নিশানা করেছে, না? বিড় বিড় করে বললো মুসা। পকেট হাতড়াচ্ছে। হ্যাঁ, আছে এখনও। যত্ন করেই রেখেছিলো। দু-আঙুলে ধরে বের করে আনলো। জিনিসটা। চোখের সামনে এনে ভালোমতো দেখলো। চিৎকার করে উঠলো হঠাৎ। বুঝেছি! কিশোর, এয়ার গানের গুলি! গুলি করে গাড়ির কাঁচ ভাঙে! শক্তিশালী কোনো এয়ারগান!
রচির কথা শুনছে আর নোটবুকে লিখে চলছে কচি, আঠারো নম্বর রোডে দেখা। গেছে সাইকেল চালককে। সবুজ রঙের একটা টয়োটার কাঁচ ভেঙেছে। সাইকেল। আরোহীকে কিছু করতে দেখা যায়নি।
এটাই শেষ তথ্য। ভাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিলো কচি।
মুসার কথাটা ভেবে দেখলো কিশোর। বললো, তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছে, সেকেণ্ড। শার্টের নিচে গানটা লুকিয়ে রাখে সে। এয়ার-পিস্তল। গাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় একটানে বের করে গুলি করেই আবার লুকিয়ে ফেলে। মাত্র কয়েক সেকেণ্ডের ব্যাপার। শব্দ হয় না তেমন। আর যা-ও বা হয় কাঁচ ভাঙার আওয়াজ সেটাকে ঢেকে দেয়, আলাদা করে বোঝা যায় না। অন্ধকারে দেখাও যায় না কিছু। কাঁচে লেগে চ্যাপ্টা হয়ে যায় গুলিটা। যদি জানা না থাকে কি খুঁজছে, তাহলে দেখলেও ওটা চোখে পড়বে না কারো।
এইবার পুলিশকে জানানো যায়! কচি বললো। আমার বাপ জানও এবার বিশ্বাস না করে পারবে না।
না, এখনও সময় হয়নি, কিশোর বললো। আগে হাতেনাতে ধরি ব্যাটাকে, তারপর।
কেন, এখন বললে… বাধা পেয়ে থেমে গেল মুসা। আবার বেজে উঠেছে টেলিফোন।
রিসিভার কানে লাগিয়েই চেঁচিয়ে উঠলো কচি, ধরে ফেলেছে! এই, আরেকবার বল রচি, কোন রাস্তায়!…সাতাশ নম্বর? ঠিক আছে তো? তিন গোয়েন্দার দিকে চেয়ে বললো সে, সাইকেলওয়ালাকে ধরে ফেলেছে পুলিশ! যাবে নাকি?
নিশ্চয় যাবো! বলে উঠলো রবিন।
মামা তো ঘরে নেই, কিশোর বললো উত্তেজিত কণ্ঠে। যাবো কিভাবে? এতো দূর যেতে…
গাড়ি নিয়ে যাবো, কচি বললো।
কার গাড়ি?
তোমার মামারটাই। ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে আমার মামীকে রাজি করাও।
প্রথমে রাজি হতে চাইলেন না মামী। পরে কিশোর যখন জোর দিয়ে বললো, বিশ মাইলের বেশি গাড়ির স্পীড ওঠাতে দেবে না কচিকে, তখন রাজি হলেন।
এ সময়ে রাস্তায় গাড়ির ভিড় তেমন নেই। খোলা হাইওয়ে। ইচ্ছে করলে উড়ে। যাওয়া যায়, কিন্তু কিশোরের চাপে ইচ্ছেটা দমন করতে বাধ্য হলো কচি। তবে বিশ মাইল গতিবেগে কিছুতেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারছে না সে। তিরিশ-পঁয়তিরিশে উঠে যাচ্ছে।
সাতাশ নম্বর রোডের মোড়ে এসে দেখলো পুলিশ নেই। সারা রাস্তায় কোথাও পুলিশ দেখা গেল না। লোকজনকে জিজ্ঞেস করলো কচি, একটু আগে এখানে কাউকে কোনো কারণে ধরেছিলো কিনা। কোনো বাড়ির দারোয়ান, কোনো দোকানদার, কিংবা কোনো পথচারীকেউই বলতে পারলো না ওরকম কিছু ঘটেছে এখানে। সবাই একবাক্যে বললো, সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশই দেখেনি এই রাস্তায়। এমনকি টহলদার পুলিশও না।
আশ্চর্য! রবিন বললো।
ব্যাপারটা কি? মুসার প্রশ্ন। ঠকানো হয়েছে আমাদেরকে! গম্ভীর হয়ে বললো কচি। চালাকি! শেষ ফোনটা রচি করেনি। করেছে অন্য কেউ। আমাদেরকে ফাঁকি দেয়ার জন্যে। ইস, তখন বুঝলাম না! গলাটা অন্যরকম লাগছিলো সে জন্যেই!
১১.
কিন্তু কেন? নীরব পথের এমাথা-ওমাথা দেখছে গোয়েন্দা-সহকারী। যেখানে। পুলিশ আর মানুষে গিজগিজ করার কথা সেখানটা এখন পুরোপুরি নির্জন।
রসিকতা করেছে আমাদের সঙ্গে, কিশোর বললো।
কিংবা যাতে পুলিশকে খবর দিতে না পারি সে জন্যে। কে জানে, হয়তো এখনও এখানকারই কোনো পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। কচি, দেখো তো রাস্তাগুলো ঘুরে।
আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলো ধরে ধীরে ধীরে গাড়ি চালালো কচি। পথের পাশে কোনো গাড়ি দাঁড়ানো দেখলেই বকের মতো গলা বাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছে তিন গোয়েন্দা, সেটার কাঁচ ভাঙা কিনা।
ওই যে একটা! আচমকা চেঁচিয়ে উঠলো রবিন।
গাড়ি থামাও! সাথে সাথে বললো কিশোর।
ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলো কচি। তারপর গাড়ি পিছিয়ে আনলো। একটা লাল টয়োটা করোলার কাঁচ ভাঙা। মালিক এখনও বোধহয় জানে না। পথের পাশে গাড়ি, রেখে গেছে, ফিরে এলে দেখবে। কিংবা হয়তো জানে। কিন্তু কি আর করবে? এখন তো কাঁচ বদলানো সম্ভঘ না। দিনের বেলা যা করার করবে।
তারমানে গাড়ির কাঁচ সত্যি সত্যি ভাঙা হয়েছে এই এলাকায়, আনমনে। বিড়বিড় করে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। সেটা মিথ্যে কথা নয়। ভূত থেকে-ভূতেরা সত্যি কথাই বলেছে। শুধু শেষ ভূতটা ছাড়া।
মানে? মুসার প্রশ্ন।
ওই যে, যে ভূতটা আমাদের বললো সাইকেলওয়ালাকে পুলিশে ধরেছে। হাত নাড়লো কিশোর, কচি, চলো বাড়ি চলো।
.
কাঁচগুলো ভাঙতে দেখলো, রবিন বললো, কিন্তু তাকে যেতে দেখলো না কেন কেউ?, সমস্ত শহরেই ভূত রয়েছে আমাদের। তাদের কারো চোখেই পড়লো না। কেন আর? কাঁচ ভাঙার পর একেবারে উধাও! _ বাড়ি ফিরে বসার ঘরে আলোচনা হচ্ছে ওদের। আরিফ সাহেব এখন ফেরেননি।
গাড়িটা গ্যারেজে ঢুকিয়ে রেখে এলো কচি। রবিনের কথা শুনতে পেয়েছে। বললো, ঠিক, পালালো কোথায় ব্যাটা? এতোগুলো চোখকে এভাবে ফাঁকি দিলো। কিভাবে?
দুটো উপায়ে সেটা করতে পারে, দুই আঙুল তুললো গোয়েন্দাপ্রধান। হয় সমস্ত কাপড়-চোপড় বদলে সাইকেলটা কোথাও ফেলে পালিয়েছে। নয়তো কোথাও একটা পিকআপ অপেক্ষা করছিলো তার জন্যে, সাইকেলসহ তুলে নিয়ে গেছে।