কড়া চোখে ওদের দিকে তাকালেন আকবর আলি খান। ইচ্ছে করে ন্যাকা সাজছে, না কী? পাখি হবে কেন? আমার জিনিসটা একটা..।
বুঝেছি! বলে উঠলো কিশোর। জ্বলজ্বল করছে চোখ। পাখি নয়, মুদ্রা! একটা দুর্লভ মুদ্রা!
মুদ্রা? অবাক হয়ে কিশোরের দিকে তাকালো কচি।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। আমেরিকান। সোনার টাকা, দশ ডলারের। আঠারোশো সালের শুরুতে বাজারে ছাড়া হয়েছিলো। এক পিঠে ঈগলের ছাপ মারা, ঈগল বললেই লোকে চিনতো তখন। আরও একটা প্রায় একই রকম মুদ্রা ছিলো তখন, হাফ ঈগল, ছাড়া হয়েছিলো আঠারোশো বাইশ সালে। দুনিয়ার। সবচেয়ে দুর্লভ মুদ্রাগুলোর একটা এখন।
শুনলেন! গর্জে উঠলেন আকবর সাহেব। সব জানে। তার মানে ঈগলটা দেখেছে!
দেখলেই যে জানবে শুধু, না দেখলে জানবে না, এটা কোনো কথা হলো না,। গম্ভীর হয়ে বললেন আরিফ সাহেব। না দেখেও জানা যায়, বই পড়ে। আর আমার। ভাগ্নে প্রচুর বই পড়ে।
আরিফ সাহেবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মেয়েটা বললো, ঠিকই তো। তুমি কিন্তু দুর্ব্যবহার করছ, আব্বা।
কিছু বললেন না আকবর সাহেব। তবে দৃষ্টি কিছুটা নরম হলো।
তিন গোয়েন্দার দিকে চেয়ে আবার বললো মেয়েটা, তোমরা কিছু মনে করো না, ভাই। আব্বার মনমেজাজ ভালো নেই। ঈগলটা হারিয়ে ভীষণ অস্থির। উঠে এসে কিশোরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, কোনো জড়তা নেই। আমি ডলি। সোফায় বসা তরুণকে দেখিয়ে বললো, ও আমার চাচতো ভাই, সানি।
সানিও এসে এক এক করে হাত মেলালো তিন গোয়েন্দার সঙ্গে।
এই সময় চা-নাস্তা নিয়ে ঢুকলো বাড়ির কাজের লোক। মেহমানদেরকে সেগুলো পরিবেশন করতে লাগলো ভাই-বোন মিলে।
কি ঈগল আপনাদেরটা? চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সানিকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
ডাবল ঈগল।
তার মানে বিশ ডলারের। আঠারোশো ঊনপঞ্চাশ সালে তৈরি। হাফ ঈগলের চেয়েও দুর্লভ। যতদূর জানি, আমেরিকায় এখন একটাই আছে, গভর্নমেন্টের কাছে। দশ লাখ ডলারে কিনতে চেয়েছিলো এক কোটিপতি, তা-ও রাজি হয়নি সরকার।
জানি, সানি বললো। আঠারোশো তিপ্পান্ন সালে নাকি আরও তিনটে তৈরি হয়েছে, যার দুটোর খোঁজ আছে এখন। একেকটার দাম পাঁচ লাখ ডলার।
আশ্চর্য! বিড়বিড় করলো মুসা। বিশ ডলারের একটা সোনার টুকরোর এতো দাম!।
অ্যানটিক ভ্যালু, কিশোর বললো।
হ্যাঁ, সানি বললো। চাচারটা তৈরি হয়েছে উনিশশো সাত সালে। দাম আড়াই লাখ ডলারে মতো।
গাড়িতে ছিলো কেন ওটা? রবিন জিজ্ঞেস করলো।
ধানমণ্ডিতে পুরানো মুদ্রার একটা একজিবিশন হয়েছিলো, ডলি জানালো, সেখানে দিয়েছিলো আব্বা। ওখান থেকে নিয়ে আসার পর ভুলে গাড়িতেই রয়ে গিয়েছিলো।
দোষটা তোর!
এবার মেয়ের ওপর রেগে গেলেন আকবর আলি। কতোবার মানা করেছি, গাড়ি চালানোর সময় এতো জোরে ক্যাসেট বাজাবি না! ভুলে গেলেন পুলিশের সামনে একথা বলা ঠিক হচ্ছে না, কারণ তাঁর মেয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্সই নেই, ওই বয়সে পাওয়া যায় না। গোপনে চালায়। গান না ছাই! ধুড়ুম ধুড়ুম ঢাকের শব্দ আর চেঁচামেচি, আফ্রিকার জংলীরাও এই কাণ্ড করে না। কি যে শোনে আজকালকার। ছেলেমেয়েগুলো! মাথা ধরে গিয়েছিলো আমার! ওই চেঁচামেচিতেই সব ভুলে গিয়েছিলাম, বাক্স ফেলে এসেছি গাড়িতে। নইলে কি আর ঈগলটা খোয়াতাম!
দুর্লভ জিনিস তো, তাঁকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে সহানুভূতির সুরে বললো। কিশোর, টাকা দিয়েও সব সময় পাওয়া যায় না। এসব জিনিস হারিয়ে গেলে কষ্টটা সে জন্যেই বেশি পায় সংগ্রহকারী।
কিশোর, মুসা বললো, গাড়ির ভেতরের জিনিস চুরি করার জন্যেই কি তাহলে কাঁচ ভাঙে?
মাথা নাড়লো কিশোর। আমার তা মনে হয় না।
আমারও না, মাথা নাড়লো কচি। কারণ আমাদের গাড়ি থেকে একবারও কিছু চুরি যায়নি। চুরি যাওয়ার মতো অবশ্য কিছু ছিলোও না ভেতরে।
তাহলে কাঁচ ভাঙার আর কি কারণ থাকতে পারে? সানির প্রশ্ন।
তাই তো, আর কি কারণ? প্রশ্নটা উলিরও। আমার তো বিশ্বাস চুরিই এর। একমাত্র কারণ। সঙ্ঘবদ্ধ কোনো দলের কাজ।
না আমারও মনে হয় না চুরি এর কারণ, সার্জেন্ট আজিজ বললেন। তোমাদেরটা বাদে আর কোনো গাড়ি থেকেই কোনো কিছু চুরি যায়নি। রিপোর্ট করেনি কেউ। এমন কতোগুলো গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে যেগুলোর দরজা লক করা ছিলো না। যদি আর কোনো উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে বলতে হবে এটা স্রেফ শয়তানী।
কি জানি, কথাটা মানতে পারলো না কচি। শয়তানী করলে তো কোনো দুষ্টু ছেলের কাজ হতো। তাহলে কি ধরে ফেলতে পারতেন না এতোদিনে?
ঠিকই বলেছো, একমত হলো কিশোর। ম্যাপে যা দেখলাম, তাতে মনে হয় বেশ হিসেব করে একেকখানে গিয়ে একেকবার কাঁচ ভাঙে। এটা দুষ্টু ছেলের কাজ হতে পারে না। তাছাড়া সব দিন নয়, ভাঙে দুটো বিশেষ দিনে, সোম আর বুধবার।
তাই নাকি? অবাক মনে হলো সাব-ইন্সপেক্টরকে। এটা তো খেয়াল করিনি!
০৬.
পরদিন সকাল আটটায় ড্রইং রুমে এসে বসলো তিন গোয়েন্দা। আরিফ সাহেব আগে থেকেই আছেন। কচিও এলো। তাকে আসতে বলে দিয়েছিলো কিশোর।
মামা, একটা কাজ করে দেবে? ভূমিকা না করে সরাসরিই বললো কিশোর।
কি কাজ? খবরের কাগজ থেকে মুখ তুললেন আরিফ সাহেব।
থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কাঁচ ভাঙার রাতে রাস্তায় ডিউটি ছিলো যাদের, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে।
এক মুহূর্ত ভাবলেন আরিফ সাহেব। তারপর মাথা কঁকালেন, হু, তা অবশ্য করা যায়। গুলশান থানার ওসিকে ফোন করে বলতে পারি। ব্যবস্থা করে দেবে। কখন যেতে চাস?