হতাশায় গুঙিয়ে উঠলো মুসা। তাই তো! জানি ওই ব্যাটাই শয়তান, কিন্তু ধরতে পারছি না!
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। রহস্যের সমাধান আমরা করেছি। কিন্তু অপরাধীকে ধরতে পারলাম না।
চুপ করে ভাবতে লাগলো চারজনে।
ঘড়ির দিকে তাকালো মুসা, আর বসে থেকে কি লাভ? চলো, শুতে যাই।
হ্যাঁ,তাই চলো, আফসোস করে বললো রবিন। এই কেস এখানেই শেষ। গাড়ির কাঁচও আর ভাঙবে না, লোকটাকেও ধরতে পারবো না।
তোমাদের তো কিছু হবে না, ক্ষতিটা হলো আমার, বিষণ্ণ কণ্ঠে বললো। কচি। চেহারা দেখে মনে হলো কেঁদে ফেলতো, লজ্জায় পারছে না। মস্ত ক্ষতি। আব্বাকে কিছুতেই বোঝাতে পারবো না, আমার সঙ্গে শত্রুতা করে নয়, চুরি করার জন্যে গাড়ির কাঁচ ভাঙে একটা চোর! ড্রাইভিং লাইসেন্স করাটাই সার হলো আমার! গাড়ি আর চালাতে পারবো না!
বিদায় নিয়ে বাস ধরতে চললো কচি।
.
১২.
পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো এনায়েত। উল্লাহ। চোখে অবিশ্বাস। বললো, বলিস কি? এয়ার পিস্তল দিয়ে কাঁচ ভাঙে?
হ্যাঁ, আব্বা, তাই। কাল রাতে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে কিশোর। ভূত থেকে-ভূতের সাহায্যে কিভাবে সাইকেলওয়ালার কাঁচ ভাঙার খবর জেনেছে সব কথা বাবাকে খুলে বললো কচি।
ভূত-থেকে-ভূতে! নামটা ভালোই দিয়েছে। আইডিয়াটাও চমৎকার! বুদ্ধি। আছে ছেলেটার, হাসলো এনায়েত উল্লাহ। তা পুলিশের কাছে মুখ খুলেছে। চোরটা?
পুলিশকে বলা হয়নি এখনও।
বলা হয়নি? ভ্রুকুটি করলো এনায়েত উল্লাহ। কেন? তোরা নিজেরাই ধরার চেষ্টা করবি নাকি?
না।
তাহলে?
লোকটা কে তা-ই জানি না আমরা এখনও, আরেক দিকে তাকিয়ে বললো কচি। ওর নাম জানি না, কোথায় থাকে জানি না, বিদঘুঁটে টুপি আর গগলস পরে থাকে বলে চেহারাও দেখতে পারিনি।
জানিসই না লোকটা কে? ভুরু কোঁচকালো এনায়েত উল্লাহ।
না, ধরতে পারলে তবে তো জানবো। তার আগেই পালালো। তবে…তবে, আমার মনে হয় কিশোর যেভাবেই হোক বের করে ফেলবে..পারবে ও! পারবেই!
হু, কচির মতো এতোটা আশা করতে পারলো না এনায়েত উল্লাহ। আবার খাওয়ায় মন দিলো। দেখ, পারে যদি ভালো। তবে যতোক্ষণ আমাকে প্রমাণ দেখাতে না পারছিস, গাড়ির চাবি আমি তোক দিচ্ছি না।
মুখ কালো করে নাস্তা শেষ করলো কচি। তারপর রওনা হলো কিশোরদের ওখানে। সারারাত অনেক ভেবেছে সে। লোকটাকে ধরার মতো কোনো উপায় বের করতে পারেনি। আশা করছে তিন গোয়েন্দার মাথা থেকে কোনো বুদ্ধি বেরোবে।
গেট দিয়ে ঢুকেই দেখলো কচি, বাগানে রোদ পোহাচ্ছে রবিন আর মুসা। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কিশোর কই?
সেটা তো আমাদেরও প্রশ্ন, মুসা বললো।
বাড়িতে নেই, রবিন জানালো। ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম নেই। আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম। বাইরে যাচ্ছে বলে নাকি বেরিয়ে গেছে কিশোর। কোথায় যাবে বলে যায়নি। তারপর থেকে এই বসেই আছি।
একটা চেয়ারে বসলো কচি। সাইকেলওয়ালাকে পাকড়াও করার কোন উপায় করতে পেরেছো? কোন বুদ্ধি-টুদ্ধি?
নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো দুই সহকারী গোয়েন্দা।
আধ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। তবু কিশোর ফিরলো না।
আরও পাঁচ মিনিট পর দেখা গেল তাকে। ঢুকছে গেট দিয়ে।
কিশোওর! চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো মুসা।
কোথায় গিয়েছিলে? রবিন বললো। সারাটা সকাল তোমার জন্যে বসে– আছি।
হাসলো কিশোর। আসলে ঠিকমতো আলোচনা করতে পারলে কাল রাতেই সমস্যার সমাধান করে ফেলা যেতো। মাঝরাতে হঠাৎ খিদেয় ঘুম ভেঙে গেল। রাতে কম খেয়েছিলাম। তুমি আর মুসা জিজ্ঞেস করেছিলে না, গাড়ির কাঁচ কেন ভাঙে সাইকেলওয়ালা?
কেন! প্রায় একই সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো অন্য তিনজন।
সেটাই আলোচনা করবো এখন, হাসলো গোয়েন্দাপ্রধান। এখন আমাদের বুঝতে হবে কেন উইশীল্ড ভাঙে। আর তাহলেই জেনে যাবো লোকটা কে।
নীরবে বসে রইলো তিন শ্রোতা। একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর তাকালো কিশোরের মুখের দিকে।
আমি কিছুই বুঝতে পারবো না, সাফ জানিয়ে দিলো রবিন।
কচি বললো, না হয় কারণটা জানা গেলই, তাতে লোকটাকে চিনবো কিভাবে? যে কেউ এ কাজ করে থাকতে পারে।
জানা যাবে, দৃঢ়কণ্ঠে বললো কিশোর। গাড়ির কাঁচ কেন ভাঙে জানতে পারলে এটাও বুঝে যাবো কোন জায়গায় তাকে খুঁজতে হবে।
কি যে বলো কিছুই বুঝতে পারি না, অনুযোগের সুরে বললো মুসা। ঠিক আছে, তোমার কথাই সই। মেনে নিলাম, উইশীল্ড কেন ভাঙে বুঝতে পারলেই সমস্যার সমাধান হবে। এখন বলো, কেন ভাঙে? গাড়ির কাঁচ পছন্দ করে না বলে?
নাকি সে গাড়িই পছন্দ করে না? হিংসা? কেন লোকে চালাবে, আমি পারবো না, ওরকম কিছু? রবিনের প্রশ্ন। সে জন্যেই গাড়ির ক্ষতি করে?
না, মাথা নাড়লো কিশোর, ওসব নয়। তাহলে গাড়ির শুধু একটা বিশেষ কাঁচই ভাঙতো না। সব ভেঙে দিতো। কিংবা গাড়ির অন্য ক্ষতিও করতো। কিন্তু তা না করে যেন প্ল্যান করে খুব সাবধানে একটা করে কচি ভাঙে। এমন একটা ভাব করে রাখতে চায়, যাতে লোকে মনে করে ব্যাপারটা নিছকই দুর্ঘটনা।
পাগল হতে পারে, মুসা বললো, সেয়ানা পাগল। কাঁচ ভাঙতে ভালোবাসে, আবার ধরাও পড়তে চায় না।
পাগলের অতো সূক্ষ্ম বুদ্ধি হবে না, কিশোর মানতে পারলো না মুসার কথা। হ্যাঁ, বড়লোকের ওপর অনেকের রাগ থাকে, তাদের ক্ষতি করতে পারলে খুশি হয়। আর রেগে গিয়ে মানুষ যখন কোন কাজ করে বুদ্ধি তখন ঘোলা হয়ে যায়। বোকামি। কিংবা ভুল করে বসে। ওরকম কারো কাজ হলে এতোদিনে ধরা পড়ে যেতো।