সন্দেহজনক আর কিছুই শোনোনি কাল রাতে? জিজ্ঞেস করলো প্রথম লোকটা।
না, জবাব দিলো কিশোর।
কেউ আসেটাসেনি এদিকে? নোটবুক থেকে মুখ তুললো দ্বিতীয়জন।
আঁ…ও হ্যাঁ, একজনকে দেখেছি। মিস্টার ডরি। প্রজাপতি ধরে।
তুমি শিওর, মিস্টার ডরিকেই দেখেছো?
নাম তো তা-ই বললো। হাতে প্রজাপতি ধরার জাল ছিলো। চোখে কালো চশমা, আবছা অন্ধকারেও কাচ চকচক করতে দেখেছি। মিস্টার ডাউসনকে দেখিওনি, তাঁর কথাও শুনিনি। মিস্টার ডরি বললো, দুজনেই বেরিয়েছে, মথ শিকারে।
আর কিছু জানো না, না?
না, মাথা নাড়লো কিশোর।
হুঁ, বলে নোটবুক বন্ধ করলো লোকটা। অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে। যাই, ওই দুজনের সঙ্গেও কথা বলা দরকার। রাতে বেরিয়েছিলো যখন, কিছু দেখলেও দেখতে পারে। কোথায় থাকে ওরা?
চলুন, দেখিয়ে দিচ্ছি, জনি উঠে দাঁড়ালো। তার সঙ্গে অন্যেরাও উঠলো। হাঁটতে হাঁটতে পুলিশদেরকে বললো, দেখুন, আপনারা হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না। তবু আমি বলছি, জ্যাক ম্যানর চোর নয়। হতে পারে না।
ও তোমার কে হয়? জিজ্ঞেস করলো একজন পুলিশ।
ভাই।
ও। দেখা যাক তদন্ত করে, কি বেরোয়।
প্রজাপতির খামারটা দেখা গেল। হাত তুলে ভাঙা কটেজটা দেখিয়ে জনি বললো, ওখানেই থাকেন মিস্টার ডাউসন আর ডরি। আমাদের কি আর আসার দরকার আছে?
না। তোমরা যাও। থ্যাংক ইউ।
একটা কথা, স্যার, অনুরোধ জানালো জনি। জ্যাক ম্যানর চুরি করেনি, একথাটা জানতে পারলে দয়া করে কি একটা খবর দেবেন আমাদেরকে? দেখবেন, যখনি সে জানবে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, যোগাযোগ করবে আপনাদের সঙ্গে।
তোমার ভাই, না? দ্বিতীয় লোকটা বললো। কোনো আশা নেই, বুঝলে। কাল রাতে একটা প্লেন জ্যাক ম্যানরই উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কোনো সন্দেহ নেই তাতে।
১০
পাহাড় বেয়ে নেমে খামারের দিকে এগিয়ে গেল দুজন পুলিশ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো ছেলেমেয়েরা। রাফিও দুপায়ের ফাঁকে লেজ ঢুকিয়ে দিয়ে চেয়ে রয়েছে। সে জানে না কি হয়েছে, কিন্তু বুঝতে পারছে খারাপ কিছু ঘটেছে।
এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই, কিশোর বললো। প্রজাপতি মানবদের কাছে কিছু পাবে না। মথ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়বে না ওদের। সামনে দিয়ে হাতি হেঁটে গেলেও না।
যাবার জন্যে সবে ঘুরেছে ওরা, এই সময় কানে এলো তীক্ষ্ণ চিত্তার। থমকে দাঁড়য়ে কান পাতলো সবাই। নিশ্চয় মিসেস ডেনভার, মুসা বললো। তার আবার কি হলো?
চলো তো দেখি, বলে এগোলো কিশোর। তার পেছনে সবাই এগিয়ে চললো কটেজের দিকে।
কাছে এসে শুনতে পেলো একজন পুলিশের গলা। বলছে, আহহা, এতো ভয় পাচ্ছেন কেন? আমরা শুধু কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি।
যাও! ভাগো! তীক্ষ্ণ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো আবার বৃদ্ধা। কাঠির মতো সরু হাতটা নাড়ছে জোরে জোরে। তোমরা এখানে কিজন্যে এসেছো? যাও, যাও!
শুনুন, মা, শান্তকণ্ঠে বোঝানোর চেষ্টা করলো আরেকজন, আমরা মিস্টার ডাউসন আর মিস্টার ডরির সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। তারা কি নেই?
কে? কার কথা বললে? ও, পাগল দুটো। বেরিয়ে গেছে, জাল নিয়ে, মহিলা বললো। আমি ছাড়া আর কেউ নেই এখন। অপরিচিত লোক দেখলে আমি ভয় পাই। যাও, যাও।
শুনুন, বললো আরেকজন, মিস্টার ডাউসন আর মিস্টার ডরি কাল রাতে পাহাড়ে কোথায় গিয়েছিলো বলতে পারবেন?
রাতে তো আমি ঘুমাচ্ছিলাম। কি করে বলবো? যাও। আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও?
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো দুই পুলিশ। মহিলাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। কিছু জানা যাবে না।
বেশ, যাচ্ছি আমরা, একজন আলতোভাবে বৃদ্ধার কাঁধ চাপড়ে দিলো। অযথাই ভয় পেয়েছেন। ভয়ের কিছু নেই তো।
ওদের সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেল কিশোরদের। কিশোর বললো, মহিলার চিৎকার শুনে দেখতে এলাম কি হয়েছে।
জাল নিয়ে বেরিয়ে গেছে তোমাদের প্রজাপতি মানব, বললো একজন পুলিশ, দুজনেই। আজব লোক, আজব জীবন! এতোসব কিলবিলে খুঁয়াপোকার মাঝে যে কি করে বাস করে…করুক, যেভাবে খুশি। হ্যাঁ, যা বুঝতে পারছি, কাল রাতে বোধহয় ওরা কিছু দেখেনি। আর দেখার আছেই বা কি? দুজন পাইলট দুটো প্লেন উড়িয়ে নিয়ে চলে গেছে। এটা দেখলেই বা কার সন্দেহ হবে?
তবে ওই দুজনের একজন যে আমার ভাই জ্যাক নয়, এ-ব্যাপারে আমি শিওর, জনি বললো।
শ্রাগ করলো লোক দুজন। তারপর হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল।
আবার পাহাড়ের ঢালে এসে উঠলো ছেলেমেয়েরা। নীরব। অবশেষে কথা বললো কিশোর, কিছু খাওয়া দরকার। লাঞ্চের সময় পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। জনি, এসো, আমাদের সাথেই খাও।
না ভাই, আমি কিছুই মুখে দিতে পারবো না।
ক্যাম্পে ফিরে রবিন আর জিনাকে খাবার বের করতে বললো কিশোর। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে সবারই, জনি বাদে। জোর করে তার হাতে একটা স্যাণ্ডউইচ তুলে দিলো মুসা। সেটা চিবানোর চেষ্টা করতে লাগলো জনি।
অর্ধেক খাওয়া হয়েছে, এই সময় চিৎকার শুরু করলো রাফি। কে এলো দেখার জন্যে ফিরে তাকালো সবাই। কিশোরের মনে হলো, নিচে একটা ঝোপের ভেতরে কি যেন নড়লো। তাড়াতাড়ি ফীল্ডগ্নাস বের করে চোখে লাগালো সে।
মনে হয় মিস্টার ডাউসন, দেখতে দেখতে বললো কিশোর। জাল দেখতে পাচ্ছি। প্রজাপতি ধরছেন বোধহয়।
ডাকি, কি বলো? মুসা বললো। তাকে জানাই, মিলিটারি পুলিশেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলো।