টেবিলে পানির বোতল রেখে কি কাজে রান্নাঘরে গিয়েছিলেন মামী। বেরিয়ে আসতেই কানে গেল কথাটা। মামা তিন গোয়েন্দা পড়েন, তিনি পড়েন না। একথার মানেও জানেন না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী?
ভূত-থেকে-ভূতে, বললেন মামা। বুঝিয়ে দিলেন, এটা আমাদের তিন গোয়েন্দার একটা অসাধারণ আবিষ্কার। কোন জিনিস খুঁজতে হলে এর জুড়ি নেই। আমি চাকরি করার সময় এই পদ্ধতিটা যদি জানতাম, কতো যে সুবিধে হতো কি বলবো!
কিছুই বুছতে পারছি না তোমার কথা!
বেশ, বুঝিয়ে দিচ্ছি, বললেন চৌধুরী সাহেব। শুনলে হাঁ হয়ে যাবে। ধরো, তোমার গাড়িটা খুঁজে পাচ্ছে না। যতো পরিচিত বাড়ি আছে তোমার, ফোন করে ওসব বাড়ির ছেলেমেয়েদের জানিয়ে দাও খবরটা। বলবে, গাড়ির খোঁজ দিতে পারলে ভালো পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। আরও বলবে, ওদের বন্ধুদের যেন খবরটা জানায় ওরা। সবাইকে জানানোর দরকার নেই। ওদের পাঁচজন পাঁচজন করে। বন্ধুকে জানালেই চলবে। কি ঘটবে, বুঝতে পারছো?
কি আর এমন.. বলতে বলতে সত্যিই হাঁ হয়ে গেলেন মামী। বুঝে ফেলেছেন। সর্বনাশ! কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহরের সমস্ত ছেলেমেয়ে জেনে যাবে, যাদের টেলিফোন আছে!
ঠিক! তুড়ি বাজালেন চোধুরী সাহেব। ওরা ছুটবে তখন গাড়ি খুঁজতে। ওদের আরও অনেক বন্ধু আছে, যাদের টেলিফোন নেই। মুখে মুখে তাদের কানেও খটা চলে যাবে। ঢাকা শহরে থাকলে তখন গাড়িটা আর লুকিয়ে রাখা যাবে বেশিক্ষণ?
না, যাবে না! ছেলেদের দিকে তাকিয়ে স্নেহের হাসি হাসলেন। নাহ্, আছে তোদের। সত্যি
কিন্তু ভূত-থেকে-ভূতে ব্যবহার করে এখন কি লাভ? কচি জিজ্ঞেস করলো। কি খুঁজবে ওরা?
আর কোনো গাড়ির কাঁচ ওভাবে ভেঙেছে কিনা, জবাব দিলো কিশোর।
হু। তা জবাবটা দেবে কার ঠিকানায়? তোমরা এখানে এসেছে জানলে ঢাকা শহরের ছেলেমেয়ে আর থাকবে না। সব এসে ভেঙে পড়বে এই উত্তরায়। তোমাদের দেখার জন্যে পাগল হয়ে যাবে সবাই।
এতোই পপুলার আমরা? গর্ব হচ্ছে মুসার।
টেলিফোন করেই দেখো না, হাসলো কচি।
হোক না পাগল, কিশোর বললো, অসুবিধে কি? ওদের সঙ্গে দেখা করতেই তো এসেছি আমরা। তবে একটা কাজ করা যায়। এখানে এসে ভিড় করার দরকার নেই। শিডিউল করে নিয়ে একেক দিন একেক পাড়ায় আমরাই দেখা করতে যাবো, জানিয়ে দিলেই হবে। কচির দিকে তাকালো সে, তোমাদের ফোন আছে?
আছে।
সারাক্ষণ ওটা ধরার কেউ আছে? মানে, বললে প্রতে পারবে?
পারবে, আমার ভাই, রচি। ইস্কুল এখন ছুটি। সারাদিন বাড়িতেই থাকে।
তাহলে ওর ওপরই দায়িত্বটা চাপানো যাক, কি বলো? এখানে তো সারাদিন। আমরা থাকবো না। নানা জায়গায় যাবো। অনেক ফোন আসবে, বুঝতে পারছি। ধরবে কে?
অসুবিধে হবে না, আশ্বাস দিলো কচি। রচিকে বলে দেবো। খুশি হয়েই কাজটা করবে ও।
.
০২.
রাত্রে মামা বললেন, তিনিও যাবেন সঙ্গে। গাড়ি বের করলেন। খাওয়া-দাওয়া শেষ। কিশোর বললো, নটার মধ্যে জায়গামতো পৌঁছে যাওয়া চাই। মামা আশ্বাস। দিলেন, তাতে অসুবিধে হবে না।
বিকেলেই কচির সঙ্গে গিয়ে জায়গাটা দেখে এসেছে তিন গোয়েন্দা।
গাড়ি রাস্তায় বেরিয়ে এলে কিশোর তার পরিকল্পনার কথা বললো। সাত নম্বর রাস্তার মোড়ে গাড়ি থেকে নেমে যাবে ওরা তিনজন। কচিকে নিয়ে মামা চলে যাবেন সেই জায়গাটায়, যেখানে রোজ পিকআপ পার্ক করে কচি। গাড়ি থেকে বেরিয়ে মামাকে জোরে জোরে বলবে সে, বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে, কাজেই দুটাখানেক দেরি হবে। মামা বলবেন, তিনিও গাড়ি রেখে কাছের চা-দোকানে চা খেতে যাচ্ছেন। তারপর কচি চলে যাবে বাড়ির দিকে, মামা চলে যাবেন। রেস্টুরেন্টের দিকে। যে বাড়িতে মাল সরবরাহ করে কচিরা সেখানে ঢুকে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার দরকার হলেও অসুবিধে হবে না তার। বাড়ির গিন্নির সঙ্গে ভালো খাতির। কিন্তু সে দিকে গেলেও আসলে বাড়িতে ঢুকবে না সে, অন্ধকারে কোথাও ঘাপটি মেরে থেকে চোখ রাখবে গাড়িটার ওপর। ততোক্ষণে পা টিপে টিপে রাস্তার অন্যপাশে চলে আসবে তিন গোয়েন্দা। লুকিয়ে থেকে ওরাও চোখ। রাখবে গাড়ির ওপর।
সাত নম্বর রাস্তার মোড়ে পৌঁছে গাড়ি থামালেন মামা। নেমে পড়লো তিন গোয়েন্দা। আবার এগিয়ে গেল গাড়ি, মোড় নিয়ে ঢুকে পড়লো গলিতে।
হেঁটে চললো তিন গোয়েন্দা। বিকেলেই দেখে গেছে লুকানোর অনেক জায়গা আছে এখানে। পথের একপাশে বাড়িঘর খুব পাতলা, ঝোঁপঝাড় আছে বেশ, খাদও আছে। একটা ঝোঁপের আড়ালে এসে বসে পড়লো ওরা। গাড়িটার দিকে চোখ।– দেখলো, একটা বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কচি। মামা চলে যাচ্ছেন মোড়ের। দিকে, চায়ের দোকানে গিয়ে বসে থাকবেন।
ছায়ায় মিলিয়ে গেল কচি।
ওই পথ ধরে প্রথম একজন মহিলাকে আসতে দেখলো ওরা।
আসছে, ফিসফিসিয়ে বললো মুসা।
বিদেশী মহিলা। মনে হয় হাওয়া খেতে বেরিয়েছিলো। বেশ লম্বা। পরনে জিনস, গায়ে গলাবন্ধ সোয়েটার। হাতে একটা চকচকে কালো লাঠি, হাতলটা রূপোয় বাধানো। সঙ্গে সঙ্গে আসছে বিশাল একটা কুকুর। জানোয়ারটা খুব অস্থির। এটা শুঁকছে, ওটা শুঁকছে, এদিকে চলে যাচ্ছে, ওদিকে চলে যাচ্ছে। কাছাকাছি রাখার জন্যে ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে যাচ্ছে মহিলা।
গাড়িটার কাছে এসে টায়ার হুঁকতে লাগলো কুকুরটা। মহিলাও দাঁড়িয়ে গেল।