বাড়িটায় গিয়ে ঢুকলো সে।
ঘড়ি দেখলো মুসা। গাড়ির নম্বরটা নিয়ে রাখা দরকার। পুলিশ আসার আগেই চলে যেতে পারে।
নোটবুকে নম্বর লিখছে মুসা, এই সময় ঝটকা দিয়ে খুলে গেল চত্বরে বেরোনোর দরজা, প্রায় ছুটে বেরিয়ে এলো লম্বা লোকটা। দ্রুতপায়ে চত্বর পেরিয়ে এগোলে মূসা আর রবিন যে গুদামটায় লুকিয়ে আছে সেটার দিকে।
আরি, এদিকেই তা আসছে! আঁতকে উঠলো রবিন।
লুকানোর জায়গা খুঁজতে শুরু করলো দুজনেই।
জলদি! মুসা বললো, শেলফের নিচে!
দরজার কাছেই একটা বড় বাক্সের পেছনে শেলফের নিচে কিছুটা খালি জায়গা পাওয়া গেল লুকানোর মতো। হামাগুড়ি দিয়ে কোনোমতে তার মধ্যে গিয়ে ঢুকলো দুজনে।
এতো জোরে দরজা খুললো তরুণ, দড়াম করে গিয়ে পাল্লাটা বাড়ি খেলো দেয়ালের সঙ্গে। কোনো দিকে না তাকিয়ে দুটো শেলফের মাঝখান দিয়ে পেছন– দিকে প্রায় দৌড়ে গেল সে। ওর জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দও কানে আসছে গোয়েন্দাদের। আবার যখন বেরিয়ে এলো, মাথায় ক্যাপ পরা, বিচিত্র। চশমাটা ঝুলছে গলায়, সাইকেল চালানোর কাপড়গুলো ঢোকানো ব্যাকপ্যাকে। ব্যাগটা ঝুলছে সাইকেলের হ্যান্ডেলবারে।
সমস্ত প্রমাণ নিয়ে যাচ্ছে! হিসিয়ে উঠলো মুসা। নষ্ট করে ফেললে গেল! আর প্রমাণ করা যাবে না সে-ই কাঁচ ভাঙতো!
থামানো তো যাবে না! যা খুশি করে বসতে পারে!
কিন্তু ততক্ষণে বেরোতে শুরু করে দিয়েছে মুসা। একবার দ্বিধা করে রবিনও তাকে অনুসরণ করলো।
জিনিসগুলো গাড়িতে তুলছে ব্যাটা! আরেকবার হিসিয়ে উঠলো মুসা।
গাড়ির পেছনের বুটে সাইকেলটা ঢোকানোর চেষ্টা করছে ও।
আমার কাছে তো মোটেও ভয়ঙ্কর লাগছে না লোকটাকে, মুসা বললো। অতো ভয় পাচ্ছি কেন? রবিন প্রতিবাদ করার আগেই লাফিয়ে উঠে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল সে।
তাকে দেখেই সাইকেলটা ফেলে দিলো লোকটা। তাড়াতাড়ি গিয়ে উঠে বসলো গাড়িতে। ছুটতে শুরু করলো মুসা।
ফিরে তাকালো আবার লোকটা। জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ডান হাত। হাতে ধরা বিকট চেহারার একটা পিস্তল।
মুসার দিকে তাক করেছে!
১৫.
মডার্ন গ্লাস কোম্পানি! ভুরু কুঁচকে বললেন আরিফ সাহেব। অসম্ভব! কিশোর, ওটার মালিককে আমি ভালো করেই চিনি। ভদ্রলোক।
কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, জোর গলায় বললো কিশোর। মুসা আর রবিন দেখতে পেয়েছে।
ভুল করছিস না তো?
না।
এক মুহূর্ত গম্ভীর হয়ে রইলেন আরিফ সাহেব। চুপচাপ ভাবলেন। তারপর হাত বাড়ালেন ফোনের দিকে।
তিনি যতোক্ষণ থানার সঙ্গে কথা বললেন, ততক্ষণ অস্থির হয়ে পায়চারি করলো কিশোর। সোফায় বসে উসখুস করছে উত্তেজিত কচি। ঘড়ি দেখছে বার বার। শেষে আর থাকতে না পেরে বলেই ফেললো, কিশোর, ওরা কোনো বিপদে পড়বে না তো?
এসব কাজে সব সময়ই বিপদ থাকে, ভারি গলায় জবাব দিলো কিশোর। বিশেষ করে যখন কোনো প্রমাণ আটকাতে যাও তুমি। আর সেই সাথে যুক্ত থাকে লাখ লাখ টাকার ব্যাপার।
এই সময় রিসিভার রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আরিফ সাহেব। বললেন, ও রেডি। চলো, থানায় যাবো। আমরা গেলেই ওরা রওনা হবে।
তুমি শিওর তো, কিশোর? কাঁচ কোম্পানির দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলেন সার্জেন্ট। কোম্পানির কোনো লোকেরই কাজ এসব?
এছাড়া আর কি? শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। ভালোমতো ভাবলে। আপনারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন। ওরাই একমাত্র কোম্পানি, যারা টয়োটা গাড়ির কাঁচ আমদানী করে। কাঁচ ভাঙলে নতুন কাঁচ লাগাতেই হবে, নইলে গাড়ি চালানো যায় না। যতো বেশি কাঁচ বিক্রি করতে পারবে ততো বেশি লাভ কোম্পানির।
শরাফত সাহেব্বে মতো ভদ্রলোক এরকম কাজ করবেন, আমার বিশ্বাস হয় না।
হয়তো তিনি জানেনই না যে এসব ঘটছে। আর হয়তো বলছি কেন, সত্যি তিনি জানেন না। ব্যাপারটা ফাস হয়ে গেল কেলেঙ্কারি হবে, তাঁর ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ির কাঁচ কিছু বেশি বিক্রি হলে লাভ হবে বটে, কিন্তু যেটুকু হবে, জানাজানি হয়ে গেলে ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশি। সামান্য ওই লাভের জন্যে তিনি পুরো ব্যবসার ওপর ঝুঁকি নেবেন না।
ঠিকই বলেছিস তুই, কিশোর, আরিফ সাহেব বললেন। জীপে পুলিশের গাড়িতে না বসে আরিফ সাহেরে গাড়িতেই বসেছেন ওসি সাহেব। জীপে অন্যান্য পুলিশদের সঙ্গে রয়েছেন সার্জেন্ট আবদুল আজিজ। রেডিওতে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন তিনি।
মডার্ন গ্লাস কোম্পানির কাছে চলে এলো ওরা। কিশোর বললো, পাশের দরজাটা দেখছি খোলাই আছে।
মাথা ঝাঁকালেন ওসি। রেডিওতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন সার্জেন্টকে। গ্লাস কোম্পানির পাশের গেটের দিকে ঘুরলো পুলিশের জীপ, এই সময় শাঁ করে বেরিয়ে এলো একটা নীল রঙের টয়োটা। পুলিশ দেখে যেন চমকে গেল। বেসামাল হয়ে গেল ক্ষণিকের জন্যে, ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষলো ড্রাইভার। তারপর শাঁই শাই স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে টায়ারের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ তুলে, অনেকখানি রবার ক্ষয় করে না ঘুরিয়ে ফেললো অন্যদিকে।
গেট দিয়ে ছুটে বেরিয়ে এলো রবিন। পুলিশের গাড়ি দেখেই বুঝে গেল যা বোঝার। পাগলের মতো চিৎকার করে দুই হাত শূন্যে তুলে নাড়তে শুরু করলো। নীল গাড়িটা দেখিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, মুসাকে ধরে নিয়ে গেছে! মুসাকে ধরে নিয়ে গেছে!
রেডিওতে চিৎকার করে উঠলেন ওসি, ধরো,ধরো, গাড়িটাকে থামাও!