পারলে এখনই।
আচ্ছা দেখি।
পনেরো মিনিট পর রিসিভার রেখে দিয়ে ফিরে তাকালেন আরিফ সাহেব। মৃদু হেসে বললেন, হয়ে গেছে। আমি চিঠি লিখে দিচ্ছি। ওসি কথা দিয়েছে, আমার চিঠি দেখালেই সহযোগিতা করবে পুলিশ।
আরও আধঘণ্টা পর বেরিয়ে পড়লো ওরা। বাসে করে উত্তরা থেকে বনানীতে এসে নামলো।
ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে কিশোর বললো, যেসব রাস্তায় কাঁচ ভেঙেছে, ওসব জায়গায় সোমবার কিংবা বুধবারে যাদের ডিউটি ছিলো তাদেরকে জিজ্ঞেস করবো। গত হপ্তার খবর নিলেই হবে।
কিন্তু জিজ্ঞেসটা করবো কি? মুসার প্রশ্ন।
অস্বাভাবিক কিছু দেখেছে কিনা। কাকে কাকে দেখেছে, কি রকম লোক, এসব।
মনে আছে কিনা ওদের কে জানে! রবিন বললো। প্রশ্নগুলো সব তুমিই ১ করো। আমরা তো বাংলা ভালো বলতে পারি না।
থানায় ঢুকে পরিচয় দিয়ে ওসি কথা জিজ্ঞেস করতেই তার ঘরে ওদেরকে নিয়ে। এলেন একজন ডিউটিরত পুলিশ। আরিফ সাহেবের চিঠি তাঁকে দেখালো কিশোর। ব্যবস্থা মোটামুটি তিনি আগেই করে রেখেছেন।
একজন তরুণ পুলিশ কনস্টেবলের সাক্ষাৎকার নেয়া হলো প্রথম।
ওই কাঁচ ভাঙা? মাথা নাড়লেন কনস্টেবল। নাহ্ কিচ্ছু দেখিনি। দেখলে তো ধরেই ফেলতাম। সন্দেহজনক মনে হয়নি কাউকে। অযথা সময় নষ্ট করেছি, বুঝলে। আসল চোর-ডাকাত ধরা বাদ দিয়ে কতগুলো দুষ্টু ছেলের পেছনে লেগেছি।
দুষ্টু ছেলেই, আপনি শিওর? কিশোরের প্রশ্ন।
তাছাড়া আর কি? দেখো, চাকরিতে ঢুকেছি সাত বছর হয়ে গেছে। শয়তান লোক তো আর কম দেখলাম না…।
আচ্ছা, কাকে কাকে দেখেছেন, মনে আছে? অনেক লোক?
রাস্তা যখন, লোক তো দেখবোই। আসছে যাচ্ছে, আসছে যাচ্ছে, কেউ দাঁড়ায়নি। কোনো গাড়ির দিকে ইট-পাথর ছুঁড়ে মারেনি কেউ, হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মেরে কাঁচ ভাঙেনি…
যাদেরকে দেখেছেন, তাদের কারও চেহারা মনে আছে?
নিশ্চয়ই আছে। অনেকেরই। সাত বছর কাটিয়ে ফেলেছি, এখন একটা। প্রমোশন দরকার আমার। কাজেই ডিউটিতে ফাঁকি দিই না। আর আমার স্মরণশক্তি খুব ভালো, কাউকে একবার দেখলে সহজে ভুলি না…
দাঁড়ান দাঁড়ান, লিখে নিই। পকেট থেকে তাড়াতাড়ি নোটবুক বের করলো কিশোর।
নোটবুকের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন হঠাৎ কনস্টেবল, অযথাই কেশে গলা পরিষ্কার করলেন, ফালতু কথা আর বলা চলবে না বুঝে গেছেন। কারণ বক্তব্য লেখা হয়ে যাচ্ছে খাতায়। আর সেটা যদি ওসি সাহেব। দেখেন…সর্তক হয়ে কথা বললেন এবার তিনি, দাঁড়াও মনে করি। সে রাতে যে রাস্তায় পাহারা দিয়েছি, সেটাতে বিদেশীদের বাড়ি-ঘর বেশি। বেশির ভাগই এমব্যাসিতে চাকরি করে। একজন আমেরিকান মহিলাকে দেখলাম দামী একটা গাড়ি নিয়ে এসে এক বাড়ির সামনে রাখলো। বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলো। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো আরেক মহিলা। গাড়িতে উঠলো। চলে গেল ওরা। এরপর…এরপর, হ্যাঁ এরপর এলো আরেক বিদেশী মহিলা। হাওয়া খেতে বেরিয়েছিলো বোধহয়। সাথে একটা কুকুর। এমন পাজি জানোয়ার, আমার হলে পিটিয়ে পাছার চামড়া তুলে ফেলতাম। যেটা দেখে সেটাই শোকে, এখানে লাফ দিয়ে ওঠে, ওখানে লাফ দিয়ে ওঠে… চলে গেল ওরা। তারপর এলো একটা রামছাগল..
রামছাগল?
আরে মানুষই। ছাগলের মতো স্বভাব আরকি। ওই যে দেখেছো না রাস্তায়, কতগুলো ছেলেছোকরা আছে, চুলের ঠিক নেই, কাপড়ের ঠিক নেই, কি যে পরে আর কি যে করে:-ছাগল না ওগুলো? তেমনি একটা আরকি। তোমার তো আরো ভালো জানার কথা। একটা বিদেশী সাইকেলে চড়ে এলো। মাথায় কাপ, চোখে কালো চশমা। আরো দেখো কাণ্ড! পিঠে বস্তার মতো একটা ব্যাগ, সেটার ভেতরে বোধহয় ওয়াকম্যান-টোয়াকম্যান ছিলো, কানে হেডফোন। অনেক দেশেই গাড়ি কিংবা কিছু চালানোর সময় ওসব ব্যবহার করা নিষেধ, অ্যাকসিডেন্ট করে বলে, আমাদের দেশেও মানা করে দেয়া উচিত…এই যে দেখো না, লাজারি কোচগুলো, সারারাত ধরে চলে। দিনেও চলে। কানের পোকা বের করে দিয়ে। সারাক্ষণ ওগুলোর মধ্যে হিন্দি ছবির গান বাজে। ভিসিআর চলে। মাঝে মাঝে ড্রাইভারও গুনগুন করে গলা মেলায়, মাথা দোলায়, অসতর্ক হয়ে যায়। আর অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে..।
তা ঠিক, এক মত হলো মুসা। সব যাত্রী তো ওসব পছন্দও করে না। নিশ্চয়। অসুবিধা হয়। তো, আর কাকে দেখেছেন?
দেখেছি তো অনেককেই। তবে মনে রাখার মতো কাউকে নয়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, নোটবুক বন্ধ করতে করতে বললো কিশোর।
তোমাকেও ধন্যবাদ। অযথা কষ্ট করছে, বুঝলে। সব দুষ্টু ছেলেদের কাজ।
দেখা যাক, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কি বেরোয়? হেসে বললো গোয়েন্দাপ্রধান।
এরপর কথা হলো সেই সার্জেন্ট আবদুল আজিজের সঙ্গে, সে রাতে যার। সাথে দেখা হয়েছিলো তিন গোয়েন্দার। হেসে স্বাগত জানালেন ছেলেদেরকে। আমার ওপরই তাহলে গোয়েন্দাগিরি চালাতে এসেছো। ভালো। তো কি জানতে চাও?
গত হপ্তায় তো সাত নম্বর রোডের কাছে ডিউটি ছিলো আপনার। কাউকে কাঁচ ভাঙতে দেখেননি। একটা কথা বলুন তো, ওই রোডে এমন কাউকে চোখে। পড়েছে, যার আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়েছে?
তাহলে তো ধরতামই। অন্তত জিজ্ঞেস তো করতাম, ওখানে কি করছে? না, সে রকম কাউকে চোখে পড়েনি।
লোকজন, গাড়ি, নিশ্চয় অনেক গেছে। এমন কাউকে চোখে পড়েছে, যার। কথা মনে আছে এখনও আপনার?