হ্যাঁ। আব্বা আনিয়ে দিয়েছে আমেরিকা থেকে। আমার শখ দেখে। সিবি রেডিও, হ্যাম রেডিও, টিভি, সব কিছুরই অ্যান্টেনা হিসেবে ব্যবহার করি আমি ডিশটা।
আমাদের কথা শোনার জন্যে টেলিফোন লাইনে ওয়্যারট্যাপ আপনিই লাগিয়েছিলেন?
না। সানি লাগিয়ে দিয়েছে। ও আমাকে ভালোবাসে। সে জন্যে যা করতে বলি তা-ই করে। আমার ড্রাগ নেয়ার কথাও জানে। অনেক চেষ্টা করেছে। ছাড়ানোর জন্যে। আমি মানা করেছি, তাই বলেনি আব্বাকে। গোপন রেখেছে।
এখন কোথায় সে?
বাইরে কোথাও গেছে।
আচ্ছা, আপনার আব্বা আমাদেরকে কাজে লাগাতে চান একথা বলে ফোনটা। করেছিলো কেন সানি? জবাবের অপেক্ষা না করে নিজে নিজেই বললো কিশোর, নিশ্চয় নিজেদেরকে সন্দেহমুক্ত রাখতে চেয়েছিলেন। অপরাধী প্রায়ই ভাবে, এই বুঝি কেউ তাকে সন্দেহ করে বসলো। আপনারও হয়েছিলো সেই অবস্থা। আপনি ধরেই নিয়েছিলেন, আমরা আপনাকে সন্দেহ করছি। শিওর হওয়ার জন্যেই আসলে সেদিন ওকে দিয়ে ফোন করিয়ে আমাদের বাড়িতে ডেকে এনেছিলেন? তাই না?
আস্তে মাথা ঝাঁকালো শুধু ডলি।
মোহর যে রাতে চুরি করেছেন, বলে গেল কিশোর, সে রাতে আপনিই গাড়ি চালিয়েছিলেন। আপনার আব্বা ভুলে বাক্সটা ফেলে রেখে চলে গেলেন। এই ফাঁকে আপনি তুলে নিলেন বাক্সটা। এতোই ছোট ওটা, যে জানে সে ছাড়া অন্ধকারে আর কারও চোখে পড়ার নয়। লুকিয়ে ফেললেন বাক্সটা। তারপর ভাঙলেন গাড়ির কাঁচ। ভাবখানা এমন, যেন অন্য কেউ এসে ভেঙে দিয়ে গেছে। গাড়ির কাঁচ ভাঙা যাচ্ছিলো কয়েক মাস ধরে, সেটা জানা ছিলো আপনার। সময় মতো সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন।
চুপ করে রইলো ডলি।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। এইই হয়। ড্রাগের নেশা এমনই ভয়ঙ্কর সে জিনিস পাওয়ার জন্যে সব কিছু করতে রাজি মানুষ। হিতাহিত জ্ঞান। হারিয়ে ফেলে। নিজের বাপের জিনিসও চুরি করতে বাধেনি আপনার। আপনার
জন্যে সত্যিই দুঃখ হচ্ছে আমার, মিস খান! মুদ্রাটা কি বিক্রি করে ফেলেছেন?
মাথা নাড়লো ডলি। এখনও বিক্রি করতে পারেনি।
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, তো, এখন কি জিনিসটা বের করে দেকেন? দেখতাম।
নীরবে উঠে দাঁড়ালো ডলি।
তার পেছনে চললো সবাই।
সোজা পাশের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো মেয়েটা। এগোলো স্যাটেলাইট ডিশ্নে দিকে। ওটার কাছে এসে থামলো। কারো দিকে না তাকিয়ে ঝুঁকে বসে হাত ঢুকিয়ে দিলো ডিশের নিচে। টেপ দিয়ে আটকানো রয়েছে মুদ্রাটা। টেনে টেপ ছিঁড়ে খুলে আনলো ওটা। বাড়িয়ে দিলো কিশোরের দিকে।
.
১৮.
বিকেলে বাগানে চেয়ার পেতে বসেছে সবাই। আরিফ সাহেব, ওসি সাহেব, তিন। গোয়েন্দা আর কচি। মামী রান্নাঘরে ব্যস্ত। কাঁচ ভাঙার রহস্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বেশির ভাগ কথা কিশোরই বলছে। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করছেন ওসি সাহেব।
আচ্ছা, কিশোর, জিজ্ঞেস করলেন তিনি, কি ভুলটা করেছিলো ডলি, যে জন্যে তোমার সন্দেহ হলো কচি যে ভাঙে সে মোহর চোর নয়?
দুটো কারণে, জবাব দিলো কিশোর। প্রথমত, পেছনের কাঁচ ভেঙেছে ডলি। আর দ্বিতীয় কারণ, ওদের গাড়িটা টয়োটা নয়। রনটু শুধু টয়োটার কাঁচই ভাঙতো। এ ব্যাপারটা জানা ছিলো না ডলির। ফলে ভুলটা করে বসেছে। বুঝে গেলাম একটা কপিক্যাট ক্রাইম ঘটেছে। পেছনের সীটে রাখা ছিলো বাক্সটা, তাই সেদিকের কাঁচটাই ভেঙেছে সে। কিন্তু রনটু ভাঙতে সামনের কাঁচ, উইগুশীল্ড।
আনাড়ি কপিক্যাট, মুচকি হাসলেন আরিফ সাহেব। বোকার মতো কাজ করে ব্রাটা পড়লো।
আরও একটা বোকামি করেছে আমাদের ফোন করে। এরকম করেই ব্রা পড়ে অপরাধী, এ-তো জানা কথাই। আকবর সাহেবের বাড়ি গিয়ে দুটো ব্যাপার জানলাম। একঃ আকবর সাহেব আমাদেরকে তদন্তে নিয়োগ করতে বলেননি। তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনাই করেনি ডলি আর সানি।
আর দ্বিতীয় ব্যাপারটা? মুসার প্রশ্ন।
হাফ-হাতা ব্লাউজ পরেছিলো সেদিন ডলি, নিশ্চয় মনে আছে তোমাদের?
কি জানি! মাথা চুলকালো মুসা।
মাথা নাড়লো রবিন, না, খেয়াল করিনি। কিন্তু তাতে কি?
গোয়েন্দাগিরি করছ এতোদিন, খেয়াল করা উচিৎ ছিলো, সুযোগ পেয়েই খানিকটা উপদেশ ঝেড়ে দিলো গোয়েন্দাপ্রধান। ডলির হাতে ইঞ্জেকশনের সুচের দাগ। প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পরে সন্দেহ জাগলো। ধীরে ধীরে বুঝে ফেললাম, কে, কেন চুরি করেছে মুদ্রাটা।–
দরজায় দেখা দিলেন মামী। ডেকে বললেন, এই কিশোর, তোর ফোন।
ফোন? ভুরু কুঁচকালো মুসা। এখন আবার কে ফোন করলো?
দেখে আসি, উঠে দাঁড়ালো কিশোর।
কয়েক মিনিট পরে ফিরে এলো হাসিমুখে। চোখে জিজ্ঞাসা নিয়ে তার দিকে তাকালো মুসা, রবিন আর কচি।
দাওয়াত, খবরটা জানালো কিশোর। দাওয়াত দিয়েছে গোড়ানের ছেলেরা। একটা ক্লাব করেছে ওরা, নাম দিয়েছে তিন গোয়েন্দা ক্লাব।
কি বলেছো? জানতে চাইলো কচি, যাবে?
নিশ্চয় যাবো। আগামী তেরো-চোদ্দ দিন প্রত্যেকটা পাড়ায় গিয়ে সবার সঙ্গে পরিচয় করবো। ওরা যে টেলিফোনের মাধ্যমে একটা অন্যায় কাজ বন্ধ করতে সাহায্য করেছে সে গল্প বলতে হবে না ওদেরকে?
কাল আমাকেও নিয়ে যেও, একদিন ফার্মে কাজ না করলে কিছু হবে না, বললো কচি। ওর হাতে শোভা পাচ্ছে পিকআপের চাবি।
নিশ্চয়।
সুখেই আছো, দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ওসি সাহেব। ইস, বিশটা বছর যদি কমে যেতো বয়স আমার, ভিড়ে যেতাম তোমাদের দলে! এই কাজকর্ম, দায়িত্ব, টেনশন আর ভালো লাগে না!