উ! গাল চুলকালেন সার্জেন্ট, মনে করার চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু আছে। লাল একটা টয়োটা করোলাতে করে গেছেন দুজন বিদেশী ভদ্রলোক। একটা ধূসর ফোক্স ওয়াগেন চালিয়ে গেছে দাড়িওয়ালা এক লোক। সম্বত ড্রাইভার। খবরের। কাগজের এক হকার ঢুকেছিলো এক বাড়িতে, বোধহয় বিলটিল নিতে। দুজন বয়স্কা মহিলা হেঁটে গেছেন, সাথে একটা ছেলে। ছেলেটার হাতে গুলতি ছিলো। একজন মহিলা গেছেন, সাথে একটা কুকুর নিয়ে…
মহিলার হাতে একটা লাঠি ছিলো, না?
মাথা নাড়লেন আবদুল আজিজ, না, কিছুই ছিলো না। শেকল ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন কুকুরটাকে।
বিদেশী?
হা, বিদেশী।
কুকুরটার রঙ সাদা, তার মধ্যে কালো ছোপ, তাই না?
না। সারা শরীর ধূসর।
নিরাশ মনে হলো কিশোরকে। না, তাহলে যার কথা বলছি সে না। আচ্ছা, আর কাকে দেখেছেন?
বয় স্কাউটের পোশাক পরা দুটো ছেলে। লম্বা চুলওয়ালা হিপ্পি মার্কা এক তরুণ। টেন-স্পীড সাইকেলে করে গেছে আরেক তরুণ, মাথায় ক্যাপ, চোখে চশমা। পিঠে ব্যাকপ্যাক, তাতে ওয়াকম্যান ছিলো, কানে লাগানো হেডফোন দেখেই বুঝেছি। মোটর সাইকেলে চড়ে গেছে তিনজন, তাদের কোন কিছুই চোখে। পড়ার মতো নয়। চারজন বয়স্ক লোক গেছেন জগিং করতে করতে, সবার গায়েই গেজ্ঞী, তিনজনের পরনে ফুল প্যান্ট, একজনের হাফফকির-টকির আর সাধারণ কিছু লোক পায়ে হেঁটে গেছে, তাদের কথা মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করিনি…
একজন হাবিলদারের সাক্ষাৎকার নিতে গেল তারপর ওরা।
কিছুই ঘটেনি, জবাব দিলেন হাবিলদার। চোখে পড়ার মতো কিছু না। যা জিজ্ঞেস করার তাড়াতাড়ি করো। আমার ডিউটি আছে।
জানি, কাঁচ ভাঙতে কাউকে দেখেননি। সন্দেহজনক কাউকে দেখেছেন? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
না। ঘড়ি দেখলেন হাবিলদার।
আচ্ছা, তাড়াতাড়ি বললো কিশোর। কাকে কাকে দেখেছেন সে রাতে? মানে, চোখে পড়ার মতো?
অনেককেই।
খুলে বলবেন?
আরেকবার ঘড়ি দেখলেন হাবিলদার। পুরানো একটা টয়োটা পিকআপ ট্রাক। ঢুকতে দেখেছি। পেছনে কতগুলো ছেলে হই-হট্টগোল করে গান গাইছিলো। পিকনিক-টিকনিকে গিয়েছিলো বোধহয়। গলির প্রায় শেষ মাথায় গিয়ে একটা বাড়ির সামনে থামলো গাড়িটা। কয়েকটা ছেলে নেমে যাওয়ার পর বেরিয়ে গেল। আরও অনেককেই দেখেছি। টেবিল থেকে ক্যাপ তুলে নিলেন তিনি।
আরও দু-চারজনের কথা বলুন, প্লীজ!
মোটর সাইকেল নিয়ে তিনটে ছেলেকে যেতে দেখেছি। পাশাপাশি চলেছিলো। নিশ্চয় বন্ধু। গাড়ি গেছে কয়েকটা। তবে মনে রাখার মতো একজনই গেছে।
সে কে? আগ্রহে সামনে ঝুঁকে এলো কিশোর।
দেখে তো মনে হলো পাগলা গারদ থেকে বেরিয়েছে। একটা সাইকেলে করে। এলো। মাথায় টুপি, চোখে কালো চশমা, পিঠে ব্যাগ, কানে হেডফোন…শাই শাই করে চলে গেল। একবার ভেবেছি, থামাবো। তারপর ভাবলাম মরুকগে। আমার। কি? তৃতীয়বার ঘড়ি দেখলেন হাবিলদার। চলি, আর থাকতে পারছি না। আর কিছু জানার থাকলে অন্য সময় এসো, যখন আমার বাইরে ডিউটি থাকবে না।
ফাইলে মুখ গুঁজে ছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর হাফিজ আলি। ছেলেরা অফিসে। ঢুকতে সাড়া পেয়ে মুখ তুললেন। হেসে বললেন, আরে, তিন গোয়েন্দা যে। এসো এসো।
টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো কিশোর। স্যার, আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথা ছিলো…
বসো, চেয়ার দেখিয়ে দিলেন সাব-ইন্সপেক্টর। জানি। ওসি সাহেব। বলেছেন। খুব বেশি সময় দিতে পারবো না কিন্তু…
বেশি সময় লাগবে না।
বলো, কি জানতে চাও?
.
০৭.
নিশ্চয় সাইকেলওয়ালা! টেবিলে চাপড় মারলো মুসা।
ঠিক! তার সঙ্গে সুর মেলালো কচি। টুপি, গগলস, ব্যাকপ্যাক, হেডফোন!
চারজন পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছি আমরা, একমত হলো রবিনও। চারজনেই ওকে দেখেছে। আমরা দুবার পাহারা দিয়েছি। দুবারই দেখেছি।
আলোচনা হচ্ছে বসার ঘরে। পুলিশদের কাছ থেকে নতুন কিছুই জানতে পারেনি ওরা।
তবে, কিশোর বললো, কেউই তাকে কিছু করতে দেখেনি। আমরাও না।
না, তা দেখেনি, সায় দিলে অন্য তিন জনেই।
একটা ব্যাপার কিন্তু সন্দেহজনক, আবার বললো কিশোর। তাকে বিভিন্ন রাস্তায় দেখা গেছে। রাতের বেলা। মোটামুটি একটা বিশেষ সময়ে। ওটা লোকের বাড়ি ফেরার সময়, বেরোনোর নয়। হতে পারে তার বাড়ি ওই এলাকায়। একেক দিন একেক রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরে। কতো লোকেরই তো কতো স্বভাব থাকে।
তারমানে বলতে চাইছে, নিরাশ মনে হলো মুসাকে, ব্যাপারটা কাকতালীয়?
একবার দুবার কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু এবার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। তাকে জানালা ভাঙতে দেখা যায়নি, তারমানে এই নয় যে সে ভাঙেনি। সন্দেহ থেকে বাদ দেয়া যায় না।
তোমার ধারণা, রবিন বললো, পুলিশ দেখেই সতর্ক হয়ে যায় সে? ওই রাস্তায় আর না ভেঙে অন্য যেখানে পাহারা নেই সেখানে গিয়ে ভাঙে?
অসম্ভব কি?
আমরা পাহারা দেয়ার সময়ও ভাঙেনি, মুসা বললো। তাহলে কি আমাদেরও দেখেছে?
দেখে থাকতে পারে। ভাঙতে এলে তা সাবধান হয়েই আসে। দেখেশুনে নেয় সব। আমরা যে ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়েছি, সেটা তেমন ঘন নয়। ভালো মতো তাকালে যে কারোই চোখে পড়তে পারে। এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো। কিশোর। তারপর বললো, এখন আমাদের বড় সন্দেহ ওই সাইকেলওয়ালা। তাকে অপরাধী প্রমাণ করতে পারলেই হয়।
কি করে করবো? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
ভাবছো কিছু? রবিনের প্রশ্ন।