বাইরে বেরিয়ে ফীগ্লাস চোখে লাগিয়ে, একবার দেখেই চিৎকার করে উঠলো কিশোর। ওরেব্বাবা, কতো লোক! হচ্ছেটা কি ওখানে? পেনও এসেছে অনেকগুলো। নিশ্চয় আজ সকালে আমরা যখন গুহায় ছিলাম তখন এসেছে।
এক এক করে কীভগ্নাস চোখে লাগিয়ে দেখলো সবাই। ঠিকই বলেছে কিশোর। কিছু একটা ঘটছে এয়ারফীন্ডে। তাড়াহুড়া আর উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে মানুষগুলোর মাঝে। এই সময় শোনা গেল ইঞ্জিনের শব্দ।
আরেকটা প্লেন আসছে, মুসা বললো। জ্যাক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারলে হতো, রবিন বললো। সে বলতে পারবে কি হচ্ছে।
লাঞ্চের পর ফার্মে গিয়ে জনিকে জিজ্ঞেস করতে পারি, মুসা প্রস্তাব দিলো। হয়তো সে কিছু জানে, ভাইয়ের কাছ থেকে শুনে থাকতে পারে।
যাক, বাঁচা গেল, আবার রোদ উঠছে, খুশি খুশি গলায় বললো জিনা। মেঘের ফাঁকে উঁকি দিয়েছে সূর্য, একঝলক সোনালি উষ্ণ বোদ ছড়িয়ে দিয়েছে বৃষ্টিভেজা প্রকৃতির ওপর। ইতিউতি ছুটে চলা হেঁড়া মেঘের ফাঁকে ফাঁকে চোখে পড়ছে এখন নীল আকাশ। এরকম কড়া রোদ থাকলে শীঘ্রি শুকিয়ে যাবে ঝোপঝাড়। চলো, রেডিও শুনি, আবহাওয়া অফিস কি বলে? অযথা অ্যানারাক বয়ে বেড়াতে রাজি না আমি।
রেডিও অন করলো ওরা। কিন্তু অল্পের জন্যে মিস করলো আবহাওয়ার খবর।
দূর! বলে বন্ধ করে দিতে গিয়েও থমকে গেল মুসা। দুটো শব্দ কানে এসেহে, বাটারফ্লাই হিল। বাড়ানো হাতটা মাঝপথেই ঝুলে রইলো তার, কান পেতে আছে আরও কথা শোনার জন্যে। ঘোযক বলছে, বাটারফ্লাই হিল থেকে চুরি যাওয়া প্লেন দুটো খুব দামী, ভেতরে অনেক টাকার যন্ত্রপাতি লাগানো। হয়তো ওগুলোর জন্যেই চুরি হয়েছে প্লেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ওগুলো উড়িয়ে নিয়ে গেছে আমাদের দুজন সেরা পাইলট। ওরা হচ্ছে ফ্লাইট-লেফটেন্যান্ট জ্যাক ম্যানর আর ফ্লাইট-লেফটেন্যান্ট রিড বেকার। দুটো প্লেনই একেবারে গায়েব, কোনো খোঁজ নেই। হারিয়েছে কাল রাতে ঝড়ের সময়।
এক মুহূর্ত থেমে আরেক খবরে চলে গেল ঘোষক। রেডিও বন্ধ করে দিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে অন্যদের দিকে তাকালো মুসা।
জ্যাকের মতো মানুষ এরকম একটা কাণ্ড করলো! বিড়বিড় করলো কিশোর। আনমনে চিমটি কাটলো একবার নিচের ঠোঁটে। বিশ্বাস হচ্ছে না!
প্লেন উড়ে যেতে কিন্তু শুনেছি আমরা, মুসা বললো। দুটোই। পুলিশকে গিয়ে সব জানানো উচিত। ইস, জ্যাক একাজ করলো! হায়রে, দুনিয়ায় কাকে বিশ্বাস করবো?
ঠিক, মাথা দোলালো রবিন।
রাফিও কিন্তু বিশ্বাস করেছিলো ওকে, জিনা মনে করিয়ে দিলো। আর লোক চিনতে সাধারণত সে ভুল করে না।
জনি খুব দুঃখ পাবে, মুসা বললো। বেচারা ভাই বলতে অজ্ঞান…
হঠাৎ আবার চেঁচাতে শুরু করলো রাফি। এবার আনন্দের ডাক। কে আসছে দেখার জন্যে ফিরে তাকালো কিশোর। জনি।
কাছে এসে ওদের পাশে বসে পড়লে জনি। মুখচোখ শুকনো। হাসার চেষ্টা করলো। খুব খারাপ খবর আছে, কেমন ভাঙা ভাঙা কণ্ঠস্বর।
জানি,মুসা বললো। এইমাত্র শুনলাম রেডিওতে।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো জনি। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। মোছার চেষ্টা করলো না। পানি যে পড়ছে সেটাই যেন টের পাচ্ছে না। কে কিভাবে সান্ত্বনা দেবে বুঝতে পারলো না। শুধু রাফি গিয়ে চেটে দিতে লাগলো তার ভেজা গাল। বিচিত্র কুঁই কুঁই আওয়াজ বেরোচ্ছে গলা দিয়ে। কুকুরটার গলা জড়িয়ে ধরে অবশেষে বললো সে, জ্যাক ভাইয়া হতেই পারে না! সে এরকম কাজ করবে না! আমি বিশ্বাস করি না! তোমরা তো দেখেছো তাকে, তোমাদের কি মনে হয়?
আমিও বিশ্বাস করতে পারছি না, গলায় সহানুভূতি মিশিয়ে বললো কিশোর। মাত্র একবার দেখেছি, তা-ও অল্প সময়ের জন্যে। আমার মনে হয় না তোমার ভাই খারাপ লোক।
সে আমার কাছে হিরো, বলে ভেজা গাল মুছলো জনি। আজ সকালে যখন মিলিটারি পুলিশ প্রশ্ন করতে এসেছিলো বাবাকে, কি যে মনের অবস্থা হয়েছিলো আমার, বলে বোঝাতে পারবো না। জ্যাক ভাইয়াকে চোর বলায় এতো রেগে গিয়েছিলাম, ঘুসি তুলে মারতে গিয়েছিলাম পুলিশকে। শেষে জোর করে ধরে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিলো মা।
শুধু ওই দুজন পাইলটই তো? জানতে চাইলো কিশোর। নাকি আরও কেউ নিখোঁজ হয়েছে?
না, ওই দুজনই। আজ সকালে রোলকলের সময় অন্য সবাই হাজির ছিলো। শুধু আমার ভাই আর রিড ভাইয়া বাদে। ওরা দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
কেসটা আরও খারাপ হয়েছে সেজন্যেই, মুসা বললো।
কিন্তু আমি বলছি ওরা চুরি করেনি! জোর দিয়ে বললো জনি। মুসার দিকে তাকালো ভুরু কুঁচকে। তুমিও ওদেরকে চোর ভাবছো নাকি?
প্রশ্নই ওঠে না। ওদেরকে…, রাফিয়ানকে দৌড় দিতে দেখে থেমে গেল মুসা। আবার কে আসছে?
প্রচণ্ড চিৎকার করতে লাগলো রাফি। মোটা, ভারি একটা কণ্ঠ আদেশ দিলো, চুপ! চুপ! এই, তোর বন্ধুরা কোথায়?
উঠে এগিয়ে গেল কিশোর।
ঢাল বেয়ে উঠে আসছে দুজন মোটাসোটা ইউনিফর্ম পরা লোক। মিলিটারি পুলিশ।
এই রাফি, চুপ কর, ডেকে বললো কিশোর। আসতে দে।
দৌড়ে তার কাছে ফিরে এলো রাফি। উঠে এলো লোক দুজন। এখানেই ক্যাম্প করেছে, না? বললো একজন। কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। কাল রাতে
তো এখানেই ছিলে?।
হ্যাঁ, বললো কিশোর। আসুন। আপনারা কি জিজ্ঞেস করবেন, জানি। ভেরি গুড। বসো সবাই। এখানেই বসি, নাকি?
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। গোল হয়ে বসলো সবাই। যা যা জানে, সব জানালো ওরা। বেশি কিছু বলতে পারলো না অবশ্য। শুধু দুটো প্লেন উড়ে যাওয়ার কথা ছাড়া।