খাইছে! কতোবড়! বলে উঠলো মুসা। কি প্রজাপতি?
মাথা নাড়লো রবিন। বলতে পারবো না। কিশোর, তুমি জানো?
নাহ, কিশোর বললো। চেহারা-সুরতে তো দুর্লভ জিনিস বলেই মনে হচ্ছে। ধরে নিয়ে যাবো নাকি ডাউসনের কাছে?
কিশোরের কথা শেষ হতে না হতেই পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল জিনা। হাত বাড়ালো প্রজাপতিটাকে ধরার জন্যে। শেষ মুহূর্তে উড়ে গেল ওটা। গিয়ে বসলো কাছেই আরেকটা ফুলে। আবার এগোলো জিনা। শেষ মুহূর্তে আবার উড়লো প্রজাপতি। গিয়ে বসলো আরেক ফলে।
রোখ চেপে গেল জিনার। ধরবেই ওটাকে। প্রজাপতিটাও চালাক। কিছুতেই ধরা পড়তে চাইলো না। গেলও না এলাকা ছেড়ে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে তিন গোয়েন্দা। কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে রাফিয়ান।জিনাকে সাহায্য করতে এগোবে কিনা ভাবছে বোধহয়।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ধরা পড়তে হলো প্রজাপতিটাকে। সাবধানে ওটার দুই পাখা টিপে ধরে রেখে জিনা বললো, একটা পনিরের টিন খালি করে ফেলো, জলদি!
তাড়াতাড়ি টিনের পনির বের করে, একটা প্যাকেটের কাগজ ছিঁড়ে মুড়ে রাখলো রবিন। টিনটা দিলো জিনাকে। সাবধানে ওটার মধ্যে প্রজাপতিটাকে ভরলো জিনা। চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা ফোঁস করে ছেড়ে বললো, থাকো এবার আরামসে! বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি শিওর, এটা দেখে খুব অবাক হবেন মিটার ডাউসন।
তখন না বললে আর যাবে না ওখানে? মুসা বললো। ডাইনী বুড়িটা আছে…
থাকুক। তবুও যাবো।
তোমার কখন যে কি মনে হয়, হাসতে হাসতে বললো কিশোর, ঠিকঠিকানা নেই।
কি বলছো, কিশোর? এতোবড় একটা প্রজাপতি ধরলাম। দুর্লভ কিনা, কি নাম, জানতে ইচ্ছে করছে না তোমার?
করছে। তবে তার চেয়েও বেশি ইচ্ছে করছে ডরি আর বুড়ির ছেলের সঙ্গে দেখা করতে। প্রজাপতিটা না ধরলেও ওদের সঙ্গে দেখা করতে যেতামই একবার।
ঝট করে কিশোরের দিকে তাকালো রবিন। তোমার কথায় রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি! কি ব্যাপার, কিশোর?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো একবার গোয়েন্দাপ্রধান। এখনও জানি না। তবে এখানে আসার পর থেকেই কতগুলো ব্যাপার বেশ অবাক করেছে আমাকে। তদন্ত করে দেখা দরকার।
নিজে থেকে কিছু না বললে হাজার চাপাচাপি করেও কিশোরের মুখ থেকে কোনো কথা আদায় করা যাবে না, একথা জানা আছে তিনজনেরই। কাজেই আপাতত আর কোনো প্রশ্ন করলো না। সময় হলে আপনা থেকেই সব বলবে কিশোর।
কাঁচের ঘরগুলোর কাছে মিস্টার ডাউসনের দেখা মিললো না, নেই তিনি ওখানে।
বোধহয় কটেজে, কিশোর বললো। ডেকে দেখি।
কটেজের কাছে এসে ডাক দিলো সে, মিস্টার ডাউসন। মিস্টার ডাউসন!
সাড়া দিলেন না প্রজাপতি মানব, বেরিয়ে এলেন না। তবে দোতলার একটা জানালার পর্দা ফাঁক হলো, উঁকি দিলো কেউ। সেদিকে হাত নেড়ে আবার ডাউসনের নাম ধরে ডাকলো কিশোর।
মুসা বললো, মিস্টার ডাউসন, আপনার জন্যে একটা দুর্লভ প্রজাপতি নিয়ে এসেছি।
জানালা খুলে গেল। বেরিয়ে এলো মিসেস ডেনভারের মুখ। জিনার মনে হলো, একেবারে কার্টুন ছবির ডাইনী, কোনো ভুল নেই।
মিস্টার ডাউসন নেই, জবাব দিলো মিসেস ডেনভার।
তার বন্ধু মিস্টার ডরি কোথায়? জিজ্ঞেস করলো কিশোর। তিনি আছেন?
ওদের দিকে তাকিয়ে কি বললো মহিলা, বোঝা গেল না। জানালার ভেতরে ঢুকে গেল আবার তার মুখ।
অবাক হয়ে কিশোরের দিকে তাকালো মুসা। এরকম করলো কেন? হ্যাঁচকা টান দিয়ে কেউ সরিয়ে নিলো বলে মনে হলো না?
ঘরে তার ছেলেটা নেই তো? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো রবিন।
কি জানি! গাল চুলকালো কিশোর। চলো, আশপাশটা ঘুরে দেখি ডাউসনকে পেয়েও যেতে পারি।
কটেজের একটা কোণ ঘুরে উঁকি দিতে একটা ছাউনি চোখে পড়লো। কেউ নেই। ঠিক ওই সময় পেছনে পদশব্দ শুনে ফিরে তাকালো ওরা। একজন লোক আসছে তাদের দিকে। খাটো, রোগাটে, লম্বা মুখ, নাকটা বাঁকা। চোখে কালো চশমা। হাতে একটা প্রজাপতি ধরার জাল। বললো, মিস্টার ডাউসন তো নেই। কি চাও তোমরা?
আপনি নিশ্চয় মিস্টার ডরি, কিশোর বললো। আমরা একটা দুর্লভ প্রজাপতি ধরে এনেছি। মিস্টার ডাউসনকে দেখাতে।
দেখি? হাত বাড়ালো ডরি।
টিনটা দিলো জিনা। সাবধানে টিনের ঢাকনা খুলে সামান্য ফাঁক করলো ডরি, যাতে প্রজাপতিটা উড়ে যেতে না পারে।
কালো কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখতে দেখতে মাথা ঝাঁকালো ডরি। হুঁ, ভালো। এক ডলার দিতে পারি।
এক পয়সাও দিতে হবে না, এমনিই নিন, জিনা বললো। শুধু বলুন, এটার নাম কি? কি জাতের?
কোনো ধরনের ফ্রিটিল্যারি? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
হতে পারে, বলে, পকেট থেকে একটা ডলার বের করে তাড়াতাড়ি তার হাতে গুঁজে দিলো লোকটা। এই নাও। প্রজাপতি পেয়ে খুশি হলাম। মিস্টার ডাউসন এলে বলবো।
আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আচমকা ঘুরে দাঁড়ালো সে। এক হাতে টিন, আরেক হাতে জাল নিয়ে দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো।
অবাক হয়ে হাতের টাকাটার দিকে তাকালো একবার রবিন। তারপর আবার তাকালো লোকটার দিকে।
ডরি চলে গেলে মুসা বললো, আজব লোক! এই লোকের সঙ্গে বনিবনা হয় কিভাবে মিস্টার ডাউসনের? টাকাটা কি করবে? এটা দরকার নেই আমাদের।
মিসেস ডেনভারকে দিয়ে দেবো, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর। তার দরকার। ছেলে তাকে একটা পয়সাও দেয় বলে মনে হয় না।
আবার কটেজের সামনে এসে দাঁড়ালো ওরা। আশা করেছিলো মিসেস ডেনভারকে দেখতে পাবে। কিন্তু পেলো না। একমুহূর্ত দ্বিধা করে সামনের দরজায় গিয়ে টোকা দিলো রবিন।