কোথায় ছিলে? এলেনাকে জিজ্ঞেস করল নিক। সবাই তোমাকে খুঁজছে।
আব্বাকে খুঁজতে গিয়েছিলাম।
ও। কেন? এখনও রাগ পড়েনি? ভুলে যাও ওসব।
কাছেই দাঁড়িয়ে রইল কিশোর, কথা শোনার জন্যে।
কড়া চোখে নিকের দিকে তাকাল এলেনা। দেখ, তুমি পছন্দ কর আর না-ই কর, সে আমার বাবা। লিভিংরুমে এসে ঢুকল সে। চেঁচিয়ে বাদকদেরকে বলল বাজনা থামাতে।
একবার বললে শুনল না। ক্রমেই গলা চড়িয়ে মোট তিনবার বলতে হল। এলেনাকে। পুরোদমে গলা আর বাদ্যযন্ত্রের ওপর গায়ের ঝাল মেটাচ্ছিল যেন। বাদকের দল। অবশেষে শুনতে পেয়ে. থামল।
মেহমানদের দিকে ফিরল এলেনা। আমার আব্বা-আমার আব্বার শরীরটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন…এখন কোথায় আছে বলতে পারব না। কেউ দেখেছেন? সিঁড়ি দিয়ে নামতে?
গুঞ্জন উঠল। একে অন্যের দিকে তাকাতে শুরু করল মেহমানেরা। কয়েকজন শ্রাগ করল। কয়েকজনকে মুচকি হাসতে দেখল কিশোর, দৃষ্টিতে ব্যঙ্গ। তবে কথা। বলল না কেউই। ডেভিড লিসটারকে দেখেনি কেউ।
ড্রাইভওয়েতে ইঞ্জিনের শব্দ হল। সামনের দরজায় দেখা দিল দুজন পুলিশ। অফিসার। সরে তাদেরকে ঢোকার জায়গা করে দিল মুসা। এগিয়ে নিয়ে এল। এলেনা আর নিক।
আবার উত্তেজিত গুঞ্জন উঠল মেহমানদের মাঝে। মোটা বয়স্ক একজন লালমুখো মানুষ বেশ জোরেই বলল, বাহ, চমৎকার!
এই পিটার, চুপ, তাকে থামিয়ে দেয়ার জন্যে বলল তার পাশে দাঁড়ানো। মহিলা। কি বলবে বুঝতে পেরেছি।
কি বলব? পকেট থেকে চুরুট বের করল পিটার। বুড়ো জলদস্যুটা অবশেষে ধরা পড়তে যাচ্ছে একথা বলতে মানা করছ?
চুপ! সিগারেট খেতে হলে বাইরে গিয়ে খাও। যাও! হাতে হাতব্যাগ, তাই শুধু হাতটা নাড়তে পারল না, ব্যাগসহই নাড়ল। আরেকটু হলেই লোকটার মুখে বাড়ি লাগত।
ধূসর রঙের চুলওয়ালা একজন লোক মহিলার দিকে তাকিয়ে হাসল। ডেভিড লিসটার জলদস্যু ছিলেন, সত্যি?
এইই, ডোপ, বলল আরেকজন। রিমলেস চশমার পেছনে চকচক করছে তার চোখ, তুমি না তার উকিল? তোমার মুখে এসব মানায় না কিন্তু। বেশ মজাই পাচ্ছে যেন লোকটা।
তুমিও তো তার ম্যানেজার, খোঁচা দিয়ে বলল উকিল, ব্যাপারটা কি। এনথনি? হঠাৎ এত ভদ্র হয়ে গেলে কিভাবে? নাকি কিছু লুকানোর চেষ্টা করছ?
উকিলের কণ্ঠটা কেমন যেন ভোঁতা লাগল কিশোরের কাছে। অবাক হয়ে ভাবল, অনেক বেশি গিলে ফেলল না তো? মাতাল?
কি বলতে চাও? রেগে যাবে কিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না যেন এনথনি।
বলতে চাই, লিসটারের কিছু হয়ে গেলে তোমার তো আর কিছু হবে না। বরং তোমার তখন পোয়া বারো…
ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকাতে লাগল অন্যেরা। কয়েকজন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কান তবু চলেই গেল ওদের কথায়। রুমাল দিয়ে বার বার কপাল মুছতে লাগলেন নিকের মা মিসেস ভিশন। বললেন, নিক, ভীষণ গরমরে এখানে। আমি বাইরে যাচ্ছি।
নিক যেন তার কথা শুনতেই পেল না। বেসিন হাসল। হাসিটা কেমন যেন বাকা। ইতিমধ্যেই মেহমানরা তার বুফের বেশির ভাগটাই সাবার করেছে। কাজেই দরজায় এসে দেখার সুযোগ পেল তরুণ ক্যাটারার, কি নিয়ে এত উত্তেজনা।
সাউথ’স স্পেশালিটি স্টোরের ম্যানেজার ছিলে যখন, ডোপ বলছে। কন্ট্রাকটরদের সঙ্গে তোমার গোপন চুক্তি হত। ভাবছ ভুলে গেছি। পোমোনার ওই নতুন ব্রাঞ্চটা খোলার সময় তো রীতিমত তাদেরই একজন হয়ে গিয়েছিলে তুমি। অবশ্য বেশি টাকার প্রয়োজন হলে আর ওরকম সুযোগ পেলে কে না কাজে লাগায়। বল। কন্ট্রাকটররা তো মানুষকে টাকা দেয়ার জন্যে মুখিয়েই থাকে।
মিথ্যে কথা! প্রায় চিৎকার করে উঠল এথনি। নিজে যেমন অন্যকেও তেমনই ভাবে সবাই। এসব কাণ্ড নিশ্চয় তুমিই করতে, তাই না, ডোপ?
চুপ করে আছে ডোপ। কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসল এন্থনি। স্টক মার্কেটে দ্রুত বেশ কিছু কামিয়ে নিলে, সেটা নিশ্চয় সৎ উপায়ে নয়। ঠিক বলছি না? লিটারের সন্দেহ ছিল, মক্কেলের গচ্ছিত টাকা তাদেরকে না জানিয়ে বিনা অনুমতিতে নিজের ব্যবসায় খাঁটিয়েছ।
থাম! চেঁচিয়ে উঠল ডোপ। চুপ কর!
লিসটারের টাকাও নষ্ট করেছিলে নাকি? ধরা পড়ে গেছ? তার ওপর সে কারণেই রেগেছ… আচমকা থেমে গেল এনথনি। চারপাশে তাকিয়ে যেন এই প্রথম খেয়াল করল ঘরে আরও লোক রয়েছে, তাদের উত্তপ্ত বিতণ্ডা বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছে।
সিগার ধরিয়েছে যে লোকটা সে ঘড়ির দিকে তাকাল। আরে, এত্তো দেরি হয়ে। গেছে। জোরেই বলল কথাটা। স্পষ্টই বুঝিয়ে দিল, যথেষ্ট হয়েছে, এই বিচ্ছিরি পরিবেশে আর থাকতে চায় না। যাওয়া দরকার। পুলিশ কি বেশি দেরি করবে?
এটা সূচনা। বিরক্ত প্রায় সবাই হয়েছে। হাত মেলাতে শুরু করল বয়স্ক মেহমানেরা। গুডবাই জানিয়ে বিদায় নিতে লাগল। একসাথে লাঞ্চ খাওয়ার জন্যে। দিন ঠিক করছে দুজন লোক, শুনে ফেলল কিশোর। এলেনার অল্পবয়সী বন্ধুরাও লম্বা জানালা দিয়ে বাগানে বেরিয়ে গেল, সেখান থেকে হেঁটে বাড়ির বাইরে।
পার্টি শেষ। অধিকাংশ মেহমানই চলে গেছে। বেসিন আর তার সহকারীরা মিলে টেবিলগুলো পরিষ্কার করতে লাগল। টেবিল থেকে গোলাপী রঙের টেবিলক্লথগুলো নিয়ে বাগানে চলে গেল ধোয়ামোছার জন্যে যে লোকটাকে রাখা হয়েছে সে। সেখান থেকে ছোট একটা ঠেলাগাড়িতে তুলে নিয়ে গেল পেছনের হলঘরে। বারের দায়িত্বে নিয়োজিত লোকটা খালি বোতল ভরতে লাগল বাক্সে।