ফোল্ডিং চেয়ার আর টেবিলগুলো ভাজ করে বয়ে নিয়ে গিয়ে ট্রাকে তুলতে সাহায্য করল তিন গোয়েন্দা। গিয়ে দেখল, টেবিলক্লথ ঝেড়ে পরিষ্কার করে ভাজ করে বয়ে নিয়ে এসেছে ধোয়ামোছার লোকটা, ট্রাকে তুলছে কাপড়গুলো।
পুলিশের সঙ্গে যখন বেরিয়ে এল এলেনা, তখনও ট্রাকে মাল তোলায় ব্যস্ত তিন গোয়েন্দা। সিঁড়ির দিকে দেখাল মেয়েটা। হোয়েরটাকে সাথে করে উঠে গেল দুই অফিসার। হলের ভেতর দিয়ে লিভিং রুমে চলে এল এলেনা।
উসখুস করছে নিক। যেন এখানে থাকার কথা নয় তার। এলেনা, তুমি ঠিক আছ তো? বলল কোনমতে।
আছি, দীর্ঘশ্বাস ফেলল এলেনা। বু-বুঝতে পারছি না কি করব। ভয় পাব না। কি করব। আব্বা ইচ্ছে করে একাজ করে থাকতে পারে। পার্টি দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না তার। আমার চাপাচাপিতেই করেছে। মেহমানরা চলে গেলেই এসে ঢুকবে হয়ত, চওড়া হাসি দেবে আমার দিকে তাকিয়ে। তাহলেও ভাল হত। কিন্তু যদি সত্যিই বিপদে পড়ে থাকে?
পুলিশ কি বলে?
কি আর বলবে। তদন্ত করবে। ওরা এখনও ভাবছে না আব্বার খারাপ কিছু হয়েছে। গেছে যে বেশিক্ষণ হয়নি। তাছাড়া খামখেয়ালি মানুষ, শুনেছেই তো। জিজ্ঞেস করেছে আব্বর শত্রু আছে কিনা। তাদের নাম জানি কিনা। কি আর বলব বল। আমার আব্বার শত্রুদের নাম? লস অ্যাঞ্জেলেসের পুরো টেলিফোন ডিরেকটরিটাই দিয়ে দিতে হয় তাহলে!
অত ভেবো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
এগিয়ে আসতে দেখা গেল মিসেস ভিশনকে। মুখে হাসি। যেন সব কিছু ঠিক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর কোন অসুবিধে হবে না, হাসিতেই বুঝিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা। কাছে এসে বললেন, এলেনা, মা, কিছু ভেবো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে দরকার হলে একটুও দ্বিধা না করে মোটেলে ফোন করো।
থ্যাঙ্ক ইউ, বলল এলেনা।
দস্তানা পরতে শুরু করল্লেন নিকের মা। চমৎকার একটা পার্টি দিলে, সত্যি। বলেই বুঝলেন ভুল করে ফেলেছেন, রুটিন মাফিক সৌজন্য দেখানো অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে চলবে না, শুধরে দেয়ার জন্যে বললেন, মানে হতো আরকি। যদি তোমাদের যাকগে। কিচ্ছু ভাববে না। সব ঠিক হয়ে যাবে। নিক, আয়। মেয়েটা একা থাকুক কিছুক্ষণ। রেস্ট নিক।
আমি ফোন করব, এলেনাকে কথা দিল নিক।
হ্যাঁ, বিড়বিড় করে বললেন মিসেস ভিশন। অবশ্যই করবে। করতে তো হবেই।
ঘুরে তাকাতেই কিশোরের ওপর চোখ পড়ল এলেনার। কী? কিছু লাগবে?
ইয়ে…মিস লিসটার…আমি দুঃখিত, বলল, কিশোর।
হ্যাঁ, সবাইই দুঃখিত। কিন্তু তাতে আমার কি উপকার হবে?
এই মুহূর্তটার জন্যেই যেন অপেক্ষা করছিল কিশোর। পকেট থেকে বের করল তিন গোয়েন্দার কার্ড। বাড়িয়ে দিল এলেনার দিকে। দরজায় দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা দেখতে পেয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে এল রবিন আর মুসা।
হেসে উঠল এলেনা। তিন গোয়েন্দা! প্রাইভেট ডিটেকটিভ! হাহ হাহ!
তিনজনের মুখের দিকে তাকাতে লাগল সে। অনেক ধন্যবাদ। গোয়েন্দার দরকার হলে প্রফেশনাল লোককেই ভাড়া করতে পারব আমি, নবিসকে নয়।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কিছুটা হতাশই হয়েছে এলেনার আচরণে। যদিও মানুষের এই আচরণ নতুন নয় তার কাছে। তবে একেবারে নিরাশ করেনি তাকে– মেয়েটা। কার্ডটা ফিরিয়ে দেয়নি কিংবা ফেলে দেয়নি। ল্যাম্প রাখা আছে যে টেবিলটায় তার ড্রয়ারে গুঁজে রেখে দিল।
বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। হেনরি বেসিনের গাড়িতে করে চলল। তার দোকানে গিয়ে তার নিজস্ব জিনিসপত্র নামাতে সাহায্য করবে। তারপর ট্রাকটা। নিয়ে চলে যাবে পিকো। ডেকোরেটরের টেবিল চেয়ার আর টেবিলক্লথ ফিরিয়ে দিয়ে আসবে। বেসিনের দোকান থেকে, তাদের সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরবে ছেলেরা।
ডিনারের পর মুসাদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে, সেটাতে যোগ দিতে হবে। তাকে। তার দাদার জন্মদিনের পার্টি। কিন্তু রবিনের তেমন কোন কাজ নেই। কিশোরের সঙ্গে ইয়ার্ডে যেতে অসুবিধে নেই তার।
বেসিনের ওখানে কাজ সেরে বাড়ি রওনা হল তিন গোয়েন্দা। কিছুদূর এসে মোড় নিয়ে একদিকে চলে গেল মুসা, কিশোর আর রবিন আগের পথেই রইল। চলে এল স্যালভিজ ইয়ার্ডে। ওয়ার্কশপে সাইকেল রেখে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে এসে ট্রেলারে ঢুকল, তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার। বিকেলের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্যে।
তো, কি ভাবছ? কথা শুরু করল রবিন। মিস্টার লিসটার কি সত্যিই পাগল?
খামখেয়ালি তো বটেই। এবং নিষ্ঠুর। একটা বিশেষ ভঙ্গিতে বলল কিশোর। যখন কোন রহস্যের সমাধান খোঁজে কিংবা প্রশ্নের জবাব বের করতে চায় তখন এভাবে কথা বলে সে। নইলে পার্টি থেকে ওরকম করে চলে গিয়ে মেয়েকে অপদস্ত করার কি মানে? পাগল না হলে করে কোন ভদ্রলোক?
একটা প্যাডে আনমনে আঁকতে শুরু করল গোয়েন্দাপ্রধান। পার্টির মেহমানরাও অদ্ভুত। কেমন যেন। শুধু একটা ব্যাপারেই ওদের মিল দেখতে পেলাম, লিসটারকে কেউ পছন্দ করে না। তাদের অনেকেই নিশ্চয় তার কর্মচারী। ওই যে উকিল আর অন্য লোকটার মাঝে বিশ্রী আলোচনা হল..
জঘন্য! মুখ বিকৃত করল রবিন। কোন ভদ্রলোক যে ওভাবে কথা বলতে পারে…তবে এলেনার কলেজের বন্ধুরা কিন্তু ভাল, অন্তত স্বাভাবিক বলা চলে। অবাক ব্যাপারই। ওরকম বদমেজাজী একটা মেয়ের সঙ্গে যে কারও বন্ধুত্ব হয়। বিশ্বাস করা কঠিন।
টেলিফোন বাজল।