কেন এই সাবধানতা? মুসার জিজ্ঞাসা। ছেলেমেয়েরা যে তার ওপর চোখ। রেখেছে, টের পেয়েই কি পালালো?
আমার তা-ই ধারণা।
কিভাবে জানল? কচির প্রশ্ন।
তার ওপর যে চোখ রাখা হয়েছে, এটা বলে দেয়া হয়েছে তাকে। তাড়াতাড়ি কাঁচ ভাঙা বাদ দিয়ে পালিয়েছে যখন, এছাড়া আর কোন কারণ নেই।
কিন্তু সতর্ক করলো কি ভাবে? সন্দেহ যাচ্ছে না কচির।
কোনো ভূত হয়তো চেনে তাকে। বলে দিয়েছে, রবিন অনুমান করলো।
উঁহু, তা নয়, মাথা নাড়লো কিশোর। আস্তে আস্তে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে ন্টআসছে। অন্য কোনো ভাবে জেনেহে আমাদের কথা। যেভাবে সব সময় সে জেনে যায় কোন রাস্তায় পুলিশ যাচ্ছে তার ওপর নজর রাখার জন্যে। নিশ্চয় হুঁশিয়ার করা হয় তাকে, হেডফোনের মাধ্যমে।
তার কানে লাগানে হেডফোন?
সিবি রেডিও! বললো মুসা।
নাকি হ্যাম রেডিও! রবিন বললো।
যে রেডিওই হোক, সেটা পুলিশের ওয়্যারলেসে বলা কথা ধরতে পারে, বললো কিশোর। থানার সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখে ডিউটিতে থাকা পুলিশ। অফিসার, রেডিওর মাধ্যমে। ওই ধরনের যন্ত্র আর কারও কাছে থাকলে তার পক্ষেও সেই কথা শোনা সম্ব। একই ওয়েভলেংথে টিউন করে রাখে সে রেডিও। পুলিশের কথাবার্তা সব শোনে। হুঁশিয়ার হয়ে যায়। যে রাস্তায় পুলিশ থাকে সেখানে আর কাঁচ ভাঙতে যায় না। আজ রাতেও রেডিওতেই কেউ তাকে সাহায্য করেছে।
কিন্তু কিশোর, প্রতিবাদ করলো, ভূত-থেকে-ভূতের খবর শুধু আমরা। চারজনই জানি।
ঠিক, একমত হয়ে বললো মুসা। আমাদের সঙ্গে রসিকতা যে করলো সে কিভাবে জানলে? আর কি করেই বা জানলো কোন নম্বরে ফোন করতে হবে। আমাদের?
চলো, বোধহয় দেখাতে পারবো, কিশোর বললো। টর্চ আর একটা মই দরকার। গ্যারেজে লম্বা মই আছে, দেখেছি।
মিনিট কয়েক পর দল বেঁধে চললো চারজনে। টর্চ হাতে কিশোর চলেছে আগে আগে। পেছনে মই বয়ে নিয়ে চলেছে মুসা আর কচি। রবিন সাহায্য করছে। তাদের। সেই টেলিফোনের থামটার কাছে এসে দাঁড়ালো ওরা, যেটা থেকে লাইন। এসেছে আরিফ সাহেবের বাড়িতে।
টেলিফোন বক্সটা থামের মথাির কাছে। সেটা দেখিয়ে মুসাকে নির্দেশ দিলো। কিশোর, যাও, মই লাগিয়ে ওখানে উঠে যাও।
কি করবো উঠে?
বাক্স খুলে দেখো কি আছে। জানাবে আমাদের।
টর্চের পেছনে লাগানো কর্ডটা হাতে ঢুকিয়ে কনুয়ের কাছে ঝুলিয়ে নিয়ে মই বেয়ে উঠে গেল মুসা। বাক্সের দরজা খুলে ভেতরে আলো ফেললো। শুধু তো তার… না না, দাঁড়াও আরেকটা জিনিস আছে!
কী? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
আরো ভালো করে দেখলো মুসা। চিনতে পারছি না। চারকোণা খুব ছোট একটা বাক্সের মতো জিনিস। ধাতুর না প্ল্যাস্টিকের বোঝা যায় না। দুটো তার বেরিয়ে গেছে। বোধহয় টেলিফোনের তারের সঙ্গে জোড়া দেয়া হয়েছে। খুলে আনবো?
না। নেমে এসো।
মাটিতে নেমে আবার ওপরের বাক্সটার দিকে তাকিয়ে বললো মুসা, ওয়্যারট্যাপ, না? চৌধুরী আংকেলের লাইনের সঙ্গে লাগিয়ে দিয়ে আমাদের। কথাবার্তা শুনেছে। এভাবেই জেনেছে ব্যাটা ভূত-থেকে-ভূতের কথা।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। এটাই একমাত্র জবাব।
বাক্সটার দিকে রবিনও তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু শোনে কোত্থেকে? বাক্স থেকে তো আর কোনো তার বেরিয়ে যায়নি। মানে, স্বাভাবিক তারগুলো ছাড়া আর কিছু?
নিশ্চয় কোনো ধরনের রিমোট লিসেনিং ডিভাইস। রেডিওর মতো তার ছাড়াই সঙ্কেত পাঠায়। যে এই কাজ করেছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তার অসাধারণ জ্ঞান।
তারমানে আমাদের ওপর সর্বক্ষণ নজর রেখে চলেছে সে, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো রবিন।
রবিনের কথার মানে বুঝতে পারলো মুসা। তার দিকে তাকিয়ে গুঙিয়ে উঠলো।
মইটা নিয়ে আবার ফিরে চললো ওরা।
গ্যারেজে মই রেখে আবার ঘরে এসে বসলো ওরা। আরিফ সাহেব তখনও ফেরেননি। মামী রান্না তৈরীতে ব্যস্ত।
কিশোর বললো, সেদিন যে মামী একটা লোককে খাম্বায় উঠতে দেখেছিলো, আমার ধারণা ওই লোকই যন্ত্রটা লাগিয়েছে ফোন বক্সে।
কে সে? মুসার প্রশ্ন। আমাদের ওপর নজর রাখে কেন? কি চায়? কাঁ
কাচ ভাঙুরার অ্যাসিসট্যান্ট হতে পারে, কচি বললো।
ঠোঁট কামড়ালো কিশোর। তা পারে।
আসল ব্যাপারটা কি বলো তো? রবিন বললো, এতো আঁটঘাট বেঁধে এভাবে গাড়ির কাঁচ ভাঙার কি মানে? এয়ার পিস্তল, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, পুলিশ ব্যাণ্ড রেডিও, ওয়্যারট্যাপ…নাহ্, এতো সব জিনিসপত্র নিয়ে শুধু শুধু মজা করার। জন্যে কাঁচ ভাঙছে না!
ঠিক, আঙুল নাচালো মুসা। অন্য কোনো কারণ আছে। লাভজনক কিছু। নইলে এতো সব করতে যেতো না।
লাভজনক কাজই তো করে, কচি বললো। গাড়িতে অনেক সময় দামী জিনিস রেখে যায় লোকে। উইশীল্ড ভেঙে সেগুলো চুরি করে চোরটা। ওই যে। ঈগলটা যেমন করলো। অনেক দামী জিনিস। ওই একটা বিক্রি করলেই সারা জীবন। খেতে পারবে।
এদেশে ওই ঈগল বিক্রি করতে পারবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিশোরের দিকে তাকালো রবিন। কিশোর, তুমি কি বলো?
বলে আর কি হবে? এই কেস খতম।
হাঁ হয়ে গেল অন্য তিনজন। নীরবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে।
হ্যাঁ, এই কেস শেষ, আবার বললো কিশোর। লোকটাকে হারিয়েছি আমরা।
চুপ করেই রইলো তিন শ্রোতা।
আমরা এখন জানি টেন-স্পীডওলাই কাঁচ ভাঙে, কিশোর বললো। কিন্তু সে কে, জানি না। ওর নাম জানি না, পরিচয় জানি না, ওর সম্পর্কে কিছুই জানি না। অন্ধকারে তার চেহারাও দেখতে পারিনি ভালোমতো। সে জেনে গেছে, তার পরিচয় ফাস হওয়ার পথে, ফলে ডুব দেবে এখন। আর হয়তো গাড়ির কাঁচ ভাঙবে না। যদি না ভাঙে ধরবো কিভাবে?