তারপর ডনের কি হলো? প্রশ্ন করলো রিগো।
আমি জানি না।
কিছু না জেনেই একটা গল্প বানিয়ে বলে দিলে তুমি, কিশোর পাশা, ধীরে ধীরে মাথা নাড়তে লাগলো রিগো। ধরলাম তোমার কথা সত্যি, মানে ডনের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা, আর তলোয়ারটাও তিনি লুকিয়েছেন। কোথায়? আর কিভাবে সেটা খুঁজে বের করবে?
ডনের চিঠিটা দেখাও তো কিশোর, রবিন বললো।
চিঠির কপি বের করে রিগোর হাতে দিলো কিশোর। এটার অনুবাদ করুন। রবিন, লিখে নাও।
চিঠিটা একবার দেখেই রিগো বললো, এই চিঠি আমি দেখেছি। আমার দাদা এটা বহুবার পড়েছে, হারানো তলোয়ারের সূত্র খুঁজেছে, কিছুই পায়নি। ঠিক আছে, আমি অনুবাদ করছি, লিখে নাও। কনডর ক্যাসল, তেরো সেপ্টেম্বর, আঠারোশো ছেচল্লিশ। মাই ডিয়ার স্যানটিনো, আশা করি কুশলেই আছো, আর তোমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে খাঁটি মেকসিকানের মতো। ইয়াংকিরা এসে ঢুকেছে আমাদের হতভাগ্য শহরে, আর আমি গ্রেপ্তার হয়েছি। কেন ধরা হয়েছে আমাকে, বলেনি ওরা তবে আন্দাজ করতে পারছি, বুঝলে? সাগরের কাছে ক্যাবরিলো হাউসে আমাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না আমার সঙ্গে। আমাদের পরিবারের সাই, এবং সবকিছু ভালো আছে, নিরাপদে আছে। জানি, শীঘ্রি, জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
নোটবুকে লিখে নিয়েছে রবিন। দ্রুত একবার পড়লো। বললো, কেন ধরা হয়েছে আন্দাজ করতে পেরেছেন তিনি। তলোয়ারটার জন্যেই কি?
এবং সব কিছু বলে উঠলো মুসী। তারমানে কি স্যানটিনোকে বোঝাতে চেয়েছেন তলোয়ারটা নিরাপদে আছে?
দেখি, নোটবুকের জন্যে হাত বাড়ালো কিশোর। বললো, হয়তো। তবে একটা ব্যাপারে শিওর হয়ে গেলাম এখন, মিথ্যে কথা বলেছে সার্জেন্ট ডগলাস।
কি করে শিওর হলে? রিগো জানতে চাইলো।
রিপোর্টে বলেছে ডগলাস, যে তলোয়ার সহ পালাতে গিয়ে গুলি খেয়ে মরেছেন ডন। তলোয়ারটা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিলো একজন বন্ধু বা ওরকম কেউ। কিন্তু ডনের সঙ্গে কাউকে দেখাই করতে দেয়া হতো না, তাহলে কি করে দিলো তলোয়ার? তারমানে হাতে তলোয়ার পৌঁছেনি। বানিয়ে বলেছে ডগলাস, যাতে সবাই ভাবে তলোয়ারটা হারিয়ে গেছে। কেউ আর ওটার খোঁজ না করে। তাহলে নিশ্চিন্তে খুঁজতে পারবে সে।
চিঠির দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু…
থেমে গেল একটা শব্দে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। তার মাঝেই হলো আওয়াজটা, লাকড়ির ওপর লাকড়ি পড়ার। পরক্ষণেই শোনা গেল পায়ের শব্দ।
এই, দাঁড়াও। চেঁচিয়ে উঠলো একটা কণ্ঠ।
ঘর থেকে ছুটে বেরোলো তিন গোয়েন্দা, রিগো আর পিনটু। দেখলো গোলাঘরের ওপাশ দিয়ে একটা ঘোড়া দৌড়ে যাচ্ছে। সাদা চুল, ছোটখাটো একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন চত্বরে।
জানালায় আড়ি পেতে নছিলো, রিগোকে জানালেন তিনি। তোমার সঙ্গে কথা বলতে আসছিলাম, এই সময় দেখি আমার সাড়া পেয়েই লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে পড়লো লাকড়ির ওপর। ঘোড়াটা রেখে দিয়েছিলো গোলার পেছনে।
লোকটা কে, চিনেছেন? পিনটু জিজ্ঞেস করলো।
মাথা নাড়লেন বৃদ্ধ। চোখে তো ভালো দেখতে পাই না, চিনতে পারিনি।
ভিজে যাচ্ছেন, ডন, বৃদ্ধকে খুব সম্মান দেখিয়ে বললো রিগো। ভেতরে চলে আসুন।
কটেজের ভেতরে এনে ফায়ারপ্লেসের কাছে বসালো সে। পরিচয় করিয়ে দিলো তিন গোয়েন্দার সঙ্গে। তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে মাথাটা সামান্য নোয়ালেন ডন রডরিক হেরিয়ানো।
লোকটা কতোক্ষণ ছিলো, স্যার, বলতে পারবেন? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।
কি জানি। আমি তো এইমাত্র এলাম।
কে হতে পারে? কিশোরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো রবিন। আড়ি পেতে ছিলো কেন?
আমি কি করে বলি? কর্টেজ সোর্ডটার কথা শুনে ফেললো কিনা কে জানে!
শুনলে কি ক্ষতি হবে? মুসার প্রশ্ন।
সরাসরি জবাব দিলো না কিশোর। কললো, আমার মনে হয়, মিস্টার ডয়েল চান তলোয়ারটা আমরা খুঁজে বের করি। কাল শুঁটকি খুব আগ্রহ দেখাচ্ছিলো আমাদের সম্পর্কে। আমরা কি করছি বোঝার চেষ্টা করছে নিশ্চয়।
শুনলেও কিছু এসে যায় না, বিশেষ গুরুত্ব দিলো না রিগো। এমন কিছু শোনেনি। তলোয়ারটা কোথায় আছে সেকথা তো আর বলিনি আমরা।
আমি শিওর,আগের কথার খেই ধরে শুরু করলো আবার কিশোর, ডন পিউটো। জানতেন তিন সৈন্য তার পিছু নিয়েছে। তিনি সেটা লুকিয়ে ফেললেন। নিশ্চয়ই ছেলের জন্যে কোনো সূত্র রেখে গেছেন তিনি। চিঠিটাতে না থাকলে অন্য কোথাও। তবে চিঠিতেও কিছু না কিছু আছেই। বন্দি ছিলেন তিনি, বিপদের মধ্যে ছিলেন, সরাসরি কিছু লেখা সম্ভব ছিলো না। জানতেন, ওই চিঠিই ছেলেকে কিছু জানানোর শেষ সুযোগ।
আরেকবার করে চিঠিটা পড়লো ওরা। তিন গোয়েন্দা পড়লো অনুবাদ করা লেখাটা, আর দুই ভাই পড়লে কপিটা।
আমি কিছুই পেলাম না, হাল ছেড়ে দিলো মুসা। মাথা নাড়লো রিগো, আমিও না। এটা সাধারণ একটা চিঠি, কিশোর। সাংকেতিক কোনো কিছুই নেই।
এবং সব কিছু ভালো আছে, নিরাপদে আছে কথাটা ছাড়া, বললো পিনটু।
কিশোর? রবিন বললো হঠাৎ, তারিখের ওপরে হেডিং লেখা হয়েছে কনডর ক্যাসল, খেয়াল করেছো? রিগোকে জিজ্ঞেস করলো সে। আপনি জানেন এটা কি?
না, ধীরে ধীর বললো রিগো, হবে কোনো দুর্গ-টুর্গ। অনেকেই ওরকম লিখে থাকে। যেখানে থেকে লিখছে সেটার নাম।
কিন্তু, রবিন বললো, ডন চিঠিটা লিখেছিলেন ক্যাবরিলো হাউস থেকে।