গোলমালটা কোনখানে হয়, সেটা আগে খুঁজে বের করতে চায় আব্বা, এলেনা বলল। যাতে খুব তাড়াতাড়ি সেটা মিটিয়ে ফেলা যায়। ঠোঁট কামড়াল। কই, এখানেও তো নেই!
চিলেকোঠা আছে? মুসা জিজ্ঞেস করল।
আছে। তাতেও বই, বাক্স আর স্যুভনির। অতীতের সাক্ষি। তবে ডেভিড লিসটার নেই।
ওপরতলায় খোঁজা শেষ। কিশোরের দিকে তাকাল এলেনা। বেশ, বল এবার, কোথায় আব্বা? খুব তো চালাকি জাহির করেছিলে। এখন বল, সে কোথায়?
অনেক সম্ভাবনাই আছে। তবে আপাতত সেসব বলছি না, কিশোর বললো। একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি। তিনি হেঁটে বেরিয়ে গেছেন সামনের দরজা দিয়ে। সিঁড়ি বেয়ে নেমে। মেহমানরা আলাপে ব্যস্ত, তাকে দেখতে পায়নি…
বাধা দিল এলেনা। আমার তা মনে হয় না। আমি সিঁড়ির দিকে মুখ করে ছিলাম। নামলে দেখতে পেতামই।
তাহলে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে? অনুমান করল হোয়েরটা। ওখান দিয়ে নেমে সেলারে চলে যেতে পারেন। পেছনের আঙিনায় বেরোতে পারেন। কেউ দেখতে পাবে না।
বালিশ নিয়ে? কিশোরের প্রশ্ন।
বালিশের কথা বার বার কেন বলছো? জিজ্ঞেস করল এলেনা।
কারণ, আমার মনে হচ্ছে ওটা একটা বড় সূত্র।
পেছনের সিঁড়ির কাছে চলে এল ওরা। যে ভবঘুরে লোকটাকে ধোয়ামোছায় সাহায্য করার জন্যে নিয়ে আসা হয়েছিল সে সিংকে ব্যস্ত।
এই, আমার আব্বাকে এখান দিয়ে যেতে দেখেছ?
এলেনার দিকে ঘুরে তাকাল, লোকটা। বয়েস পঞ্চাশ, এমনকি ষাটও হতে পারে। বয়েসের তুলনায় স্বাস্থ্য বেশ ভাল, শক্তসমর্থ, পেশিবহুল। ডান বাহুতে একটা ড্রাগন আঁকা উল্কি দিয়ে। কিশোরের মনে হল মুখটা বেশি গোমড়া করে রেখেছে লোকটা। শুধু মাথা নেড়ে এলেনার কথার জবাব দিয়ে আবার তার কাজে মন দিল।
ডাইনিং রুম থেকে এল হেনরি বেসিন। কিছু হয়েছে?
আব্বাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
সেলারে খুজল তিন গোয়েন্দা। আছে ভাপসা গন্ধ, পুরনো ট্রাঙ্ক আর মাকড়সার জাল। বেরিয়ে এসে বাড়ির বাইরেটা ঘুরে দেখতে লাগল। বড় বড় ঘাস। ঝোপঝাড়। অযত্ন আর অবহেলার ছাপ সর্বত্র। বাগানে টেবিল পেতে দেয়া। হয়েছে। তাতে বসে খাচ্ছে মেহমানরা। কিন্তু লিসটারকে দেখা গেল না ওদের। মাঝে।
অবশেষে সব জায়গায় খোঁজা হয়ে গেল, আর কোন জায়গা বাকি রইল না।
হু, মাথা ঝাঁকিয়ে বলল এলেনা। বেরিয়েই চলে গেছে। আমাকে ফেলে, রেখে। আমার বিয়েতে মত ছিল না, তাই ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়েছে। যাতে আমি কিছু করতে না পারি। ভেবেছে, এরকম করলে বেকায়দায় পড়ে যাব আমি। এনগেজমেন্ট আর করতে পারব না আজ…
তা না-ও হতে পারে, কিশোর বলল। বালিশের কথা ভুলে যাবেন না। চলে। যাওয়ার ইচ্ছে হলে একজন বয়স্ক লোক বালিশ সঙ্গে নিয়ে যাবেন কেন? সেই গল্পটার কথা মনে হচ্ছে, লিনুস আর কম্বলের কথা। আরেকটা ব্যাপার ভুলে যাচ্ছেন। ধুপ করে একজন মানুষকে পড়ে যেতে শুনেছে মুসা। আর ফায়ারপ্লেসে। আগুন জ্বলারই বা অর্থ কী?
কি অর্থ? ভাবতে লাগল, এলেনা। আর ওই শব্দ…ওটা হতে পারে, তার পরিকল্পনারই একটা অংশ। এরকম সে করতেই পারে। তার কাছে ওটা খেলা। আমাকে রাগানোর চেষ্টা। যাতে মাথা গরম করে উল্টোপাল্টা কিছু করে বসি, আর সে সুযোগ পায়।
মাথা নাড়ল কিশোর। তার চেয়ে আরও সহজ যুক্তিতে আসুন না। কারও হাত থেকে বাঁচানর জন্যে কোন একটা জিনিস ফায়ারপ্লেসে পুড়িয়েছেন আপনার আব্ব। আর সেই লোকটাই তাকে ধরে নিয়ে গেছে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে, যাতে চিৎকার করতে না পারেন।
স্থির দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল এলেনা। রক্ত সরে যাচ্ছে মুখ থেকে। তুমি বলছ কিডন্যাপ করা হয়েছে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
পুরো এক মিনিট চুপ করে রইল এলেনা। ভাবল। তারপর বলল, পুলিশকে খবর দেয়া দরকার!
.
০৪.
আপনার বাবা হারিয়ে গেছেন? সত্যি? বড় বড় হয়ে গেল লালচুল মেয়েটার চোখ। মুসাকে গাছ বেয়ে নামতে দেখে মজা পেয়েছিল। এখন এলেনার কথা শুনে অবাক হল।
নিচের হলঘরে ঢুকেছে এলেনা। টেলিফোন রিসিভারে হাত। রকি বীচ পুলিশকে ফোন করেছে।
এটা একটা খেলা, তাই না? লালচুল মেয়েটা বলল আবার। অনেক পার্টিতেই, এরকম খেলা হয়। কেউ একজন খুন হয়ে যাওয়ার ভান করে। অন্যদেরকে তখন বলতে হয় কে খুন করেছে।
আহ, চুপ কর তো, নিনা, বিরক্ত হয়ে বলল এলেনা। এটা খেলা নয়।, কিন্তু মেয়েটা শুনল না। আমাদের বলতে হবে আপনার বাবা কোথায় লুকিয়েছেন, তাই না? কিংবা কে তাকে লুকাতে সাহায্য করেছে। তাই তো? বলতে হবে মোটিভটা কি।
নিনা, তোমার মাথায় গোবর আছে!
মসৃণ চেহারার যে যুবক যাকে কিছুক্ষণ আগে এলেনার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল সে বেরিয়ে এল লিভিং রুম থেকে। অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। কিশোর জেনেছে ওই যুবকই এলেনার হবু বর। যাকে মেয়েটা বিয়ে করতে চায়। নাম নিকিনজা ভিশন। একই কলেজে পড়ে দুজনে। ধূসর সিল্ক পরা মহিলা তার মা। বোস্টন থেকে ছেলের সঙ্গে এসেছেন পার্টিতে যোগ দিয়ে এনগেজমেন্টের ঘোষণা শোনার জন্যে।
বিকেলে কিশোর দেখছে, জানালার চৌকাঠে আঙুল ছুঁইয়ে ধুলো পরীক্ষা করছেন মহিলা। ক্যালিফোর্নিয়ায় এসে খুশি হয়েছেন কিনা কে জানে। লিসটারের মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তার ছেলে, এতেও কতটা খুশি হয়েছেন বোঝার উপায় নেই। কিশোর অন্তত বোঝেনি এখনও।