কিশোর জবাব দেয়ার আগেই কচি বললো, কিন্তু ও-ই যদি ভেঙে থাকে, তাহলে আমি দেখলাম না কেন? মানে, আমি তো চোখ রেখেছিলাম। কাঁচ ভাঙতে হলে কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি মারতে হবে। গাড়ির কাছে থামতে হবে। কোনোটাই করেনি সে। এমন কি যে রাতে কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনেছি, সে রাতেও তাকে দেখিনি।
কিশোরের দিকে তাকালো রবিন। সাইকেল না থামিয়ে কি করে কাঁচ ভাঙা যায় কিশোর?
কিংবা নাহয় থামলোই, মুসা বললো। কিন্তু কারো চোখে না পড়ে কি ভাবে ভাঙে? কি দিয়ে? অদৃশ্য মানব হয়ে যায় নাকি?
অবাস্তব কোনো কিছু ঘটে না নিশ্চয়ই, কিশোর বললো। সেটা সম্ভবও নয়। কচির দিকে তাকালো সে। সে রাতে কাঁচ ভাঙতে শুনেছো তুমি, গাড়ির কাছে কাউকে দেখোনি। হতে পারে তুমি বেরোতে বেরোতে তোমার চোখের আড়াল হয়ে গিয়েছিলো সে। এমন কিছু কি চোখে পড়েছে তোমার যা মনে করতে পারছে না?
চোখ আধবোজা করে ভাবার চেষ্টা করলো কচি। পিকআপের কাছে কাউকে দেখিনি..রাস্তায়ও না… হঠাৎ সোজা হয়ে বসলো সে। দাঁড়াও দাঁড়াও, একটা নড়াচড়া বোধহয় দেখেছি! গাড়ির সামনে! দূরে! রাস্তায়!
কি ধরনের নড়াচড়া?
বলতে পারবে না। মনে করতে পারছি না। মনে হলো যেন পলকের জন্যে। দেখেছি।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। হয় এরকম। অনেক কিছুই দেখি আমরা যা মনে রাখার চেষ্টা করি না। ফলে ভুলে যাই। নড়াচড়াটা হয়তো কোনো সাইকেলেরই দেখেছো। কিন্তু যেহেতু কাঁচ ভাঙার সাথে সাইকেলের কোনো সম্পর্ক নেই, অন্তত তখন আমার মনে হয়নি, ওটার কথা মনে রাখার চেষ্টা করোনি তুমি। অথচ দেখেছো ঠিকই। একে বলে সাইকোলজিক্যাল ইনভিজিবিলিটি।
এতো দ্রুত যদি চলেই গিয়ে থাকে, রবিন প্রশ্ন তুললো, তার মানে কাঁচি ভাঙার জন্যে থামেনি সে। চলন্ত সাইকেল থেকে কি করে ভাঙলো?
ঠিক বলতে পারবো না। তবে একটা আইডিয়া আসছে মাথায়। দেখি, পুলিশের সঙ্গে আবার কথা বলতে হবে। কচি, তোমাদের পিকআপটাও পরীক্ষা। করতে চাই।
করবে। যখন খুশি।
কিন্তু কিশোর, রবিন বললো, সাইকেলওয়ালা যে কাঁচ ভাঙে, এটা প্রমাণ করবে কি করে? অবশ্য যদি ও-ই ভেঙে থাকে।
হাতেনাতে ধরবো। আবার ভূত-থেকে-ভূতে ব্যবহার করে।
মানে, শহরের সমস্ত ছেলেমেয়েকে হুঁশিয়ার করে দেবে চোখ রাখার জন্যে? মুসা বললো।
হ্যাঁ, তাই করবো। কিছু তথ্য এখন আমাদের হাতে আছে। ওদেরকে পরিষ্কার করে বলতে পারবো, কার ওপর চোখ রাখতে হবে। এতোগুলো চোখের কড়া নজর এড়িয়ে নিরাপদে কিছুতেই কাজ সারতে পারবে না সে।
যদি সে আগেই জেনে না যায় যে চোখ রাখা হচ্ছে, মুসা বললো। যে ভাবে জেনে যায় পুলিশ নজর রাখছে। এক্সরে ভিশন না তো তার? কিংবা ইনফ্রা রেড চোখ, যে অন্ধকারেও দেখবে! কে জানে হয়তো অলৌকিক কোনো ক্ষমতা আছে। শুনেছি এদেশে নাকি ওরকম ক্ষমতাশালী লোকের অভাব নেই, অনেক পীর– ফকির আছে
ওসব কিছু না। অন্য কোনো ভাবে জানে। বাস্তব, সহজ কোনো উপায়ে। রাতেও চোখে কালো চশমা পরে, উদ্ভট চেহারার জিনিস। আমার এখন সন্দেহ। হচ্ছে, ওটা ফীল্ড গ্লাস। ওকে হাতেনাতে ধরতে পারলেই জেনে যাবো সেটা। কিন্তু মুশকিল হলো সেটা জানার জন্যে আগামী সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদেরকে। তার আগে আঘাত হানবে না সে।
ভালোই হয়েছে, মুসা বলল। ঘোরার সময় পেলাম। করিমদের বাড়িতে দাওয়াত খাবো, রাত কাটাবো। ও বললো এদেশে গাঁয়ের বাড়িতে রাতে থাকার মজাই নাকি আলাদা, বিশেষ করে শীতকালে। দেখে আসবো সেটা।
আমার পক্ষে যাওয়া বোধহয় সম্ভব হবে না, কচি বললো। অনেক কাজ। আমি ফার্মে না থাকলে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। বাবা একা কদিক সামলাবে?
হ্যাঁ, তা ঠিক, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। তোমাকে আটকাবো না। তবে আমাদের সঙ্গে যেতে পারলে ভালো হতো। থাক, অসুবিধে হবে না। করিম পথঘাট চেনে। তো, এখন কি তোমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে? পিকআপটা দেখতাম।
চলো।
উঠতে যাবে ওরা, এই সময় বাজলো টেলিফোন। মামা-মামীর কারো হবে মনে করে রিসিভার তুললো কিশোর, হ্যালো।
ইয়ে, পরিচিত একটা কণ্ঠ, অস্বস্তি বোধ করছে বোঝা যায়, আরিফ সাহেরে বাসা?
হ্যাঁ।
কিশোর পাশা আছে?
অবাক হলো কিশোর। বলছি।
ও, কিশোর। আমি সানি। আকবর সাহেবের ভাতিজা। কাল রাতে আমাদের বাসার সামনে দেখা হয়েছিলো।
হ্যাঁ, মনে আছে। কি ব্যাপার?
ডলির মুখে তোমাদের সুখ্যাতি শুনে শুনে চাচার ধারণা হয়েছে, চেষ্টা করলে তোমরা হয়তো তার ঈগলটা খুঁজে বের করে দিতে পারবে। তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে বললেন আমাদের। তা ফিস কতো তোমাদের?
ফিস-টিস নিই না আমরা। মানুষকে সাহায্য করতে পারলে, রহস্য আর সমস্যার সমাধান করে দিতে পারলেই খুশি।
তাই নাকি? ভালো কথা। চাচাকে বলবো। এখন কি একবার আসতে পারবে? ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করা যেতো। টেলিফোনে তো সব কথা বলা। যায় না…
এখুনি? এক মুহূর্ত ভাবলো কিশোর। বেশ আসছি।
বাসা চিনবে তো?
নিশ্চয়। রাখলাম।
.
০৮.
বাড়িটা বিশাল। সেদিন রাতের বেলা ঢুকেছিলো গোয়েন্দারা, ভালোমতো দেখতে পারেনি, এখন দেখলো। ভেতরে প্রচুর গাছপালা। গাড়ি বারান্দায় নতুন মডেলের একটা হোণ্ডা সিভিক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো ওরা। গ্যারেজে আরেকটা গাড়ি আছে। অনেক পুরানো। গায়ে ধুলো জমে আছে পুরু হয়ে। কোন আদ্যিকাল থেকে। ওটা ওখানে পড়ে আছে কে জানে। হুড আর উইশীল্ড ক্যানভাসে ঢাকা।