হ্যাঁ, তা ঠিক, একমত হলো কচি।
আসলে এই লোকটা পাগল-টাগল কিছু না, কিশোর বললো। খুব বুদ্ধিমান। কাঁচও ভাঙছে, আবার অত্যন্ত চালাকির সঙ্গে লুকিয়ে রাখছে নিজেকে।
তাহলে হয়তো প্রতিশোধ, রবিন বললো। কি বলো?
কার ওপর?
গাড়ি কোম্পানির ওপর।
সেটা আমেরিকায় কিংবা জাপানে হতে পারে, যেখানে গাড়ি তৈরি হয়। কোম্পানিতে কোম্পানিতে রেষারেষি থাকলে, প্রতিযোগিতা থাকলে সেটা ভাবা। যেভো, যদিও গাড়ি কোম্পানির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান এতো বাজে কাজ করবে না। আর বাংলাদেশে যেখানে গাড়ি তৈরিরই কোন কোম্পানি নেই, সেখানে। এসবের প্রশ্নই ওঠে না।
তাহলে ওই কথাই ঠিক। গাড়ির মালিকদের ওপরই লোকটার রাগ।
অনেক গাড়ির কাঁচ ভাঙা হয়েছে, নথি, কিশোর বললো। এতোগুলো মানুষের ওপর রাগ কিংবা ঘৃণা কোনটাই থাকতে পারে না একজনের।
তাহলে পাগলই, মুসা বললো।
কিন্তু পাগলের মতো আচরণ তো করছে না, প্রতিবাদ করলো কচি।
তাহলে আমি ফেল, দুহাত নাড়তে নাড়তে বলল মুসা। হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, কেন ভাঙে শয়তানটাই জানে!
কিশোর, সামনে ঝুঁকলো রবিন, ঈগলের ব্যাপারটা এর মধ্যে আনছি না। কেন? এমনও তো হতে পারে সমস্ত সূত্র লুকিয়ে আছে ওটার মাঝেই? অন্য সব গাড়ির কাঁচ ভাঙা তার কাছে একটা বাহানা মাত্র। আসলে ভাঙতে চেয়েছে ওই একটা গাড়িরই কাঁচ, যেটাতে মুদ্রা ছিলো। আর মুদ্রা চুরির ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যে, মানে, পুলিশের চোখ অন্য দিকে সরানোর জন্যেই এতোগুলো গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে।
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলালো কিশোর। তোমার কথায় যে যুক্তি একেবারেই নেই তা নয়। তবে সেক্ষেত্রে কাঁচ ভেঙে আরও জিনিস চুরি করতো, যাতে সবাই মনে করে কাঁচ ভাঙাই হয় চুরি করার জন্যে। সাধারণ চুরির মধ্যেই পড়ে গেছে মুদ্রা চুরির ব্যাপারটাও। তাই না?
তাহলে… আবার ভাবতে আরম্ভ করেছে মুসী। কথা শেষ করলো না।
আর কি কারণ হতে পারে? মুসার কথাটাই যেন শেষ করলো কচি।
আমিও আর কিছু ভেবে পাচ্ছি না, মাথা নাড়লো রবিন।
ভাবলে আরও অনেক সম্ভাবনা বেরিয়ে আসতে পারে, কিশোর বললো। তবে মুসার কাল রাতের একটা কথা আমার কাছে খুব মূল্যবান মনে হয়েছে।
আমি বলেছি! মুসা অবাক। কাল রাতে?
হ্যাঁ, বলেছো। তুমি বলেছো, গাড়ির কাঁচ ভেঙে কার কি লাভ?
চোখ মিটমিট করতে লাগলো অন্য তিনজন।
লাভ? ভুরু কুঁচকে বললো কচি। গাড়ির কাঁচ ভেঙে লাভ?
বুঝেছি! তুড়ি বাজিয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো মুসা। তারপর বসে পড়লো। আবার ধীরে ধীরে। ঠিক, লাভ! তাদের লাভ, যারা গাড়ির জানালার কাঁচ বানায়, কিংবা সাপ্লাই দেয়!
ঠিক, ঠিক! রবিনও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে নিশ্চয় ওরকম কাঁচ তৈরির কোন কোম্পানি নেই। বাকি রইলো যারা সাপ্লাই দেয়। বিদেশ থেকে আমদানী করে। আর নিশ্চয় ওই-কাঁচ আমদানী কোন একটা প্রতিষ্ঠানই করে থাকে। একচেটিয়া ব্যবসা।
ঠিক এই কথাটাই আমি বলতে চাইছি, নথি, হাসিমুখে বললো কিশোর। যারা কাঁচ আমদানী করে। গাড়ির কাঁচ ক্রমাগত ভাঙতে থাকলে তাদেরই লাভ। কারণ কাঁচ ছাড়া গাড়ি চালানো সন্ত্র নয়। বাধ্য হয়েই নতুন আরেকটা লাগাতে হবে মালিককে। আরও একটা ব্যাপার কি লক্ষ করেছো? শুধু টয়োটা গাড়িরই কাঁচ ভাঙে। তারমানে শুধু টয়োটার কাঁচই আমদানী করে তারা।
তেমন প্রতিষ্ঠান আছে এদেশে? কচির প্রশ্ন। খোঁজ লাগাতে হয়।
নিশ্চয় আছে। সকালে সেটা খুঁজতেই বেরিয়েছিলাম, কিশোর বললো। কয়েকটা মেকানিক শপে খোঁজ নিয়েছি। সবাই একটা নামই বললো। গাড়ির ওই কাঁচ একটা কোম্পানিই আমদানী করে। মডার্ন গ্লাস কোম্পানি।
.
১৩.
লাল রঙা একটা পাকা বাড়ি। একতলা। পেছনে আরও তিনটে বাড়ি, পাকা দেয়াল, ওপরে টিনের চাল। এক সীমানার মধ্যেই বাড়িগুলো, কাঁটাতারের ছয় ফুট উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা। এই হলো মডার্ন গ্লাস কোম্পানি। জায়গাটা শহরের বাইরে, খিলক্ষেত এলাকায়। উত্তরা এবং গুলশানের মাঝামাঝি, দুটো জায়গা থেকেই বেশি দূরে নয়। সামনের দিকে মূল গেট ছাড়াও ডেলিভারি ট্রাক আর কর্মচারীদের ঢোকার জন্যে আরেকটা গেট আছে একপাশে। সামনের বিল্ডিংটায় অফিস আর শো রুম। পেছনের টিনের চালাওয়ালাটা গুদাম। লাল বাড়িটার পাশে বেশ ছড়ানো একটা চত্বর রয়েছে। ওখানে গিয়ে ট্রাক কিংবা অন্য গাড়ি দাঁড়ায়, মাল বোঝাই করার জন্যে। গাড়ি পার্ক করার জায়গাটা এখন অর্ধেক খালি।
কোম্পানির মালিকই কি কাঁচ ভাঙে? প্রশ্ন করলো রবিন।
ঠিক নেই, জবাব দিলো কিশোর। তবে সে সম্ভাবনাও কম।
পাশে ছোট একটা মার্কেট তৈরি হচ্ছে। ওটার হাতে দাঁড়িয়ে কাঁচ কোম্পানির ওপর নজর রেখেছে তিন গোয়েন্দা আর কচি।
সেলসম্যানের কাজও হতে পারে, নিচের চত্বরের দিকে তাকিয়ে বল না কিশোর। যতো বেশি কাঁচ বিক্রি করবে ততো বেশি কমিশন পাবে। কমিশনের লোভেই হয়তো ভাঙে। কিংবা নতুন সেলসম্যান রাখা হয়েছে। মালিককে খুশি করার জন্যে সে এই কাজ করে বা করায়। অন্য কোন কর্মচারীর কাজও হতে পারে। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক কাঁচ বিক্রি না হলে চাকরি খোয়ানোর ভয় আছে। হয়তো তার।
সেটা জানবো কিভাবে? কচি বললো। চেহারাই তো দেখিনি।
চেহারা না দেখলেও শরীর দেখেছি। লম্বা, পাতলা, সম্ভবত কম বয়েসী। বয়স্ক লোকেরা সাধারণত ওরকম টেন-স্পীড সাইকেল চালায় না।