সুড়ঙ্গটা সরু, কিন্তু ঠাসাঠাসি করে জায়গা হয়ে গেল চারজনের। সবাই মিলে ঠেলা লাগালো পাথরটায়।
হাউফ করে নিঃশ্বাস ছাড়লো মুসা। বা
পরে বাপ! পা ফসকে গেল পিনটুর।
গায়ের জোরে ঠেলছে কিশোর আর রবিন।
কিন্তু এক চুল নড়লো না পাথর।
হবে না, হাল ছেড়ে দিলো রবিন। এভাবে কিছুই করতে পারবো না।
মুসাও একমত হলো তার সঙ্গে।
আবার গুহায় ফিরে এলো ওরা।
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখলো কিশোর। আজ আমরা না ফিরলে কাল খোঁজাখুঁজি শুরু হবে। রিগো বলে দেবে তখন কনডর ক্যাসলের কথা। কথা বোঝা যায়নি বটে, তবে গলার স্বর তো শুনেছি। বাইরে কেউ এলে আমরা শুনতে পাবো, আমরা চেঁচামেচি করলে বাইরে থেকে শোনা যাবে।
গুঙিয়ে উঠলো মুসা। তার মানে আজ সারাটা রাত এখানে থাকতে হবে?
আর কি করার আছে? হাসলো কিশোর। শুহাটা খারাপ না। শুকনো। বাতাস আছে। গুহার মুখে এতো বড় পাথর থাকা সত্ত্বেও বাতাস যখন আসছে, আমার মনে হয় আরও কোনো পথ আছে। ফাটল তো থাকতেই পারে।
ঠিকই বলেছো, সায় জানালো পিনটু।
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আলো ফেলতে লাগলো রবিন। অন্য তিনজন খুঁজে দেখলো কিন্তু একটা ফাটলও কোথাও চোখে পড়লো না যেটা দিয়ে বাতাস আসতে পারে।
বায়ের দেয়ালটা দেখো, কিশোর কললো, পাথরের চেয়ে মাটি বেশি। আর ভেজা ভেজা। বেশি পুরু মনে হচ্ছে না। খুঁড়ে বেরোনো হয়তো যায়।
খুড়বো কি দিয়ে? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
তাহলে চলো, আবার বললো কিশোর, বড় গুহাটায় ফিরে যাই। দেখি আর কোন পথ আছে কিনা।
ওটাতে তো অনেক খুঁজলাম, রবিন মনে করিয়ে দিলো। পথ থাকলে কি চোখে পড়তো না?
আরেকবার চেষ্টা করতে দোষ কি? তাছাড়া সাংকেতিক লেখাটাও আবার দেখতে চাই।
সুড়ঙ্গ পেরিয়ে আবার বড় গুহাটায় এসে ঢুকলো ওরা। ছেলেদের দিকে তাকিয়ে যেন ব্যঙ্গ করছে খুলিগুলোর শূন্য কোটর। বিকট হাসিতে বেরিয়ে পড়েছে সঁত। টর্চের আলোয় আরেকবার দেয়ালগুলো পরীক্ষা করলো ওরা। তাজা বাতাস রয়েছে ভেতরে, ঢোকার পথ নিশ্চয় আছে, অথচ সেটা বের করা গেল না।
সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই, হতাশ ভঙ্গিতে হাত নাড়লো রবিন। কিংবা খালি হাতেই দেয়াল খোঁড়ার চেষ্টা করতে পারি।
কোনোটাই করার ইচ্ছে নেই আমার, সাফ মানা করে দিলো মুসা।
খোঁড়াটা কঠিনই, অসম্ভব শব্দটা বলতে চাইলো না কিশোর। বেরোতে না পারলে সারারাত বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। শুধু শুধু বসে থাকবে কেন? মেসেজটা নিয়েই মাথা ঘামাই।
তুমি ঘুমাওগে, মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো মুসা। আমার মাথাও নেই, ঘামও নেই।
তার কথায় কান দিলো না কিশোর। আরেকবার দেখা যাক লেখাগুলো।
হোট গর্তের কিনারে এসে বসে পড়লো চারজনে। স্প্যানিশ ভাষায় লেখা চারটে শব্দের দিকে তাকালো নীরবে।
বার কয়েক নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। পিনটু, ঠিকই বলেছে, চারটে শব্দের মাঝে ফাঁক একরকম নয়। তাই আর ধুলোর মাঝে ফাঁক বেশি, কিন্তু বৃষ্টি আর সাগরের মাঝে কম। প্রায় গায়ে গায়েই লেগে আছে। মাঝখানে একটা ড্যাশমতোও দেখা যাচ্ছে, হাইফেনও বলা যায়। দুটো শব্দকে এক করে বোঝাতে চেয়েছেন বোহয় ডন। তাহলে মেসেজটা পড়তে হবে এভাবেঃ হাই…ধুলো-বৃষ্টি-সাগর। মানেটা কি?
কিছু না, বলে দিলো মুসা।
সাগর আর বৃষ্টির মাঝে একটা মিল আছে, পিনটু বললো। পানি।
ঠিক, মাথা ঝাঁকালো কিশোর।
সম্পর্ক আরও আছে, রবিন বললো, যদি গোড়া থেকে ভৌগোলিক কারণ খুঁজতে যাও। সাগর থেকে বাষ্প উঠেই মেঘের সৃষ্টি হয়, সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে আবার সাগরে নেমে আসে পানি, আবার বাস্প হয়, চলতে থাকে এভাবেই।
বেশ, কিশোর বললো, সাগর থেকে বৃষ্টির উৎপত্তি, তারপর আবার সাগরেই ফিরে যায়। এর সাথে ধুলোবালি আর হাইয়ের কি সম্পর্ক?
হাইয়ের মধ্যে ধুলোবালি থাকতে পারে, পিনটু কালো। কিংবা ধুলো থেকে হাই আসে…।
উহুঁ, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করলে মুসা, ধুলো থেকে হাই আসতেই পারে না।
না, পারে না, ধীরে ধীরে বললো কিশোর। ভাবো, ভাবতে থাকো। কোথাও কোনো যোগাযোগ আছেই। চারটে শব্দের মধ্যেই রয়েছে সূত্র। স্যানটিনোকে কি বোঝাতে চেয়েছিলেন ডন?
কেউ জবাব দিতে পারলো না।
আবার বললো কিশোর, মাথা খাটাও। চলো যাই ছোট গুহাটায়। দেখি খোঁড়াটোড়া যায় কিনা? আশা ছাড়তে রাজি নয় গোয়েন্দাপ্রধান।
এক কাজ করতে পারি! তুড়ি বাজালো মুসা। রাইফেলগুলোকে খোঁড়ার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারি!
বেল্টে ঝোলানো যন্ত্রপাতির ব্যাগে চাপড় দিলো রবিন। মাটি ঘোড়ার কিছু নেই এটাতে। তবে ভ্রু-ড্রাইভারটা কাজে লাগানো যায়।
হোট গুহায় ফিরে এসে বাঁয়ের দেয়ালটা পরীক্ষা করে দেখলে ওরা। ভেজা, নরম মাটি।
পুরো এক হপ্তা ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, মুসা কললো, কাদা হয়ে গেছে মাটি। কতোটা পুরু আল্লাহুই জানে। হাসলো সে। দেখা যাক।
পুরানো রাইফেল, ক্রু-ড্রাইভার আর চ্যাপ্টা পাথর নিয়ে কাজে লেগে গেল ওরা। শুরুতে মাটি বেশ আঠালো, সাবানের মতো আটকে থাকতে চায়। সেই স্তরটা সরানোর পর আঠা কমে গেল, ভেজা বাড়লো। মাটিতে খোঁচা দিলেই এখন পুচপুচ করে কাদা বেরোয়। আরও ফুটখানেক খোঁড়ার পর পড়লো পাথর। বড় না, খুঁড়ে ঝে করে আনলো সেটা।
দরদর করে ঘামছে চারজনেই। মাটি-কাদায় মাখামাখি হয়ে গিয়েছে শরীর আগেই, তার সঙ্গে যুক্ত হলো আরও মাটি। ক্লান্ত হয়ে আসছে ওরা, পেট মোচড় দিচ্ছে খিদেয়। শেষে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না, সটান শুয়ে পড়লো মাটিতে। তার পরেই ঘুম। ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো ভোর পর্যন্ত। ঘড়ি দেখে বুঝলো যে ভোর হয়েছে। ব্যাটারি ফুরিয়ে আসছে রবিনের টর্চের। আবার কাজে লাগলো ওরা। টর্চের আলো থাকতে থাকতেই যা করার করতে হবে।