একটা বাক্স দেখিয়ে সানি বললো, ওটাতে আমেরিকান মুদ্রা। ডাবল ঈগল আরেকটা আছে ওতে, দেখো। যেটা চুরি গেছে সেটারই মতো। তবে এটার দাম। চুরি যাওয়াটার তুলনায় কিছুই না।
গা ঘেঁষাঘেষি করে মাথা নিচু করে এসে বাক্স ঘিরে দাঁড়ালো তিন গোয়েন্দা। নীল মখমলে শুয়ে আছে সোনার মুদ্রাটা। চকচক করছে। একটা রূপার টাকার প্রায় সমান মুদ্রাটার এক পিঠে একটা উড়ন্ত ঈগল ছাপ মারা। ভোরের আকাশে ডানা মেলে দিয়েছে। সূর্য উঠছে সবে, ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যরশ্মি।
কতো পুরানো এটা? জিজ্ঞেস করলো রবিন। উনিশশো নয় সালের, সানি জানালো। তারিখটা অন্য পিঠে। একই রকম সুন্দর, অথচ দাম মাত্র আট হাজার আমেরিকান ডলার।
শিস দিয়ে উঠলো মুসা। মাত্র! আট হাজার ডলার মাত্র হলো!
মাত্র বলেছি যেটা চুরি গেছে তার তুলনায়। দেখতে যেমনই হোক, সেটা আসল কথা নয়, দাম কম-বেশি অন্য কারণে। যেটা যতো বেশি দুর্লভ সেটার দাম ততো বেশি।
চুরি যাওয়ার সময় কিসের মধ্যে ছিলো জিনিসটা? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
কালো চামড়ার একটা গহনার বাক্সে। ওই যে সৌখিন বাক্স আছে না কিছু, মহিলারা আঙটি-টাঙটি রাখে, ওরকম। সিগারেটের প্যাকেটের সমান। ডালার একপাশে দুটো কজা লাগানো, আরেক পাশে হুড়কো। বোতাম টিপলেই লাফ দিয়ে উঠে যায় ডালা। ভেতরে এরকমই নীল কাপড়। চাকচিক্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে প্ল্যাস্টিকে মুড়ে রাখা হয়েছিলো।
সোনার চমৎকার মুদ্রাটার দিকে তাকিয়ে সানির কথা শুনছে তিন গোয়েন্দা। তারপর মুখ তুলে সারা ঘরে চোখ বোলালো কিশোর। নিজেকেই যেন প্রশ্নটা করলো, এ ঘরে তো কোনো টিভি দেখছি না?
টেলিভিশন দুচোখে দেখতে পারে না চাচা, হেসে বললো সানি।
আঙিনায় তাহলে স্যাটেলাইট ডিশ বসানো হয়েছে কেন?
ডিশ? আবার চোখ মিটমিট করলো সে। টিভি একটা আছে। গেম রুমে। আমি আর ডলি দেখি। চাচা এখন শুয়ে আছে ওঘরে, নইলে ডিশটা দিয়ে কি কাজ হয় দেখাতাম।
ও, বলে কি বোঝালো কিশোর বোঝা গেল না। ঠিক আছে, পরে এসে এক সময় নাহয় দেখবো। তা আপনার চাচাকে জিজ্ঞেস করবেন কি, আমাদেরকে…
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। হাতে বেত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আকবর আলি। কঠিন দৃষ্টিতে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলেন, এখানে কি? লাঠিতে ভর দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে এলেন তিনি। এরপর কোনটা চুরি করবে সেটা দেখতে এসেছো?
আপনার ভাতিজাই এঘরে নিয়ে এসেছে আমাদের, শান্ত কণ্ঠে বললো কিশোর। চুরি করে ঢুকিনি। ঈগলটা খুঁজতে গেলে আমাদের জানতে হবে দেখতে ওটা কি রকম। এখন…
আমার ঈগল খুঁজবে! ভুরু কুঁচকে গেল খান সাহেবের। ওটার ধারে কাছে ঘেঁষতে দেবো ভেবেছো? বেরোও!
কিন্তু, স্যার, আপনার ভাতিজা… সানিকে দেখালো কিশোর, আমাদেরকে ফোন করে ডেকে এনেছে তদন্ত করার জন্যে! আপনিই নাকি আসতে বলেছেন।
সানি! লাল হয়ে গেছে আকবর আলির মুখ। ও ডেকে এনেছে! আমি আসতে বলেছি! সানি, তুই যে এতো মিথ্যে কথা বলিস জানতাম না তো! ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন খান সাহেব। আমি কিছু বলিনি! বেত তুলে আরেক পা এগোলেন তিনি। ভাতিজাকে বাড়িই মারবেন যেন।
তবে বেতটা যথাস্থানে আঘাত হানার আগেই ঢুকলো ডলি। একটানে বাবার হাত থেকে কেড়ে নিলো ওটা। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আব্বা!
মেয়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে রইলেন বৃদ্ধ। বললেন, তোরা ভাইবোনে মিলে যে কি করছিস বুঝতে পারছি না। থাকগে, বোঝার দরকারও নেই আমার। এই ছেলেগুলোকে বের করে দে এখান থেকে।
বেতটা মেয়ের হাত থেকে আবার ফেরত নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেলেন আকবর আলি। বিরক্ত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো ভাইবোন।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে তিন গোয়েন্দাকে বললো সানি, সরি, কিছু মনে করো না। চাচার মন-মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেছে ইদানীং। খিটখিটে হয়ে গেছেন। কথায় কথায় রেগে যান।
হ্যাঁ, ভাইয়ের সঙ্গে সুর মেলালো ডলি, আব্বার কথায় কিছু মনে করো না। তোমাদের ডাকতে বলে নিজেই এখন ভুলে বসে আছে। এরপর আবার ডাকতে বললে লিখে দিতে বলবো।
মাথা ঝাঁকালো সানি। হ্যাঁ, তাই করবো। লিখে না দিলে আর ডাকছি না। তোমাদেরকে। গজগজ করে বললো, অযথা মানুষকে ডেকে এনে অপমান…
বাইরে বেরিয়ে খোয়া বিছানো পথ ধরে গেটের দিকে এগোলো তিন গোয়েন্দা।
আশ্চর্য! আনমনে বললো কিশোর। ডাকতে বলেছেন, সেটাও ভুলে। গেলেন? এতো তাড়াতাড়ি?
আমার কাছেও অবাক লাগছে ব্যাপারটা, রবিন মাথা দোলালো।
পাগল আরকি, সাফ মন্তব্য করে দিলো মুসা। এতো টাকা দিয়ে নইলে একটা সোনার টাকা কেনে?
গাড়ি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে এখন আরেকটা গাড়ি, লাল ছোট একটা সুজুকি। চিন্তিত ভঙ্গিতে ওটার দিকে তাকিয়ে থেকে কিশোর বললো, যাকগে, ওসব নিয়ে পরে ভাববো। এখন তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার। সন্ধ্যার আগেই কচিদের বাড়ি গিয়ে ওদের পিকআপটা দেখতে চাই।
.
চারজনে মিলে পিকআপটা পরীক্ষা করলো ওরা। সীটের ওপরে, তলায়, সীটের সামনের মেঝেতে, পিকআপের ঘোট কেবিনের ভেতর যতো জায়গা আছে, সবখানে।
কাগজ আটকানোর ক্লিপ দিয়ে নিশ্চয় কাঁচ ভাঙা যায় না।
সীটের নিচ থেকে একটা ক্লিপ বের করে দেখালো মুসা।
না, শুকনো গলায় বললো কিশোর।
কিংবা কয়েকটা খালি দুধের টিন দিয়ে? পিকআপের পেছন থেকে টিনগুলো রে করলে রবিন।