুসা।
ও টেড ডেনভার নয়, মাথা নাড়লো জনি। টেড লম্বা, মোটা, ঘাড় এতো মোটা, নাড়তেই কষ্ট হয়। কোনো রকম চশমাই পরে না।
ব্যাটা তাহলে কে? নিজেকে ডরি বলে চালিয়ে দিলো? সবার দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো মুসা।
কেউ তার প্রশ্নের জবাব দিতে পারলো না। হঠাৎ তার চোখ পড়লো খাবারের দিকে। আরি, আরি, সব তো নষ্ট হয়ে গেল! অর্ধেক খাওয়াই এখনও বাকি!
নীরবে খেয়ে চললো সকলে।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললে জনি। প্লেন চুরির সঙ্গে এ-সবের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা বুঝতে পারছি না…
থাক বা না থাক, ঘোষণা করলো যেন কিশোর, ওই প্রজাপতির খামারের ওপর চোখ রাখতে হবে আমাদের। রহস্যময় কিছু একটা ঘটছে ওখানে, আমি এখন শিওর!
১১
প্রায় সারাটা বিকেল বিমান চুরি আর কালো চশমা পরা লোকটার কথা আলোচনা করেই কাটালো ওরা। একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছে না, নিজেকে ভরি বলে চালাতে গেল কেন সে? এতো বড় বোকামি কেন করলো? তার বোঝা উচিত ছিলো, কারো সন্দেহ হলে, আর সামান্য খোঁজ করলেই ব্যাপারটা ফাঁস হয়ে যাবে।